সিনেমায় নগ্নতা এক বহু-চর্চিত বিষয়। নগ্নতা বা যৌনদৃশ্যের ব্যবহার নিয়ে কেউ বলেন তা শিল্পের প্রয়োজনে করা, কারওর মনে হয় নিছক সস্তার প্রচার পাওয়ার জন্য এই দৃশ্য তৈরি হয়। যৌনদৃশ্য নিয়ে ছুতমার্গ এখনও যায়নি। যদিও হিন্দি ছবিতে যৌনদৃশ্যের ব্যবহার শুধুমাত্র কয়েক দশকের নয়।
সত্তরের দশক থেকেই বলিউড বেশ কিছুটা সাবালক হতে শুরু করেছিল, বলা ভাল আজকের ‘বড়’রা তখনও বয়সে তরুণ, বা অনেকে শিশু, অনেকে হয়তো জন্মগ্রহণ করেননি! সেই সময়ের একাধিক ছবিতে নারী শরীরকে খোলামেলা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভারতে মুক্তির ক্ষেত্রে ছবিগুলি থেকে অনেক সময়েই, এই ধরনের দৃশ্যগুলিকে বাদ দেওয়া হত। রইল সেই সত্তর-আশির দশকের এমন কিছু ছবির কথা।
রাজ কপূর পরিচালিত ‘মেরা নাম জোকার’ সেই সময়ের অন্যতম বড় বাজেটের ছবি। ছ’বছর ধরে ছবিটি অনেক পরিশ্রম করে তৈরি করলেও বক্স অফিসে সেই ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে সিমি গারেওয়াল এবং পদ্মিনীর খোলামেলা দৃশ্য ছিল। সিমিকে একটি দৃশ্যে পিছন দিক থেকে সম্পূর্ণ নগ্ন দেখানো হয়। যা সে যুগে তো বটেই সর্বকালের অন্যতম সাহসী দৃশ্য।
‘মেরা নাম জোকার’-এ খোলামেলা দৃশ্য ছিল পদ্মিনীরও। রাজ কপূরের সঙ্গে একটি দৃশ্যে দেখা যায় খেলা দেখাতে গিয়ে তাঁর জামা ছিঁড়ে যায় এবং বুকের বেশ কিছুটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। পদ্মিনীর আরও একটি সাহসী দৃশ্য ছিল এই ছবিতে। সেই দৃশ্যে ভেজা শাড়ি জড়ানো অবস্থায় তিনি ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন, যাতে তাঁর শরীরের ঊর্ধাংশ ছিল স্পষ্ট।
১৯৭০ সালেই ‘দস্তক’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয় রেহানা সুলতানের। সাদা-কালো এই ছবির একটি দৃশ্যে তাঁকে দেখা যায় শরীরের ওপর ভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত। স্তন ছিল হাত দিয়ে ঢাকা।
১৯৭২ সালের ‘জ়রুরত’ ছবিতে রয়েছে একাধিক সাহসী দৃশ্য। একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী রীনা রায়কে পোশাক ছাড়া পিছন থেকে দেখানো হয়। ‘জ়রুরত’ ছিল রীনা রায়ের প্রথম ছবি, আর এটি ‘মেরা নাম জোকার’ এবং ‘দস্তক’-এর পর তৃতীয় ছবি যেখানে খোলা পিঠের দৃশ্য ছিল।
ওই বছরই আমেরিকার কলোম্বিয়া পিকচার্সের প্রযোজনায় মুক্তি পায় কনরাড রুকসের ইংরেজি ছবি ‘সিদ্ধার্থ’। এই ছবির অভিনেতা এবং কলাকুশলীরা বেশির ভাগই ছিলেন ভারতীয়। শশী কপূর এবং সিমি গারেওয়াল অভিনীত এই ছবিতে সিমি ছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন, যেখানে শশী কপূর তাঁকে পুজো করছিলেন।
এর পরেই আসে রাজ কপূরের পরিচালনায় ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবির নাম। রাজ কপূরের হাত ধরে বলিউড তখন ধীরে ধীরে সাবালক হচ্ছিল। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে জিনত আমনের একাধিক সাহসী দৃশ্য ছিল। ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে বেশির ভাগ সময়েই তিনি কেবল সাদা শাড়ি পরে ছিলেন। তাই সাদা শাড়ির মধ্যে দিয়ে তাঁর বক্ষ উদ্ভাসিত হত।
এই ছবিতেই একটি দৃশ্য ছিল জিনত আমনের পোশাক পরিবর্তনের। যেখানে তাঁর শরীরের ঊর্ধাংশ ছিল অনাবৃত, যেখানে পাশ থেকে তাঁর স্তন সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়।
১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গহরাই’ ছবিতে পদ্মিনী কোহ্লাপুরের একটি নগ্ন দৃশ্য ছিল। ধর্মীয় আচার পালন করার ওই দৃশ্যে তাঁকে পিছন দিক থেকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখা যায়। পিঠ খোলা চুলে ঢাকা থাকলেও তাঁর নিতম্ব ছিল অনাবৃত।
রাজ বব্বর এবং কল্পনা আয়ার অভিনীত ‘অরমান’ (১৯৮১) ছবিতে কল্পনা আয়ারের ওপর ভাগ অনাবৃত দৃশ্য রয়েছে, যেখানে দেখা যায় রাজ বব্বর তাঁর খোলা বুকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কল্পনা আয়ার কেবল প্যান্টি পরা অবস্থায় রাজ বব্বরের দিকে চেয়ে।
১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় রেখা, আমজাদ খান, শশী কপূর অভিনীত গিরীশ কর্নাডের ছবি ‘উৎসব’। এই ছবিতে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকলেও নীনা গুপ্তের খোলা শরীরের দৃশ্য বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে।
রাজ কপূরের ‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লি’ ছবি সেই সময়ের হিট ছবি। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নেয়। কিন্তু এই ছবিতে মন্দাকিনীর দু’টি দৃশ্য সেই সময় বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করে। যার মধ্যে ‘তুঝে বুলায়েঁ ইয়ে মেরি বাহেঁ’ গানটিতে ভেজা শরীরে সাদা শাড়ি পরে মন্দাকিনীর নাচের দৃশ্য নজর কেড়েছিল। সাদা শাড়িতে তাঁর বক্ষ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, সঙ্গে ছিল লাস্যময়ী নাচ।
‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লি’-র অপর একটি দৃশ্যে মন্দাকিনী সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন। ভারতে এই ছবিতেই প্রথম কোনও মহিলার স্তনবৃন্ত উন্মুক্ত অবস্থায় দেখানো হয়। অদ্ভুত ভাবে ছবিটি বিশেষ পরিবর্তন ছাড়াই ‘সেন্সর বোর্ড’-এর ‘ইউ’ সার্টিফিকেট নিয়ে মুক্তি পায়। যদিও পরে তা পরিবর্তন করে ‘ইউ/এ’ করা হয়।
একই বছরে মুক্তি পায় ‘সাগর’, যেখানে নগ্ন দৃশ্যে ডিম্পল কপাডিয়াকে সামনে থেকে দেখানো হয়।
১৯৮৮ সালে ‘তৃষাগ্নি’ ছবির মাধ্যমে বলিউড আরও খানিকটা সাহসী হয়ে ওঠে। এই ছবিতে অভিনেত্রী পল্লবী জোশীকে একটি স্নান দৃশ্যে সামনে থেকে নগ্ন অবস্থায় দেখানো হয়। যদিও তাঁর মুখ দেখা যায়নি।
পরবর্তী কালে যত দিন গেছে বলিউড আরও সাহসী হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে ‘কসবা’, ‘ব্যান্ডিট কুইন’, ‘মায়া মেমসাব’ সহ একাধিক ছবিতে নায়িকাকে সামনে থেকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখানো হয়। আজকের ওয়েব সিরিজের যুগে নগ্নতা এবং যৌনতা অনেকটা স্বাভাবিক হলেও তখন ‘সেন্সর বোর্ড’-এর রক্তচক্ষু পেরিয়ে এই কাজ সহজ ছিল না।