ধীরে ধীরে কিভের বুকে বাড়ছে মস্কোর আগ্রাসন। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউক্রেনবাসীদের জীবন।
রুশ আগ্রাসনের মুখে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। ইউক্রেন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের বলি হয়েছেন অন্তত দু’হাজার সাধারণ মানুষ।
রুশ আগ্রাসনের মধ্যে অন্তত ন’লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনকে সরাসরি সাহায্য করলে রাশিয়ার রোষের মুখে পড়তে হবে ভেবেও অনেক দেশ পিছিয়েছে। আবার অনেক দেশ শুধু অস্ত্র এবং সাহায্য পাঠিয়েই খালাস।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলনস্কি নিজেই দেশ রক্ষার খাতিরে সেনা সজ্জা গায়ে তুলেছেন। বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন দলের অন্যান্য নেতারাও।
এ রকমই এক জন হলেন ভিয়াতোলাভ ইয়ুরাশ। ভিয়াতোলাভ ইউক্রেনের এক জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি ইউক্রেন পার্লামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও বটে।
রাজনীতি ছেড়ে হাতে কালাশনিকভ তুলে দেশ পাহারার কাজে লেগেছেন ভিয়াতোলাভ। কড়া নজর রাখছেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে।
ভিয়াতোলাভের জন্ম ১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি ইউক্রেনের সার্ভেন্ট অব দা পিপল পার্টির সদস্য।
২০১৯ সালে নির্বাচনে জিতে তিনি ইউক্রেন পার্লামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হন।
২০১৩ সালে ইউক্রেনের গণবিক্ষোভ (মেইডেন রেভোলিউশনের সময়) তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ের সময় ভিয়াতোলাভ জেলেনস্কির প্রধান মুখপাত্র হয়ে কাজ করেছিলেন।
ভিয়াতোলাভের দাবি, তিনি নিজে সেনাসদস্য না। কিন্তু এই লড়াই এখন সবার। তাই দেশের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে তিনিও হাতে কালাশনিকভ তুলে নিয়েছেন।
এই মুহূর্তে তাঁর দায়িত্ব কিভের সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল চত্বরের আশপাশের এলাকা এবং মানুষদের রুশ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা।
এই এলাকা সুরক্ষিত করার পর কিভের পশ্চিমাঞ্চলে যাবেন বলেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভিয়াতোলাভ। কিভের পশ্চিমাঞ্চলেই এখন মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে।
সপ্তাহখানেক যাবৎ বিমান থেকে বোমাবর্ষণ এবং দূরপাল্লার ৩-এম ৫৪ ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরে এ বার খারকিভ-সহ ইউক্রেনের একাধিক শহর দখলের জন্য মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে পড়েছে রুশ বাহিনী।
কিন্তু সেই অভিযানে কার্যত প্রতি ইঞ্চি জমি দখলে ইউক্রেন সেনার শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ছে তারা।
দক্ষিণ ইউক্রেনে ডেনিপার নদীর মোহনার বন্দর-শহর খেরসনের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী বড় শহর ওডেসা এবং মারিউপোল শহর দখলের জন্যও আক্রমণের তীব্রতা বাড়ানো হয়েছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্রাইমিয়ার উপকূলে মোতায়েন রুশ নৌসেনা এক সপ্তাহ আগেই ওই দু’টি শহর দখলের লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু করেছিল। এই অঞ্চলেই যেতে চান ভিয়াতোলাভ।
রুশ বহরকে রোখায় ইউক্রেন সেনার প্রধান হাতিয়ার আমেরিকায় তৈরি এফজিএম-১৪৮ জ্যাভলিন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গত কয়েক দিনে রাশিয়ার বেশ কিছু ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে।
ভিয়াতোলাভ বলেছেন, যত ক্ষণ তাঁর প্রাণ রয়েছে, তত ক্ষণ তিনি যে কোন মূল্যেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করবেন।