নির্ভুল নিশানায় একের পর এক রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ধ্বংস করছেন ‘ঘোস্ট অব কিভ’! একটি-দু’টি নয়। ৩০ ঘণ্টায় পর পর ছ’টি। এ রকমই একটি ভিডিয়ো ঘিরে নেটমাধ্যমে শোরগোল শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর দিনেই এক নামহীন বিমানচালকের এই কীর্তির দাবি করেছে ইউক্রেন। ওই চালককেই ‘ঘোস্ট অব কিভ’ বলা হচ্ছে। তাঁকে নায়কের আসনও পেতে দিয়েছে ভোলোদিমির জেলেনস্কি সরকার। যদিও এই দাবি ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।
টুইটারে ভাইরাল হওয়া অসংখ্য ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ইউক্রেনের ‘মিগ-২৯’ যুদ্ধবিমানের চালকের আসনে এক হেলমেটধারী। ইউক্রেনের নানা শহরে যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এমনকি, নিখুঁত লক্ষ্যভেদে আকাশ থেকে নামিয়ে আনছেন রাশিয়ান বায়ুসেনার বিমান। সব মিলিয়ে ১০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছেন তিনি। সত্যিই কি এমন করেছেন ‘ঘোস্ট অব কিভ’?
ইউক্রেনের অজানা ওই বিমানচালকের এ হেন কীর্তির সত্যতা নিয়ে প্রশ্নের মাঝেই একটি ভিডিয়োতে ৫০ লক্ষের পছন্দ হয়েছে। একটি ভাইরাল পোস্টে এক জনের দাবি, ‘রাশিয়ান বায়ুসেনার দু’টি এসইউ-৩৫, একটি এসইউ-২৭, একটি মিগ-২৯ এবং দু’টি এসইউ-২৫ বিমান উড়িয়ে দিয়েছে ঘোস্ট অব কিভ।’ তবে এ সবই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে নানা সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে টুইটার ব্যবহারকারীদের একাংশ।
‘ঘোস্ট অব কিভ’-এর অস্তিত্বকে নাকচ করে দিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তাদের দাবি, টুইটারে ভাইরাল ওই ভিডিয়োটি ভুয়ো। সেটি আসলে ২০০৮ সালে ‘ডিজিটাল কমব্যাট সিমুলেটর’ (ডিসিএস) নামে একটি ভিডিয়ো গেমের একটি ফুটেজ।
রয়টার্স-এর মতে, ‘অনলাইনে যে ভিডিয়োটি দেখা যাচ্ছে, তাতে ইউক্রেনের কোনও ফাইটার জেট রাশিয়ান যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করছে না। এটি আসলে ডিসিএস ভিডিয়ো গেমের অংশ।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এই দাবিকে অবশ্য মানতে নারাজ ইউক্রেন সরকার। রবিবার ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছে তারা।
ইউক্রেনের সরকারি টুইটার হ্যান্ডলে ওই ভিডিয়োর সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘লোকজন একে ঘোস্ট অব কিভ বলে চেনেন। এবং তা যথার্থই বটে। রাশিয়ান হানাদার বিমানগুলির দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইউক্রেনীয় বায়ুসেনার এই অভিজ্ঞ চালক।’
টুইটারে ইউক্রেন সরকারের দাবি, ‘২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ান হানাদারির প্রথম ৩০ ঘণ্টায় রাশিয়ার ছ’টি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে ঘোস্ট অব কিভ। এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০টি সামরিক বিমানকে ধ্বংস করেছে।’ এর সঙ্গে মন্তব্য, ‘(আকাশপথে যুদ্ধে) ওস্তাদ বিমানচালক হতে গেলে কমপক্ষে পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা বা়ঞ্ছনীয়। তবে ঘোস্ট অব কিভ তার দ্বিগুণ সংখ্যক বিমানকে গুলি করে মাটিতে নামিয়েছে।’
‘ঘোস্ট অব কিভ’-কে অলিখিত ভাবে জাতীয় নায়কের মর্যাদাও দিয়ে ফেলেছে ইউক্রেন। একটি কার্টুন-সহ সরকারি অ্যাকউন্টে ওই ভিডিয়োটি শুরু হয়েছে। ভিডিয়োটি শুরুর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি লাইন। তাতে লেখা, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হয়তো এই প্রথম এক জন ওস্তাদ বিমানচালক পেল ইউক্রেন। মিগ-২৯ বিমানের এই অজানা চালক ঘোস্ট অব কিভ নামে পরিচিত! ইউক্রেনীয়রা এই সাহসী নায়কের কাছে কৃতজ্ঞ, যিনি রাশিয়ার বিমান দিয়ে প্রাতরাশ সারছেন।’
ইউক্রেনীয় ‘নায়কে’র অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তাঁকে বাহবা দিয়েছেন দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। শুক্রবার ওই ভিডিয়োটি তিনিও শেয়ার করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘দারুণ স্পিড অ্যান্ড হ্যাপি হান্টিং!’ সেই সঙ্গে তাঁর আশা, ‘ঘোস্ট অব কিভের মতো শক্তিশালী রক্ষক থাকলে ইউক্রেন অবশ্যই যুদ্ধে জিতবে!’
যে নায়কের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, তার বীরত্বের দাবি কেন করছে জেলেনস্কি সরকার? অনেকের মতে, যুদ্ধ চলাকালীন এক শহুরে নায়কের আড়ালে আসলে সমগ্র দেশবাসীকে একজোট করতেই এ পন্থা নিয়েছে ইউক্রেন।