রাজধানী এবং দুরন্তের মতো প্রথম সারির ট্রেনের বিকল্প হিসাবে এক রাতের ট্রেন সফরের জন্য তৈরি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার সংস্করণ। রাতে ট্রেনে চাপলে পরের দিন সকালে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে বহুপ্রতীক্ষিত বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনটি।
১ সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুতে ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডের কারখানায় বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনের সেই প্রোটোটাইপ বা নমুনা রেকটির উদ্বোধন করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেড় থেকে দু’মাস পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য চালানো হবে বন্দে ভারত স্লিপার কোচ। আগামী তিন মাসের মধ্যে বন্দে ভারতের ১৬ কামরার বাতানুকূল স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রেনটি যাত্রী পরিষেবার জন্য তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৬০ কিমির গতিবেগে ৮০০ কিলোমিটার থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে চালানো হবে বন্দে ভারতের স্লিপার সংস্করণটি।
যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে একাধিক সুবিধা থাকছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার ক্লাসে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি সেমি হাই স্পিড বন্দে ভারত ট্রেনটির ভাড়া মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই রাখা হবে বলে রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর।
গত বছরের অক্টোবরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব তাঁর সমাজমাধ্যমে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার সংস্করণের কিছু ছবি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। সেই সময়ই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার সংস্করণ আগামী অগস্টের মধ্যেই চলে আসবে।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রেলমন্ত্রী জানান, অন্দরসজ্জা, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং ট্রেন চালানোর প্রযুক্তির দিকে যেমন নজর দেওয়া হয়েছে, তেমনই কোচের ভিতরের সুরক্ষা নিয়েও চিন্তাভাবনা করে বার্থগুলিকে হালকা অথচ মজবুত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও আধুনিক স্বয়ংক্রিয় দরজা, রিডিং লাইট, একাধিক ইউএসবি চার্জিং পয়েন্ট, বাতানুকূল ব্যবস্থা, উন্নত শৌচাগার-সহ একাধিক সুবিধা এই ট্রেনে থাকবে।
ট্রেনটিতে ১৬টি কোচ থাকবে, যার মধ্যে ১১টি এসি থ্রি-টায়ার, চারটি এসি টু-টায়ার এবং একটি এসি ফার্স্টক্লাস। ১১টি এসি থ্রি-টায়ার কোচে মোট বার্থের সংখ্যা হবে ৬১১টি। ৪টি এসি টু-টায়ার কোচ মিলিয়ে ১৮৮টি এবং এসি প্রথম শ্রেণির কোচে ২৪টি বার্থ থাকবে।
জনসাধারণের জন্য ঘোষণার ব্যবস্থা ছাড়াও ভিজ়্যুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম, ডিসপ্লে প্যানেল এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকবে ট্রেনটির নয়া সংস্করণে।
জনসাধারণের জন্য ঘোষণার ব্যবস্থা ছাড়াও ভিজ়্যুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম, ডিসপ্লে প্যানেল এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকবে ট্রেনটির নয়া সংস্করণে।
বন্দে ভারতের স্লিপারের প্রথম শ্রেণির কোচে যাত্রীদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য গরম জলও মিলবে। বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য থাকবে আলাদা উন্নতমানের শৌচাগার।
নতুন ট্রেনে বার্থে ওঠার ক্ষেত্রে বয়স্ক যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকেও বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কামরার ভিতরে বিভিন্ন উপকরণ থেকে যাত্রীদের যাতে আঘাত না লাগে, সে দিকেও বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে।
বার্থের সুরক্ষা মজবুত করতে শিকলের বদলে স্টিলের মোটা পাত ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এই ট্রেনে ‘কবচ সিস্টেম’ ব্যবহার করা হবে।
এই ট্রেনে থাকছে উন্নতমানের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। প্রতিটি কামরায় থাকবে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র।
মাঝারি দূরত্বে যাতায়াতের জন্য বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করেছিল রেল। এখন দেশ জুড়ে চলছে ৪১টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
সূত্রের খবর, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দে ভারতের ৮০০টি স্লিপার এক্সপ্রেস তৈরি করতে চায় রেল।