তরুণীর কীর্তিতে নাকানিচোবানি খাচ্ছে ব্রিটেনের পুলিশ। সাধারণ পুলিশ আধিকারিক থেকে শুরু করে দুঁদে গোয়েন্দা, তাঁকে ধরতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সকলকে। তিনি ফেরার, কিন্তু ‘গায়েব’ নন।
তরুণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। দেশের আইন ভেঙে তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি নগদ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ। বিমানে হাতেনাতে ধরাও পড়েন। কিন্তু পুলিশ তাঁর নাগাল পায়নি।
কথা হচ্ছে মিচেল ক্লার্ককে নিয়ে। ব্রিটেনের কুখ্যাত নগদ পাচারকাণ্ডের মূল হোতা তিনিই। সারা দেশের পুলিশ প্রশাসন মিচেলকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কোন পথে এগিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ? আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি নগদ টাকা ইউরোপের বাইরে পাঠানো যায় না। লেনদেনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।
দুবাইগামী বিমানে নগদ টাকা-সহ ধরা পড়েন ব্রিটেনের জনপ্রিয় মডেল জো-এমা লারভিন। তাঁর কাছে টাকা ভর্তি সাতটি স্যুটকেস ছিল।
গুনে দেখা যায়, লারভিনের কাছে পাওয়া স্যুটকেসে ছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা। তবে একবার নয়, দু’বার বিমানে টাকা নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন ওই মডেল।
দ্বিতীয় বারের যাত্রায় লারভিনের কাছে ছিল অন্তত ২৮ কোটি টাকা। নিজের ব্যাগপত্রের মধ্যেই সুকৌশলে এই টাকা তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ।
আইন বলছে, ৯ লক্ষ বা তার বেশি টাকা নগদে ইউরোপের বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না। লারভিনের কাছ থেকে পাওয়া টাকার পরিমাণ আইন নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অনেকটাই বেশি ছিল।
কিন্তু মডেল লারভিনের সঙ্গে টাকা পাচারকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মিচেলের কী যোগাযোগ? অভিযোগ, লারভিনকে ‘ভাড়া’ করেছিলেন মিচেলই। তাঁরই নির্দেশে নগদ টাকা নিয়ে কৌশলে বিমানে উঠেছিলেন লারভিন।
তদন্তকারীরা জানান, ঝুঁকি নিয়ে এই টাকা বহনের জন্য লারভিনকে দেওয়া হয়েছিল অন্তত ৩ লক্ষ টাকা। সঙ্গে অন্যান্য খরচও তিনি পেয়েছিলেন।
তদন্তকারীদের আরও দাবি, টাকার স্যুটকেস যাতে সহজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ কুকুরের নজরে না আসে, তাই সেগুলির আশপাশে প্রচুর পরিমাণে কফি এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়েছিল।
আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন লারভিন নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দূতাবাস থেকে ওই টাকা দুবাই পাঠানো হচ্ছে।
লারভিন এবং তাঁর সহযোগীরা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। তবে তাঁদের জামিনও মঞ্জুর করা হয়।
মিচেলকে ধরা যায়নি। পুলিশের ধারণা, তিনি দুবাইয়ের কোনও বাংলোতে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে তাঁর সন্ধানে তল্লাশি চালানোর অনুমতি এখনও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর কাছ থেকে পায়নি ব্রিটেনের পুলিশ।
পলাতক অপরাধীকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু করে দিয়েছে ব্রিটেন। তারা আশাবাদী, আইনের জটিলতা কাটিয়ে শীঘ্রই মিচেলকে দেশে ফেরানো যাবে। তার পর অপরাধের উপযুক্ত সাজা দেওয়া হবে তাঁকে।