Vikas Khanna

১৩ পর্যন্ত দৌড়তে পারতেন না, এককালে আশ্রয়হীন শেফের রান্নায় মোহিত মোদী থেকে ওবামা

ছোটবেলায় হাঁটাচলা বা দৌড়নোর বাধা কাটিয়ে ফেলেছেন বিকাশ খন্না। এককালে আশ্রয়হীন হয়ে নিউ ইয়র্কে রাত কাটালেও আজ সে শহরেই আস্তানা রয়েছে তাঁর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ১৭:২৮
Share:
০১ ২১

জন্ম থেকেই হাঁটাচলায় অসুবিধা ছিল। ১৩ বছর পর্যন্ত দৌড়তেও পারতেন না। ছোটবেলায় তা নিয়ে ঠাট্টার পাত্র হতে হয়েছিল। সে কষ্ট ঘোচাতে মুখ লুকিয়েছিলেন রান্নাঘরে। যে ঘর থেকে অজান্তেই সাফল্যের দৌড় শুরুর বীজ বুনেছিলেন শেফ বিকাশ খন্না।

০২ ২১

বিশ্বে মোটে সাত ভারতীয় শেফের ঝুলিতে রয়েছে ‘মিশেলিন স্টার’-এর তকমা। তাঁদের মধ্যে এক জন বিকাশ। রসনাজগতের এই সম্মান তাঁদের ঝুলিতেই থাকে, মিশেলিন সংস্থার বিচারে যাঁরা নিজেদের সেরা প্রমাণ করেছেন। তাঁর রান্নায় মজেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

Advertisement
০৩ ২১

ছোটবেলায় হাঁটাচলা বা দৌড়নোর বাধা কাটিয়ে ফেলেছেন বিকাশ। এককালে আশ্রয়হীন হয়ে নিউ ইয়র্কে রাত কাটালেও এখন সে শহরেই আস্তানা রয়েছে তাঁর। বিশ্বের সেরা ১০ শেফের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

০৪ ২১

পঞ্জাবের অমৃতসর থেকে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ভারতীয় খাবারের রেস্তরাঁ— বিকাশের সাফল্যের কাহিনি নিয়ে সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা যেতে পারে।

০৫ ২১

সত্তরের দশকে অমৃতসরে ভিডিয়ো ক্যাসেট ভাড়া দেওয়ার দোকান ছিল বিকাশের বাবা দেবীন্দর খন্নার। স্ত্রী বিন্দু সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর তাঁদের সংসারে এসেছিলেন বিকাশ।

০৬ ২১

জন্মের সময় থেকেই তাঁর পায়ে ‘ক্লাবফুট’-এর সমস্যা ছিল। যে সমস্যায় ঠিকমতো মাটিতে পা ফেলতে পারতেন না বিকাশ। তাঁকে বিশেষ জুতো পরতে হত।

০৭ ২১

হাঁটাচলায় সমস্যা, দৌড়তে অপারগ বিকাশকে নিয়ে তামাশা করত বন্ধুরাও। স্কুলে গিয়েও স্বস্তি নেই। সহপাঠীদের কটূক্তি শুনতে হত। মনের জ্বালা মেটাতে ছোট থেকেই ঠাকুরমার সঙ্গে রান্নাঘরে কাটাতে শুরু করেছিলেন বিকাশ।

০৮ ২১

ঠাকুরমার কাছেই রসনাতৃপ্তির খুঁটিনাটিতে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। কিশোর বয়স থেকে রান্না করার শখ চেপে বসেছিল বিকাশের। নাতিকে উৎসাহ দিতে পিছপা হননি বিকাশের ‘বিজি’ (ঠাকুরমা)।

০৯ ২১

ছেলের রান্নাবান্নায় বাধা দেননি বিন্দুও। অমৃতসরের সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই ১৭ বছর বয়সে নিজের প্রথম কেটারিংয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন বিকাশ। মায়ের সঙ্গে মিলে শহরের নানা স্কুলের সামনে নিজের হাতে তৈরি ছোলে-ভটুরে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি।

১০ ২১

অমৃতসরের রাস্তায় হাতে তৈরি সোয়েটারও বিক্রি করেছেন বিকাশ। সে সবই কিশোর বয়সে। তবে রান্নার শখ যেন চেপে বসেছিল তাঁর।

১১ ২১

কম বয়সে আরও একটি ঘটনায় পেশাদার শেফ হতে চেয়েছিলেন বিকাশ। এক বার দিল্লির এক বিখ্যাত হোটেলে তাঁকে নৈশভোজে নিয়ে গিয়েছিলেন কাকা। সে সময় পেশাদার রাঁধুনিদের হাতের গুণের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর।

১২ ২১

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে হোটেল ম্যানেজ়মেন্ট পড়ার জন্য বেঙ্গালুরুর পৌঁছেছিলেন বিকাশ। তবে ইংরেজিতে তেমন সড়গড় না হওয়ায় সে স্বপ্নও প্রায় চুরমার হতে বসেছিল। তবে সে বাধা কাটিয়ে ১৯৯১ সালে হোটেল ম্যানেজ়মেন্টে স্নাতকের ডিগ্রি লাভ করেন বিকাশ।

১৩ ২১

স্নাতকের পড়াশোনা সেরে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কালিনারি ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা’য় হাতেকলমে শিক্ষার পর যেন নতুন জগৎ খুলে গিয়েছিল তাঁর সামনে।

১৪ ২১

বিদেশে শিক্ষার আগে অমৃতসর এবং মুম্বইয়ের হোটেলে কাজ নিয়েছিলেন বিকাশ। নব্বইয়ের দশকে মাসে ৪৫০ টাকার বেতনে কাজ করতেন তিনি। আমেরিকার একটি পত্রিকার বিচারে ২০১৯ সালে সেই বিকাশের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮০ থেকে ১২০ কোটি টাকা।

১৫ ২১

নিউ ইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে বিশ্বের নামজাদা শেফ— বিকাশের যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। নিউ ইয়র্কের রাস্তায় আশ্রয়হীন হয়েও রাত কাটাতে হয়েছে তাঁকে।

১৬ ২১

২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের অধুনালুপ্ত জোড়া টাওয়ার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিজের রেস্তরাঁ খোলার চেষ্টা করেছিলেন বিকাশ। তবে জঙ্গিহানায় জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের পর সে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

১৭ ২১

ওই ঘটনার বছর তিনেক পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ছত্রছায়ার ছিলেন বিকাশ। প্রতিভাবান শেফদের গড়েপিটে তোলাই যাদের কাজ।

১৮ ২১

২০০৬ সালে একটি ছোট রেস্তরাঁ খোলেন বিকাশ। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশ্বখ্যাত শেফ গর্ডন র‌্যামসের টেলিভিশন শো ‘কিচেন নাইটমেয়ার্স’-এ ডাক পান তিনি। খ্যাতির আলোর মধ্যেই অন্ধকার দিন দেখেছেন বিকাশ।

১৯ ২১

২০০৮ সালে আর্থিক মন্দার সময় তাঁকে প্যারিসের একটি রেস্তরাঁয় বাসন ধোওয়ার কাজও করতে হয়েছে। আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বিকাশ। ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনে একটি রেস্তরাঁ খোলেন। এর পর ভাগ্যবদলে দেরি হয়নি। পরের বছর ওই রেস্তরাঁ এবং তার শেফ বিকাশ প্রথম ‘মিশেলিন স্টার’-এর তকমা পান। পরের ছ’বছরেও একই তকমা জুটেছিল তাঁর।

২০ ২১

শেফ হিসাবেই নিজের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি বিকাশ। ২০১১ সাল থেকে সাতটি মরসুম জুড়ে ‘মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া’য় সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। র‌্যামসের সঙ্গে ‘হেলস কিচেন’ বা মার্থা স্টুয়ার্টের শোয়েও মুখ দেখিয়েছেন।

২১ ২১

সিনেমার জগতেও পা রেখেছেন বিকাশ। বারাণসী এবং বৃন্দাবনের বিধবাদের কাহিনি নিয়ে তাঁর পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসা কুড়িয়েছে ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তৈরি করেছেন একাধিক তথ্যচিত্রও। আবার সুনামি বিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ কিংবা পঞ্জাবের গুরুদ্বারে বিনা পয়সায় লঙ্গরেও সেবা করেছেন। নিউ ইয়র্কে আস্তানা গড়লেও ঘরের কথা ভোলেননি বিকাশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement