টানা চার দিনের মস্কো আগ্রাসনের মুখে পড়ে বিপর্যস্ত কিভ। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই সঙ্ঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দু’পক্ষই। কিন্তু রাশিয়ার থেকে ইউক্রেনের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। মানুষ তো বটেই, রাশিয়ার মুহুর্মুহু আঘাতে বলি ইউক্রেনের অনেক স্থাপত্য-সম্পত্তিও। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনের কাছে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান।
সঙ্ঘাতের তৃতীয় দিনে রাশিয়ার আঘাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এএন-২২৫ ‘মৃয়া’। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান। রবিবার ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী মিত্র কুলেবা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে ইউক্রেন আবারও এই বিমান নতুন করে তৈরি করবে বলেও তিনি জানিয়েছে।
ইউক্রেনিয়ান ভাষায় ‘মৃয়া’-র অর্থ স্বপ্ন। ইউক্রেনের অ্যারোনটিক্স সংস্থা অ্যান্টোনভ এই বিমানটির প্রস্তুতকারক। তবে এই বিমানটি যাত্রী পরিবহণের জন্য বানানো হয়নি। কার্গো অর্থাৎ বিভিন্ন পণ্য পরিবহণের জন্যই বিমানটি তৈরি করা হয়েছিল।
কিভের কাছে হস্টোমেল বিমান বন্দরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নষ্ট হয় বিমানটি।
অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে ১৯৮০ সালে ইউক্রেনের অ্যান্টোনভ সংস্থা এই বিমানটির নকশা প্রস্তুত করে। এই বিমানের নকশা তৈরির মাথা ছিলেন ভিক্টর তোলমাচেভ।
১৯৮৫ সালে বিমানটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হলেও ১৯৮৮ সালের ২১ ডিসেম্বর এই বিমান প্রথম আকাশপথে ওড়ে।
৩ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর কাজে লাগার পর প্রায় ৮ বছর ধরে বিমানটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে অবশ্য বিমানটি বাণিজ্যিক কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেন।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় বিমান হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক কৃতিত্বের অধিকারী এই এএন-২২৫ বিমান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভারী বিমানও বটে। এ ছাড়াও এই বিমানের ডানা দু’টি বিশ্বের সবথেকে বড় বিমানের ডানা।
৬৪০ টনেরও বেশি ওজন নিয়ে উড়তে পারে এই বিমানটি। শুধুমাত্র এই বিমান দেখতেই ফি বছর অনেক পর্যটকদের ভিড় জমে ইউক্রেনে।
এএন-২২৫ বিমানের সর্বাধিক এক লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৮০ কিলোগ্রামের একক বস্তু পরিবহণের রেকর্ড রয়েছে। পাশাপাশি এই বিমানটি সর্বাধিক দুই লক্ষ ৫৩ হাজার ৮২০ কিলোগ্রাম নিয়ে উড়ে গিয়ে অনন্য নজির গড়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্পের সময় রকেটের বুস্টার, এমনকি অন্য বিমানকেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে ব্যবহার করা হত এএন-২২৫ ।