রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি হয়েছে গত মাসে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সেই সংঘাতে এখনও হামলা, পাল্টা হামলা চলছে। রাশিয়ার আক্রমণে পিছু হটেনি ইউক্রেন। যদিও সংঘাতের তীব্রতা অনেকটাই কমেছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বাধলেও তা আলোচনার বস্তু হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর বাকি দেশগুলির কাছে। রাষ্ট্রপুঞ্জেও সেই যুদ্ধ নিয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে দু’দেশকেই সমর্থন করেছে অনেক দেশ।
তবে এখন আবার দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর কারণ, প্রকাশ্যে আসা বেশ কয়েকটি ছবি।
সেই ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, খারকিভ প্রদেশে বিশাল বিশাল দুর্গ তৈরি করছে ইউক্রেন। শত্রুদের সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচার জন্য খারকিভ এলাকায় এই দুর্গগুলি তৈরি করা হচ্ছে। রাশিয়া যাতে ইউক্রেনের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আর দখল করতে না পারে, তার জন্যই চলছে প্রস্তুতি।
খারকিভ প্রদেশের বহু এলাকায় এই দুর্গগুলি তৈরি করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সময়ে সময়ে ইউক্রেনের প্রশাসনিক কর্তারা কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে আসছেন।
খারকিভের অসামরিক-সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলে সিনেগুবভ টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করার পরে দুর্গ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। লক্ষ্যপূরণ করতে প্রায় ৫০০ কর্মী এবং ২০০টি নির্মাণযন্ত্র কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন সিনেগুবভ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে সফরের পরে সে দেশের সেনাকে দেশের পূর্বে একাধিক দুর্গ তৈরির নির্দেশ দেন।
জেলেনস্কি সেই সময়ে ইউক্রেনের জনগণের উদ্দেশে একটি ভাষণে মন্তব্য করেন, ‘‘যে সমস্ত এলাকায় শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে সামরিক কাঠামো নির্মাণ করা উচিত।’’
জেলেনস্কির সেই মন্তব্যের কয়েক মাসের মধ্যেই খারকিভ অঞ্চলে দুর্গ তৈরির ছবি প্রকাশ্যে আসে।
কিন্তু কী ভাবে সেই দুর্গ তৈরি করছে ইউক্রেন? ইউক্রেনের সামরিক খবরের ওয়েবসাইট ‘মিলিটারিনি’ জানিয়েছে, খারকিভে দুর্গ নির্মাণের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছে মার্চ মাসের শুরুতে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় এই দুর্গগুলি তৈরি হচ্ছে।
প্রকাশ্যে আসা ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, দুর্গের কাঠামো তৈরির পাশাপাশি বড় বড় গর্ত খোঁড়া হয়েছে। দুর্গগুলিতে রাখা থাকছে বিস্ফোরক, বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র। দুর্গের বাইরে বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া এবং ট্যাঙ্করোধী কংক্রিটের ত্রিকোণ চাঁই, যা ‘ড্রাগনস্ টিথ’ বা ‘ড্রাগনের দাঁত’ নামে পরিচিত।
ড্রাগনের দাঁত হল পিরামিডের মতো দেখতে কংক্রিটের তৈরি ট্যাঙ্করোধী শক্ত চাঁই। শত্রুপক্ষের সাঁজোয়া গাড়ি রুখতে কাঁটাতারের পাশাপাশি, এগুলিও মাটিতে সারিবদ্ধ ভাবে বসানো হয়।
প্রকাশ্যে আসা ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, খারকিভে প্রায় ছয় থেকে আট ফুটের ব্যবধানে ওই ড্রাগনের দাঁত রাখা হয়েছে।
ড্রাগনের দাঁতের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি শত্রুদের ট্যাঙ্ককে রুখে দেওয়ার জন্য কাঁটা হিসাবে কাজ করে। এগুলি বসানো যেমন কঠিন, ভাঙাও তেমনই কঠিন।
ড্রাগনের দাঁতের কারণে কাঁটাতারের বেড়া টপকে প্রবেশ করাও শত্রুদের জন্য কঠিন হবে বলে দাবি করেছেন শেরম্যান।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্গের বাইরের দিকে যে খাদগুলি তৈরি করা হয়েছে, তার গভীরতা এবং প্রস্থ প্রায় আট মিটার। দুর্গের পিছনে রয়েছে সেনাছাউনি।
‘মিলিটারিনি’ জানিয়েছে যে, রুশ সেনা যদি প্রথম সারিতে থাকা ইউক্রেনের সেনাকে পর্যদুস্ত করতে পারে, তা হলে তাঁদের দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। আর সেই সময়েই ছাউনিতে থাকা ইউক্রেনীয় সেনা রুশ বাহিনীর উপর অনায়াসে হামলা চালাতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
খারকিভের প্রশাসনিক প্রধান সিনেগুবভ জানিয়েছেন যে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনের শ্রমিকদের এই দুর্গগুলি তৈরি করতে হচ্ছে। প্রায়ই রাশিয়ার তরফ থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে সারা দিন ধরে কাজ চলছে। দু’মাসের মধ্যেই দুর্গ তৈরির কাজ শেষ হযে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল জানিয়েছেন যে, দুর্গ নির্মাণের জন্য ২০২৪ সালে খারকিভ প্রশাসনের হাতে ১৩.৬ কোটি ডলার তুলে দেওয়া হবে।