মঙ্গলের পর যমজ গ্রহে অভিযানের তোড়জোড় শুরু করল ইসরো। মঙ্গলযান এবং চন্দ্রযানের সাফল্যের পর পৃথিবীর আর এক পড়শি শুক্রে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল ভারত। মঙ্গলের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকটতম এই প্রতিবেশীর রহস্য উন্মোচনে মহাকাশ যান পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে জোরকদমে এগোচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র তরফে আভাস দেওয়া হয়েছিল গত মার্চ মাসেই। বুধবার সেই প্রস্তাবে শিলমোহর দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুক্রে মহাকাশযান পাঠানো এবং মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৮ সালেই শুক্রে মহাকাশযান পাঠাবে ভারত। প্রথমে স্থির হয়েছিল, ২০২৩ সালের মধ্যেই পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহে পাঠানো হবে মহাকাশযান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান অভিযান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে আরও কয়েক বছর।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০৪০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার জন্য মোট ৩১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা মহাকাশ অভিযানের জন্য অনুমোদন করেছে। যা চন্দ্রযান-৪, শুক্রযান ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র তৈরির জন্য ব্যয় করা হবে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
‘ভেনাস অরবিটার’ বা ‘শুক্রযান’ নামের মহাকাশযানটি শুক্রের কক্ষপথে পরিক্রমা করবে। শুক্রের কাছে পৌঁছে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে এই গ্রহকে প্রদক্ষিণ করবে ভারতীয় মহাকাশযান।
ইসরোর এই প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে ইসরোর শুক্রযানের জন্য খরচ পড়বে ৮২৪ কোটি টাকা। এমনটাই বলছে ইসরোর সূত্র।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছিল মোট ১৭৫ কেজি ওজনের যন্ত্রাংশ পাঠাবে ভারত। যদিও পরে সেই ওজন কমিয়ে ১০০ কেজি করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
শুক্রের কাছে পৌঁছে কী ধরনের নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো যেতে পারে, তা নিয়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং গবেষকদের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল ইসরোর তরফে।
শুক্র থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার। দুই গ্রহ কক্ষপথের দুই ধারে পৌঁছে গেলে সেই দূরত্ব বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি কিলোমিটারে।
সূর্য ও চাঁদের পরে আকাশে যে বস্তুটি স্পষ্ট দেখা যায়, সেটাই শুক্র গ্রহ। আকার-আকৃতিতে একই রকম হওয়ার কারণে শুক্রকে পৃথিবীর ‘যমজ গ্রহ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দু’টি গ্রহের ভরও প্রায় একই। শুক্র গ্রহের ব্যাস ১২ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। অন্য দিকে, পৃথিবীর ব্যাস ১২ হাজার ৭৫৬ কিলোমিটার।
গ্রহটি যে হেতু সূর্যের অনেক কাছে, তাই তাপমাত্রাও অনেক বেশি। প্রায় ৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় কাচও গলে যায়। পাথুরে গ্রহটির কেন্দ্রে রয়েছে লোহা এবং খনিজ পদার্থ। তবে গঠনের দিক থেকে মিল থাকলেও এর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে আলাদা।
গ্রহটির গঠন অনেকটা পৃথিবীর মতো হলেও রুক্ষ পরিবেশ এবং ঘন বায়ুমণ্ডলযুক্ত শুক্র মানুষের বাসযোগ্য নয়।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ২১ শতাংশ অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। তবে শুক্রের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। শুক্রের একটি ঘন এবং ক্ষতিকারক বায়ুমণ্ডল রয়েছে, যা ৯৬.৫ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে ঘেরা।
প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং স্বল্প মাত্রার অক্সিজেন ছাড়াও নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য কয়েকটি গ্যাস অল্প মাত্রায় শুক্রের বায়ুমণ্ডলে রয়েছে।
কোটি কোটি বছর আগে শুক্র ও পৃথিবীর অবস্থা প্রায় একই রকম ছিল। ক্রমশ পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ হয়। কিন্তু শুক্রে হয়নি।
শুক্রের ভূমিতল, আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডলের প্রক্রিয়া এবং গ্রহটির সূর্যের প্রভাব সম্পর্কে আরও ভাল ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য শুক্র গ্রহের কক্ষপথে ‘ভেনাস অরবিটার’ বা ‘শুক্রযান’ প্রদক্ষিণ করাবে ইসরো।
ইসরো ২০১৮ সালে শুক্র অভিযানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। স্থির হয়েছিল, ২০২৩ সালের মধ্যেই পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহে পাঠানো হবে মহাকাশযান।
‘ভেনাস অরবিটার’ কর্মসূচি নতুন করে মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পেয়েছে। ইসরো প্রধান এস সোমনাথ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ইসরোর প্রস্তাব মেনে শুক্রে মহাকাশযান পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সফল ভাবে অবতরণ করার পর পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রযুক্তি বিকাশ ও প্রদর্শনের জন্য এবং চাঁদের নমুনা সংগ্রহ এবং পৃথিবীতে বিশ্লেষণ করার জন্য চন্দ্রযান-৪ মিশনকেও অনুমোদন দিয়েছে সরকার।