Tun Tun

হিন্দি ছবির প্রথম কৌতুকাভিনেত্রী, শেষ জীবনে খাবার জোটেনি দিলীপ কুমারের সহ-অভিনেত্রীর

নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে প্রচার পেলেও হিন্দি ছবির প্রথম কৌতুকাভিনেত্রী হিসাবে অভিনয় করেছিলেন উমাদেবী খাত্রি ওরফে টুন টুন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ১০:৩১
Share:
০১ ১৫

চল্লিশের দশকে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন উমাদেবী খাত্রি। হিন্দি ফিল্মজগতে পাঁচ দশক সময় কাটিয়েছেন তিনি। নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে প্রচার পেলেও হিন্দি ছবির প্রথম কৌতুকাভিনেত্রী হিসাবে অভিনয় করেছিলেন তিনি। বলি অভিনেতা দিলীপ কুমারের হাত ধরে উমাদেবী থেকে টুন টুন হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণে শেষ জীবনে এসে অর্থাভাবে দিন কাটাতে হয়েছে অভিনেত্রীকে।

০২ ১৫

১৯২৩ সালের ১১ জুলাই বর্তমান উত্তরপ্রদেশেডর আমরোহি জেলার একটি গ্রামে জন্ম উমাদেবীর। শৈশবেই বাবা-মা এবং ভাইকে হারান তিনি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার যখন আড়াই বছর বয়স তখন জমি দখলের লড়াইয়ে বাবা-মা, ভাই তিন জনেই মারা যান। তাঁদের কারও মুখই আমার এখন মনে পড়ে না। আলিপুর নামে একটি গ্রামে থাকতাম, শুধু এতটুকুই মনে রয়েছে।’’

Advertisement
০৩ ১৫

ছোটবেলা থেকেই অর্থাভাবে দিন কেটেছিল উমাদেবীর। দু’বেলা কোনও রকমে ভাত জোটানোও দুষ্কর হয়ে উঠত। সেই সময় আখতার আব্বাস কাজি নামে এক সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ হয় উমাদেবীর। আখতারই তাঁকে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগান। দেশভাগের সময় আখতার পাকিস্তানের লাহোরে চলে গেলে আবার একা হয়ে পড়েন উমাদেবী।

০৪ ১৫

২৩ বছর বয়সে সঙ্গীতজগতে নিজের কেরিয়ার গড়তে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বই চলে যান উমাদেবী। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, পরে আখতারও লাহোর ছেড়ে মুম্বইয়ে যান এবং ১৯৪৭ সালে উমাদেবীকে বিয়ে করেন।

০৫ ১৫

চল্লিশের দশকে বলিপাড়ার নামকরা সঙ্গীত নির্মাতা ছিলেন নওশাদ আলি। বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা নওশাদের বাড়িতেই যান উমাদেবী। তিনি যে গান করতে পারেন তা নওশাদকে জানান উমাদেবী। হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ না দিলে তিনি যে সমুদ্রে ঝাঁপ দেবেন বলে হুমকি দেন। তখনই উমাদেবীর অডিশন নিয়ে তাঁকে গানের প্রস্তাব দেন নওশাদ।

০৬ ১৫

১৯৪৬ সালে ‘ওয়াকিম আজরা’ ছবিতে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উমাদেবী। তৎকালীন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নুর জাহান, রাজকুমারী, খুর্শিদ বানোর মতো গায়িকাদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় উমাদেবীর। এক বছরের মধ্যেই একের পর এক হিট গান কেরিয়ারের ঝুলিতে যুক্ত হতে থাকে তাঁর।

০৭ ১৫

১৯৪৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দর্দ’ ছবিতে গান গেয়ে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন উমাদেবী। কানাঘুষো শোনা যায়, গান শুনে মুগ্ধ হয়ে মোহন নামে এক অনুরাগী উমাদেবীর সঙ্গে দেখা করতে মুম্বই যান। সেখানে গায়িকার সঙ্গেই এক ছাদের তলায় থাকতে শুরু করেন তিনি। পরে মোহনকে বিয়ে করে মুম্বইয়ে সংসার পাতেন উমাদেবী। দুই পুত্র এবং দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শোনা যায়, ১৯৯২ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মোহন।

০৮ ১৫

চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে নাম করলেও লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের মতো গায়িকারা ইন্ডাস্ট্রিতে আসার কারণে তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন উমাদেবী। নওশাদ তখন তাঁকে অভিনয়ে নামার প্রস্তাব দেন।

০৯ ১৫

নওশাদ বুঝতে পেরেছিলেন যে উমাদেবী প্রাণবন্ত স্বভাবের মানুষ। এমনকি বেশ মজার মজার কথাও বলেন তিনি। কৌতুকাভিনেত্রী হিসাবে অভিনয়জগতে উমাদেবীকে নিজের কেরিয়ার শুরু করার পরামর্শ দেন নওশাদ।

১০ ১৫

কিন্তু উমাদেবী জেদ ধরে বসেন যে তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে তিনি দিলীপ কুমারের সঙ্গেই অভিনয় করবেন। নওশাদের কাছের বন্ধু ছিলেন দিলীপ। কথা বলার পর দিলীপ তাঁর ছবিতে কৌতুকাভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন উমাদেবীকে। অভিনয়জগতে পা রেখে নতুন নামকরণ হয় উমাদেবীর। দিলীপ নবাগতা অভিনেত্রীর নাম রাখেন টুন টুন।

১১ ১৫

১৯৫০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাবুল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় টুন টুনের। এই ছবিতে দিলীপ এবং নার্গিসের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ষাট এবং সত্তরের দশকে বলিপাড়ার নামকরা কৌতুকাভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গুরু দত্তের ‘আর পার’, ‘প্যাসা’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মেসার্স ’৫৫’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন টুন টুন।

১২ ১৫

পাঁচ দশক বলিপাড়ায় কাজ করে মোট ১৯৮টি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন টুন টুন। ১৯৮২ সালে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘নমক হালাল’ ছবিতে টুন টুনের অভিনয় সকলের নজর কেড়েছিল। ১৯৯০ সালে ‘কসম ধান্দে কি’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় টুন টুনকে।

১৩ ১৫

২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর মুম্বইয়ের অন্ধেরিতে ৮০ বছর বয়সে মারা যান টুন টুন। বলি প্রযোজক-অভিনেতা শশী রঞ্জনকে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে টুন টুন জানিয়েছিলেন যে, তিনি খুব খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলেন। যে বলিউডে তিনি এত সময় কাটিয়েছেন, সেই বলিউডই তাঁকে ভুলে গিয়েছিল।

১৪ ১৫

শেষ জীবনে অর্থাভাবে দিন কাটান বলিপাড়ার প্রথম কৌতুকাভিনেত্রী। অসুস্থ থাকাকালীন প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কেনারও টাকা ছিল না টুন টুনের কাছে। খাওয়াদাওয়ার খরচ কোনও ভাবে জোগাড় করতেন তিনি। এমনও দিন গিয়েছে যখন তিনি খেতে পাননি। টুন টুনের পরিস্থিতি দেখার পর সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে ২৫ হাজার টাকা অভিনেত্রীকে দিয়েছিলেন শশী।

১৫ ১৫

এক পুরনো সাক্ষাৎকারে টুন টুন বলেছিলেন, ‘‘আমার ৭৫ বছর বয়স। এখনও আমার বয়স কমই রয়েছে। মান্না দে এই বয়সেও গান করতে পারেন। ইচ্ছা থাকলে আমিও গান গাইতে পারি। কিন্তু আমাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখন নতুন তারকাদের সময়। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আজ তুমি তারকা, আগামী কাল সে জায়গায় অন্য কেউ থাকবেন।’’

সকল ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement