২০২৩ সালের শেষ লগ্নে এসে বিধু বিনোদ চোপড়া খেলেছিলেন তাঁর মাস্টারস্ট্রোক। সেই স্ট্রোকটির নাম ‘টুয়েলভ্থ ফেল’। সেই ছবির মুখ্য চরিত্র মনোজ কুমার শর্মা উঠে এসেছিল বাস্তব থেকে। দ্বাদশ শ্রেণিতে অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরেও কী ভাবে একজন মানুষ ইউপিএসসি পরীক্ষা পাশ করলেন, সেই গল্পই বড় পর্দায় তুলে ধরেছিলেন বিধু বিনোদ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অনেক মনোজ কুমার শর্মার গল্প প্রকাশ্যে আসছে। কিন্তু এত সব সাফল্যের গল্পকে ছাপিয়ে আলোচনা হচ্ছে এক ব্যর্থতার গল্প নিয়ে।
সেই ব্যর্থতার গল্পের মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন কুণাল আর ভিরুলকর। ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তিনি সমাজমাধ্যমে একটা পোস্ট করেন। ছোট্ট একটা পোস্ট এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। কমিশন ১০১৬ জন নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকা বার করেছে। এ বার প্রথম হয়েছেন আদিত্য শ্রীবাস্তব। মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি কী ভাবে ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন, তার গল্প নিয়েও আলোচনা চলছে। কিন্তু তাঁকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন কুণাল।
ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণের সংখ্যা অনেক। সেই তালিকায় রয়েছেন কুণালও। নিজের ব্যর্থতার কথা জানিয়ে পোস্ট করেন তিনি। কমিশনের বাইরে দাঁড়িয়ে তোলা নিজের ছবি পোস্ট করেছেন কুণাল।
ছবি নয়, মানুষের আকর্ষণের কারণ পোস্টে কুণালের লেখা। তিনি লেখেন, ‘‘১২ বারের চেষ্টা, সাত বার মেন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ, পাঁচ বার ইন্টারভিউ দিয়েও নির্বাচিত নই।’’ তার পর তিনি লেখেন, ‘‘জীবনের আর এক নামই সংগ্রাম!’’
ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে তিন ধাপ পার করতে হয় প্রার্থীদের। প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। তা পাশ করলেই সুযোগ মেলে মেন পরীক্ষা দেওয়ার। মেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আসে ইন্টারভিউয়ের ডাক। কঠিন প্যানেলের সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষা পাশ করতে সক্ষম হন পরীক্ষার্থীরা।
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা কুণাল এখনও পর্যন্ত ১২ বার ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষা দিয়েছেন। তার মধ্যে সাত বার মেন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কুণাল। পাঁচ বার উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন মেন পরীক্ষা। কিন্তু ইন্টারভিউ দেওয়ার পরেও কমিশনের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাননি কুণাল।
হার না মানা লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি, এমনও জানান কুণাল। তাঁর গল্প প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে টানছেন ‘টুয়েলভ্থ ফেল’ ছবির গৌরী ভাইয়ার চরিত্রের কথা। মনোজের জীবনে অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি। তাঁর চোখেও ইউপিএসসি পরীক্ষা পাশ করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই মেলেনি।
গৌরী ভাইয়াই মনোজকে শিখিয়েছিলেন ‘রিস্টার্ট’ মন্ত্র। ব্যর্থতা এলেও দমে না গিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে ভর করেই সাফল্য পেয়েছেন মনোজ। সেই মন্ত্রই শক্তি দিচ্ছে কুণালকেও।
কুণালের পোস্টে অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করেছেন। অনেকে আবার কুণালকে হার না মানার পরার্শ দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নিজেকে ‘রিস্টার্ট’ করতে বলছেন কুণালকে। কারও কথায়, ‘‘এ বার হয়নি তো কী হয়েছে, পরের বার ঠিক হবে।’’
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের মনোবল বৃদ্ধি করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পোস্ট করেছেন। তিনি তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘‘পরীক্ষায় পাশ করতে না পারা জীবনে ধাক্কা হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানেই আপনার জীবনের যাত্রা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সামনের পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ আশা না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন মোদী।