রাশিয়ার এক অষ্টাদশীকে লক্ষ্য করে আজকাল ক্রমাগত গোলাবর্ষণ চলছে নেটমাধ্যমে। ভ্লাদিমির পুতিনের সেনারা ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই ওই মেয়ের দিকে ধেয়ে আসছে ট্রোলিংয়ের বিষাক্ত তির।
তবে আচমকাই ইনস্টাগ্রামে লুইজা রোজোভার অ্যাকাউন্টটি গায়েব হয়ে গিয়েছে। অনেকের দাবি, ট্রোলিংয়ে জেরবার হয়েই নিজের অ্যাকাউন্টটি সরিয়ে দিয়েছেন খোদ লুইজা।
অনেকের দাবি, ওই অষ্টাদশীই পুতিনের মেয়ে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই তাঁর জন্ম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওই অষ্টাদশীর ‘বাবা’-কে কাঠগড়ায় তুলে তাঁর দিকে কটাক্ষের তির ছোড়া চলছে। তা নাকি এতই বিষাক্ত যে বাধ্য হয়ে ইনস্টাগ্রামে নিজের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছেন লুইজা।
নেটমাধ্যমে বেশ সক্রিয় সেন্ট পিটার্সবার্গের ছাত্রী লুইজা। সেখানে প্রায়শই ছবি পোস্ট করতেন। কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে, ক্যাফেতে সময় কাটাচ্ছেন। কখনও বা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্যারিসে। অনেক সময় নিজের ফ্যাশন লেবেলের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ডিজে হিসাবেও চুটিয়ে উপভোগ করছেন।
এক সময় নিজের জীবনের খুঁটিনাটি শেয়ার করলেও হঠাৎই যেন তা কমে গিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে লুইজার শেষ পোস্টটি ছিল প্রায় পাঁচ মাস আগেকার। ২০২১ সালের অক্টোবরে। অনেকেই সন্দিহান, পুতিনের চাপে পড়েই ইনস্টাগ্রামে যাতায়াত বন্ধ করেছেন লুইজা। যদিও সেই অ্যাকাউন্টটি এই সে দিন পর্যন্তও দেখা যাচ্ছিল। তবে ইউক্রেনে পুতিনবাহিনীর হামলার পরই ইনস্টাগ্রামে লুইজার শেষ পোস্টের নীচে একের পর এক বিষাক্ত মন্তব্য ধেয়ে এসেছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ঘোষণার পর লুইজার প্রতি যেমন এক জনের মন্তব্য, ‘আপনি কি বাঙ্কারে লুকিয়ে রয়েছেন? ইঁদুরের মতো?’
লুইজার পিতৃপরিচয় নিয়ে জল্পনা চললেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তাঁর মা শ্বেতলানা ক্রিভোনোগিখ। রাশিয়ার অন্যতম ধনী এই মহিলার সঙ্গে পুতিনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে জোর জল্পনা। এ বিষয় নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাননি পুতিন। মায়ের মতো মুখে কুলুপ এঁটেছেন লুইজাও। যদিও এক বার রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দেখতে হয়তো কমবয়সি পুতিনের মতো!’’
রাশিয়ার একটি ব্যাঙ্কের অন্যতম মালকিন শ্বেতলানার বিপুল সম্পত্তি। তা ছড়িয়ে ফ্রান্সের মোনাকোতেও। অনেকের দাবি, ওই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন ‘পুতিন-কন্যা’। অনেকে আবার মনে করছেন, নিজের পরিবারের সদস্যদের সাইবেরিয়ায় কোনও গোপন আস্তানায় সরিয়ে ফেলেছেন পুতিন।
লুইজার প্রতি এক জনের কটাক্ষ, ‘যখন আপনি মোনাকোর আশপাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন, তখন আপনার প্রজন্মের অনেকে ইউক্রেনে মরতে বসেছেন। সবই আপনার বাবার জন্য... ।’ আর এক জন তো সরাসরি লুইজাকে আক্রমণ করেছেন। লিখেছেন, ‘নিজের মুখটা দেখান। ভীতু কোথাকার!’
লুইজাকে লক্ষ্য করে এক জনের মন্তব্য, ‘রাশিয়ার কমবয়সি সেনানিদের ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা কোথায় রয়েছেন, কাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, কোনও খবর নেই।’ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কা অনেকের। ইনস্টাগ্রামে তাঁদেরই এক জনের দাবি, ‘রাশিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। একেবারে শূন্যের দিয়ে এগোচ্ছে।’
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জেরে লুইজার মতো প্রতিপত্তিশালী নাগরিকেরা যে বিপাকে পড়বেন, তা-ও উল্লেখ করেছেন অনেকে। এক জন লিখেছেন, ‘এখনও যদি না হয়ে থাকে, তবে শীঘ্রই আপনি নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, গুগ্ল বা অ্যামাজন পে-র মতো অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। সমস্ত জনপ্রিয় ব্র্যান্ড রাশিয়াকে বয়কট করবে।’
ইউক্রেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে লুইজাকে সরব হওয়ার পরামর্শ দিতেও ছাড়েননি অনেকে। বলেছেন, ‘চুপ করে থাকাটাই শুধু বন্ধ করতে হবে আপনাকে। এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ইউক্রেনে কী ঘটছে, সেই সত্যিটা মানুষজনকে বলুন।’
তবে স্বল্পসংখ্যক হলেও লুইজার পাশে অনেকে দাঁড়িয়েছেন। তেমনই এক জনের উক্তি, ‘এক জন উন্মাদ বাবার জন্য ওঁর (লুইজা) তো দোষ নেই।’ অন্য এক জনের মতে, ‘ওঁকে কাঠগড়ায় তুলবেন না।’