ভিড়ের মধ্যে আতিপাতি করে প্রেমিকাকে খুঁজছেন নায়ক। সাদা ঘোড়ায় চড়ে ঢুকেও পড়েছেন বিমানবন্দরের অন্দরে। তাঁর কাণ্ডকারখানা দেখে আশপাশের যাত্রীরা তো হতবাক। অথবা, ট্রেনের পাদানিতে হাত বাড়িয়ে ঝুলছেন নায়ক। সে হাত ধরতে ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পইপই করে ছুটছেন নায়িকা। বলিউডের পর্দায় এমন নাটকীয় দৃশ্যের অভাব নেই। এমন প্রেম বাস্তবে হয় নাকি! ঠোঁট উল্টে বলেছেন অনেকে। কেউ আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, ‘‘আহা! এমনটা বাস্তবে হয় না কেন?’’
বাস্তবে এমন নাটকীয় প্রেমকাহিনির কথা কম শোনা গেলেও বলিউডি ছবিতে রোম্যান্সের অভাব নেই। তাতে দেখনদারিও কম নয়। তবে অতিনাটকীয়তার মিশেল থাকলেও বেশ কয়েকটি জুটির রোম্যান্স অনেকেরই মনে গেঁথে থেকেছে। কোন ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছিল সেগুলি?
বলিউডি প্রেম নিয়ে কথা হবে, অথচ রাজ-সিমরনের প্রসঙ্গ উঠবে না? তা কি কখনও হয়! সেই কবে তাঁদের দেখা গিয়েছিল পর্দায়। ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ মুক্তির পর প্রায় ২৭ বছর গড়িয়ে গিয়েছে। অথচ আজও নাকি অমলিন সে ছবির রাজ-সিমরন জুটির প্রেম।
নতুন প্রজন্মের কাছে সংক্ষেপে ‘ডিডিএলজে’। তবে ছবির নামের মতো রাজ-সিমরনকে ছেঁটে ফেলতে পারেননি বহু দর্শক। তাঁদের কাছে আজও বলিউডি প্রেমের শেষ কথা— রাজ-সিমরন থুড়ি শাহরুখ খান এবং কাজলের জুটি। ‘ডিডিএলজে’-র শেষ দৃশ্য কখনও ভোলা যায়! সিমরনের বিয়ের ঠিক আগে তাঁর বাড়িতে হাজির রাজ। খুনসুটির মাঝেই কখন যে প্রেম গাঢ় হয়েছে, তা বুঝতে পেরেছেন। তবে প্রেমিকার বিয়ে তো স্থির। অবশেষে রাজের বিদায়ের পালা। তবে সিমরনের থেকে দূরে গিয়েও সরে যেতে পারলেন না। বিয়ে ফেলে স্টেশনে ছুটে গিয়েছেন সিমরনও। শেষে চলন্ত ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো রাজের বাড়ানো হাতে নিজের হাত এগিয়ে দিয়েছেন।
‘তামাশা’য় আবার প্রেমের উপলব্ধি অন্য ভাবে এসেছে। একে অপরকে সহ্যই করতে পারেন না তারা এবং বেদ। তবে যতই ঝগড়াঝাঁটি করুন না কেন, পরস্পরের কাছে বার বার ফিরে আসেন।
২০১৫ সালে মুক্তির পর বহু দর্শক বলেছেন, নিজেদের কলেজ জীবনের সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে তারা এবং বেদের রোম্যান্স। ‘আগর তুম সাথ হো’ গানটির দৃশ্যায়নের সময় যেন যাবতীয় আবেগ ঢেলে দিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন এবং রণবীর কপূর। বাস্তবেও যাঁদের প্রেমে এক সময় মশগুল ছিল বলিউড।
‘নমস্তে লন্ডন’ ছবিতে ভারত এবং ইন্ডিয়ার দুই বাসিন্দার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন পরিচালক বিপুল শাহ। দুই জগতের বাসিন্দা হলেও যশমীত এবং অর্জুনের মধ্যে কি প্রেম সম্ভব? প্রশ্ন তুলেছিলেন বিপুল। পর্দায় সে জবাব দিয়েছেন ক্যাটরিনা কইফ এবং অক্ষয় কুমার।
২০০৭ সালের এ ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, প্রেমিককে ছেড়ে অর্জুনের সঙ্গে জীবন কাটানোই বেছে নিয়েছেন যশমীত। নিজের সঙ্গে বিস্তর অমিল। তা-ও ভরসা রেখেছেন অর্জুনের উপর। দর্শকেরা বলেছেন, এ সব বলিউডে হয় বটে। বাস্তবে দেখা যায় না কেন?
‘জানে তু... ইয়া জানে না’-র শেষ দৃশ্যটা মনে পড়ে? অদিতিকে ‘প্রোপজ’ করতে ঘোড়ায় চড়ে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছেন জয়। তার পর সব বাধা ভেঙে অদিতির কাছে এগিয়ে গিয়েছেন। অনেকের মতে, বলিউডি ছবির মধ্যে সেটিই সবচেয়ে রোম্যান্টিক দৃশ্য। এ নিয়ে জোর তর্ক চলতে পারে। তবে পর্দায় যে ফুরফুরে প্রেমের আভাস দিয়েছিলেন জয়-অদিতি, তা যে বেশ জমাটি হয়েছিল।
২০০৮ সালে কলেজপড়ুয়াদের প্রেমের সংজ্ঞা পড়ে শুনিয়েছিলেন ‘জানে তু... ’-র পরিচালক আব্বাস টায়ারওয়ালা। বলিউডে এমন ভারহীন প্রেম আগে নাকি দেখা যায়নি। গাছের ডাল ধরে নেচেগেয়ে অনুভূতির প্রকাশ নয়। বরং ছোট ছোট অভিব্যক্তি দিয়ে আধুনিক প্রজন্মের সম্পর্ককে পর্দায় টেনে এনেছেন ইমরান খান এবং জেনেলিয়া ডি’সুজা।
পুরনো বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছেন। হঠাৎ নজরে পড়ল আপনার প্রাক্তনও সেখানে হাজির। কী করবেন? এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পড়ে যান। কবীর ওরফে বানি এবং নয়নার ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছিল। তার পর... । ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-তে পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের মুন্সিয়ানায় নিজেদের ওই দুই চরিত্রে ঢেলে দিয়েছেন রণবীর কপূর এবং দীপিকা পাড়ুকোন।
একজনের সঙ্গে ঘর বেঁধে থিতু হওয়া নয়। বরং একাধিক বন্ধনহীন সম্পর্কের মধ্যে থেকে জীবন উপভোগ করতে চেয়েছিল বানি। তবে সে আর হল কই! আপাত রক্ষণশীল নয়নাকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলল বানি। পর্দার প্রেম তো পরাবাস্তবই হয়, তা না!