লকডাউনের জেরে দীর্ঘ দিন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি। অঙ্কের হিসাবে প্রায় দু’বছর। কিন্তু সেই দু’বছরের বিচ্ছেদকে এক যুগ বলে মনে হয়েছিল ভিয়েতনামি যুবকের। না হলে এতটা ঝুঁকি নিয়ে কেউ স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বার হন!
৩৭ বছরের হো হোয়াং হাং আদতে ভিয়েতনামের বাসিন্দা। মুম্বইয়ে স্ত্রীকে দেখতে তিনি প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছেন।
যদিও হোয়ের মনোবাসনা পূরণ হয়নি। ১৬ মার্চ তাঁকে তাইল্যান্ডের জলপথেই আটকে দিয়েছেন সে দেশের নৌরক্ষী বাহিনী।
তাইল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে সিমিলান দ্বীপের জলপথে হোকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। তাঁর সঙ্গের মালপত্র দেখে অবশ্য চোখ কপালে ওঠার জোগাড় নৌরক্ষী বাহিনীর।
দু’হাজার কিলোমিটারের যাত্রাপথ পাড়ি দেওয়ার জন্য র্যাফটিং করার একটি ভেলায় নিজেকে ভাসিয়েছিলেন হো। সঙ্গে ছিল না কোনও মানচিত্র বা জিপিএস। এমনকি, জলপথে দিকনির্ধারক কম্পাসও সঙ্গে নেননি তিনি।
একটি স্যুটকেসে কয়েকটি জিনিসপত্র ভরে সুদূর মুম্বই পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন হো। কী ছিল তাতে? সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, হোয়ের কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া স্যুটকেসে তাঁর জামাকাপড় ছিল না। তার বদলে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া একটি জলের বোতল এবং ১০ প্যাকেট ইনস্ট্যান্ট নুডল্স।
আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, সমুদ্রপথে আসার সময় ওই ভেলায় ১৮ রাত কাটিয়েছেন হো। সংবাদমাধ্যমে হোয়ের এ হেন কীর্তির কথা জানার পর অনেকেই একে বলিউডি সিনেমার গল্পের তকমা দিয়েছেন। তবে এই গল্প সত্যি!
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার আগেই সেই জলপথ পার করে ভারতে ঢোকার পরিকল্পনা ছিল হোয়ের।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, মুম্বইয়ে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর থেকে বিমানে করে তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে যান তিনি। তবে ব্যাঙ্ককে পৌঁছে জানতে পারেন, বিনা ভিসায় ভারতে যেতে পারবেন না।
ভিসা নেই তো কী হয়েছে, স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অন্য উপায় বার করে ফেলেন হো। ব্যাঙ্কক থেকে বাসে চড়ে ফুকেট চলে যান তিনি। সেখানে একটি ভেলা কিনে ফেলেন। এ বার সমুদ্রপথেই রওনা দেন তিনি।
৫ মার্চ ওই ভেলায় চেপে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন হো। জলপথে সেখান থেকে ভারতের দূরত্ব প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার।
হোকে ফেরত পাঠানোর আগে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাই আধিকারিকেরা। সে কারণে তাঁকে ফুকেটে নিয়ে যাওয়া হবে।
তাইল্যান্ডের মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট কমান্ড সেন্টারের আধিকারিক পিচেট সংট্যান সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘হোয়ের বিষয়ে আমরা ভিয়েতনাম এবং ভারত, দু’দেশের দূতাবাসেই যোগাযোগ করেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।’’ ফলে আপাতত স্ত্রীকে চাক্ষুষ করার জন্য আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে হোকে!