ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে টাকা জোগান আমেরিকার শিল্পপতি! উদ্দেশ্য, চিনের হয়ে প্রচার। এমনই অভিযোগ তুলল আমেরিকার সংবাদ সংস্থা নিউ ইয়র্ক টাইমস। এই ধরনের অভিযোগ ওই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে। তুলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। যদিও অভিযোগ মানেনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
কাঠগড়ায় ভারতীয় সংবাদ পোর্টাল ‘নিউজ়ক্লিক’। অভিযোগ, তাদের টাকা জোগায় আমেরিকার নেভিল রয় সিংহমের সংস্থা। সিংহমের উদ্দেশ্য, ভারতে চিনের হয়ে প্রচার। অভিযোগ, সে কারণেই তিনি ব্যবহার করেন এই সংবাদমাধ্যমকে।
২০২১ সালে এই একই অভিযোগ তুলেছিল ইডি। সে সময় ওই সংবাদ দফতরের তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অভিযোগ ছিল, বিদেশ থেকে বেআইনি ভাবে সাহায্য পায় তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস সেই তল্লাশি অভিযানের কথা উল্লেখ করেছে। জানিয়েছে, ‘‘সিংহমের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন সংবাদমাধ্যমের দফতরে তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। অভিযোগ ছিল, চিনের সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। যদিও তার প্রমাণ মেলেনি। চিন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে এই সংবাদমাধ্যম।’’
এই অভিযোগ মানেননি ‘নিউজ়ক্লিক’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর পুরকায়স্থ। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এ সব নতুন অভিযোগ নয়। অতীতেও উঠেছে। যথাযোগ্য জায়গায় (আদালতে) এর জবাব দেব। বিষয়টি বিচারাধীন।’’
২০২১ সালে ইডি জানিয়েছিল, প্রায় ৭৭ কোটি টাকা বিদেশি সাহায্য পেয়েছিল এই সংবাদমাধ্যম। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই টাকা পেয়েছে তারা।
পোর্টাল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এই বিদেশি সাহায্য এসেছিল বলে জানিয়েছে ইডি। এলএলসি, ডেলাওয়্যার, জাস্টিস অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড ইনকের মতো বেশ কিছু সংস্থার মাধ্যমে এসেছিল অনুদান।
ইডি জানিয়েছে, এই সব সংস্থাই আদতে সিংহমের সঙ্গে জড়িত। ইডি তল্লাশির পর জানিয়েছিল, আমেরিকার শিল্পপতি সিংহমে সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ সব প্রকল্প চালু করেছিলেন ‘নিউজ়ক্লিক’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর।
এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে পিপিকে নিউজ়ক্লিক স্টুডিয়ো প্রাইভেট লিমিটেডকে ৯.৫৯ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল আমেরিকার সংস্থা ওয়ার্ল্ডওয়াইড মিডিয়া হোল্ডিং এলএলসি। ওই সংস্থার মালিক জেসন পিফেচার সিংহমের সহযোগী।
এখানেই শেষ নয়। ইডি জানিয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমেরিকার জাস্টিস অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড ইনক সংস্থা-সহ কয়েকটি সংস্থা থেকে ৭৬.৮৪ কোটি, ১.৬১ কোটি, ২৬.৯৮ লক্ষ এবং ২.০৩ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছিল ‘নিউজ়ক্লিক’। যদিও পরিবর্তে তাদের কোনও পরিষেবা দেওয়ার উল্লেখ ইডি তদন্তে খুঁজে পায়নি।
তদন্তে নেমে ইডির নজরে এসেছে বেশ কিছু ইমেল। সেগুলি প্রদীপকে করেছেন সিংহম। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি। সেখানে চিনের একটি প্রচারমূলক ছবির অনুবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এই মামলায় এখনও কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি ইডি।
নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, বেশ কিছু অলাভজনক সংস্থা এবং সহকারী সংস্থার মাধ্যমে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন সিংহম। তাদের হয়ে প্রচার করেন।
৬৯ বছরের সিংহম যদিও কোনও অভিযোগই স্বীকার করেননি। তিনি জানিয়েছেন, কোনও দেশের সরকার, বা সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করে না তাঁর সংস্থা। শুধু নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসেই কাজ করেন।
তবে এতে বিতর্কে ইতি পড়েনি। ভারতের কোনও সংবাদমাধ্যমে টাকা জোগান আমেরিকার শিল্পপতি এবং সেটাও চিনের প্রচারের জন্য, শুধু এই তথ্যটুকুই তো যথেষ্ট বিতর্কের জন্য।