Tupperware

প্লাস্টিকের টিফিন বাক্স তৈরির সংস্থায় লালবাতি, নগদ ১৯৮ কোটিতে কোম্পানি কিনতে হুড়োহুড়ি!

আমেরিকার বিখ্যাত প্লাস্টিকের রান্নাঘরের সামগ্রী ও টিফিন বাক্স নির্মাণকারী সংস্থায় জ্বলে গিয়েছে লালবাতি। নগদ ১৯৮ কোটি টাকা খরচ করে যা কিনে নিতে চাইছেন ঋণদাতারা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২৪
Share:
০১ ২১

টিফিন বাক্স থেকে শুরু করে রান্নাঘরের হরেক সামগ্রী। প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করে হইচই ফেলে দেওয়া আমেরিকান সংস্থা ‘টাপারঅয়্যার ব্র্যান্ডস’-এ জ্বলে গিয়েছে লালবাতি। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সেই সংস্থাই এ বার বিক্রি হচ্ছে।

০২ ২১

টাপারঅয়্যারে লালবাতি জ্বলার পরেই ঋণ মেটাতে খোলাবাজারে সংস্থাটির সম্পত্তি নিলাম করার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা থেকে অচিরেই সরে আসেন তাঁরা। উল্টে পুরো কোম্পানি বিক্রির ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন টাপারঅয়্যার কর্তৃপক্ষ।

Advertisement
০৩ ২১

চলতি বছরের ২২ অক্টোবর প্লাস্টিকের সামগ্রী নির্মাণকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, ঋণদানকারী একটি গোষ্ঠীর কাছে তাদের ব্যবসা বিক্রি করা হবে। এর দর নগদে ধার্য হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা।

০৪ ২১

এ ছাড়াও ৬ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার ঋণ রয়েছে টায়ারঅয়্যারের। সেই টাকাও মিটিয়ে দেবে ওই সংস্থা। আমেরিকার ডিলাওয়্যারের উইলমিংটনের একটি দেউলিয়া আদালতে শুনানিতে এই চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে রান্নাঘরের প্লাস্টিকের সামগ্রী নির্মাণকারী সংস্থা।

০৫ ২১

ওই আদালতের বিচারপতি ব্রেন্ডন শ্যানন জানিয়েছেন, সংস্থা বিক্রির ব্যাপারে অনুমোদন দিতে দ্রুত একটি পৃথক আদালতে শুনানির সময় নির্ধারণ করা হবে। ‘কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং’ সময়ে যাকে টায়ারঅয়্যারের জন্য আশার আলো বলে মনে করা হচ্ছে।

০৬ ২১

দেউলিয়া অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য এ বছরের সেপ্টেম্বরে ফ্লোরিডার সংস্থাটি আদালতের দ্বারস্থ হয়। ওই সময়ে টায়ারঅয়্যারের ঘাড়ে থাকা ঋণের অঙ্ক ছিল ৮১.৮০ কোটি ডলার। ফলে একজন ক্রেতার খোঁজ শুরু করে দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

০৭ ২১

কিন্তু টাপারঅয়্যারের ঋণদাতারা এর প্রবল বিরোধিতা করেন। তাঁরা বরং সংস্থার সম্পদের ভাগ পেতে চেয়েছিলেন। ফলে বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকের সামগ্রী নির্মাণকারী সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের পরিকল্পনা বদল করতে হয়।

০৮ ২১

টাপারঅয়্যারের আইনজীবী স্পেন্সার উইন্টার্স আদালতে জানিয়েছেন, নতুন বিক্রয় চুক্তিতে ঋণদাতারা সংস্থার ব্র্যান্ড নাম ও অপারেশনের অন্য দিকগুলি কিনতে পারবেন। প্রাথমিক ভাবে আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, চিন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার বাজার ধরার জন্য সংস্থাটি ঝাঁপাতে চলেছে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

০৯ ২১

২২ অক্টোবর দেওয়া বিবৃতিতে টাপারঅয়্যারের চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) লরি অ্যান গোল্ডম্যান বলেছেন, ‘‘আমরা বাজারে অন্যান্য কাজ বন্ধ রাখছি, যেগুলি কোম্পানির ঋণের বোঝা বাড়িয়েই চলেছে।’’

১০ ২১

এ বছরের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আদালতের শুনানিতে আমেরিকান সংস্থাটি যুক্তি দিয়েছিল, ঋণদাতারা টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে বড় ছাড় পেতে চলেছেন। এই অবস্থায় অন্য ঋণদাতাদের এগিয়ে আসা আটকানো উচিত হবে না।

১১ ২১

অন্য ঋণদাতাদের টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না দিলে বর্তমান ঋণদাতারাই যে সবচেয়ে লাভবান হবেন তা আদালতে স্পষ্ট করেছেন টাপারঅয়্যার কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, সংস্থার নিলাম হলে তা ঋণ বিনিময়ে বাধা দেবে বলেও সেখানে দাবি করা হয়েছিল।

১২ ২১

নতুন চুক্তিতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে বলে মনে করছেন টাপারঅয়্যার কর্তৃপক্ষ। এতে সংস্থার পার্চেজ় প্রাইসের উপর ভিত্তি করে ঋণদাতারা ঋণের কিছু অংশ বাতিলের সুযোগ পাবেন।

১৩ ২১

অন্য দিকে সংস্থার তহবিলে মোটা টাকা জমা পড়বে। যা ব্যবহার করে টাপারঅয়্যার ঋণ মেটাতে পারবে। প্লাস্টিকের পণ্য নির্মাণকারী সংস্থাটি কেনার দৌড়ে রয়েছে অ্যালডেন গ্লোবাল ক্যাপিটাল, স্টোনহিল ইনস্টিটিউশনাল পার্টনার্স এবং ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা।

১৪ ২১

১৯৪৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় টাপারঅয়্যারের পথচলা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আর্ল টাপার। ম্যাসাচুসেটসের লিওমিনস্টারে প্লাস্টিকের একটি কারখানা তৈরি করেন তিনি।

১৫ ২১

প্রথম দিকে প্লাস্টিকের সাবান ও সিগারেট কেস তৈরি করত টাপারের সংস্থা। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর টাপারঅয়্যারের ব্যবসায় গতি আসে। ১৯৪৬ সালে রান্নাঘরের প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরি শুরু করে আর্ল টাপারের সংস্থা। তাঁর সংস্থার ‘বিস্ময় বাটি’ দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

১৬ ২১

ম্যানহাটনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে রান্নাঘরের সামগ্রী বিক্রি করতেন টাপার। এ ছাড়া ছিল নিজস্ব শোরুম। তবে প্রথম দিকে ধীর গতিতে সেগুলি বিক্রি হচ্ছিল। ১৯৫১ সালে টাপারঅয়্যারের সঙ্গে যুক্ত হন ফ্লোরিডাবাসী ব্রাউনি ওয়াইজ়। তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধির জোরে হু-হু করে বাড়তে শুরু করে বিক্রি।

১৭ ২১

১৯৫৩ সালে অরল্যান্ডোর দক্ষিণে ফ্লরিডার কিসিমিতে ১ হাজার ৩০০ একর জমি কেনেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আর্ল টাপার। ওই জায়গাটি তখন ছিল ছোট্ট একটা খামারশহর। ওই জমিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় টাপারঅয়্যারের সদর দফতর।

১৮ ২১

এর এক বছরের মাথায় প্লাস্টিকের রান্নাঘরের সামগ্রী নির্মাণকারী সংস্থাটির ব্যবসা আড়াই কোটি ডলারে পৌঁছয়। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকা জুড়ে বহু সংস্থাই টাপারঅয়্যারের ব্যবসার মডেলকে ধ্রুবতারা মেনে চলত।

১৯ ২১

১৯৫৮ সালে টাপারের সংস্থা থেকে চাকরি হারান ওয়াইজ়। তাঁর বিরুদ্ধে কোম্পানির ব্র্যান্ডের মুখ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার অভিযোগ উঠেছিল। ওই বছরই ওষুধ বিক্রির চেন সংস্থা রেক্সালের কাছে ৯০ লক্ষ ডলারের স্টক বিক্রি করেছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

২০ ২১

১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে টাপারওয়্যারের ব্যবসা। প্রথমে ব্রিটেনের বাজার দখল করে এই সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সংস্থায় আমেরিকার মহিলাদের অংশীদারি বাড়ছিল। ১৯৫৪ সালে এতে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩৪ শতাংশ। যা ২০০০ সালে ৬০ শতাংশে গিয়েছিল।

২১ ২১

২০২০ সালে করোনা অতিমারি শুরু হলে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে এই সংস্থা। রান্নাঘরের সামগ্রী বিক্রি তলানিতে চলে আসে। সেই জায়গা থেকে টাপারঅয়্যার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ বছরের সেপ্টেম্বরে আমেরিকার দেউলিয়া আইনের ১১ নম্বর চ্যাপ্টার অনুযায়ী আদালতে আবেদনপত্র জমা করে এই সংস্থা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement