নির্বাচনী বন্ড কিনে ভারতের রাজনৈতিক দলে অনুদান দিয়েছে পাকিস্তানের এক সংস্থা! তা-ও আবার ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার ঠিক পরে! নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই এমন একটি খবরে হইচই পড়ে সমাজমাধ্যমে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনে নির্বাচন সদন।
নির্বাচনী বন্ডের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ১৪টি বন্ড কিনে মোট ৯৫ লক্ষ টাকার অনুদান দিয়েছে ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ নামে এক সংস্থা। আর তার পর থেকেই হইচইয়ের সূত্রপাত।
‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ নামে গুগ্লে সার্চ করলে দেখা যাবে, সেটি একটি পাকিস্তানি সংস্থা। পাকিস্তানের প্রথম এবং বৃহত্তম স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাও বটে। যার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ৩২৫০ মেগাওয়াট।
‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ ১৯৯৪ সালে তৈরি হয়, যার সদর দফতর করাচিতে। নেটমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংস্থার চেয়ারম্যান হাবিবুল্লা খান এবং সিইও জর্জ নিকোলাস।
একে পাকিস্তানি সংস্থা, তার উপর আবার পুলওয়ামা হামলার ঠিক পরেই অনুদান। দুইয়ে দুইয়ে চার করে নেন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায় কংগ্রেসকেও।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ১৫ মার্চ চণ্ডীগড় কংগ্রেসের তরফে একটি পোস্ট করা হয়। সেই পোস্টে লেখা, ‘‘অভাবনীয়। পাকিস্তানের সংস্থা হাব পাওয়ার কোম্পানি পুলওয়ামা হামলার কয়েক সপ্তাহ পরেই নির্বাচনী বন্ড কিনে অনুদান দিয়েছে। যখন সারা দেশ পুলওয়ামা হামলায় নিহত ৪০ জন ভারতীয় সেনার জন্য শোক পালন করছিল, তখন কেউ পাকিস্তান থেকে আসা তহবিল উপভোগ করছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে, কেন পুলওয়ামা হামলার সঠিক তদন্ত করা হয়নি এবং এখনও কোনও অপরাধী ধরা পড়েনি।’’
কংগ্রেসের তরফে কোনও রাজনৈতিক দলের নামোল্লেখ করা না হলেও সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ মনে করেন, বিজেপি সরকারকে নিশানা করেই ওই পোস্ট করেছে কংগ্রেস। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল বাড়ে।
পুলওয়ামা হামলার পরেই হাব পাওয়ার কোম্পানির নির্বাচনী বন্ড কেনার ঘটনা নিছকই কাকতালীয় নয় বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে কি এই অনুদান ছিন বিজেপির জন্য?
তবে কারা নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা অনুদান পেয়েছে, তা প্রকাশ্যে এলেও কে কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। তাই পুরো বিষয়টিই ছিল প্রশ্ন এবং জল্পনার স্তরে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে যখন জলঘোলা হতে শুরু হয়েছে, তখন তড়িঘড়ি এক্স হ্যান্ডলে এসে বিবৃতি জারি করে ওই পাক সংস্থা ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ বা ‘হাবকো’।
‘হাবকো’ এক্সে জানায়, ভারতে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়ার সঙ্গে তাদের সংস্থার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই অনুদান অন্য কেউ দিয়েছে। ভারতে তাদের কোনও ব্যবসায়িক শাখা নেই বলেও স্পষ্ট করে হাবকো। যে ভাবে তাদের নাম ভারতের নির্বাচনী বন্ডের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে বলেও বিবৃতিতে জানায় পাক সংস্থা।
এর পর প্রশ্ন ওঠে, তা হলে ওই নামে কে নির্বাচনী বন্ড কিনে ভারতীয় রাজনৈতিক দলে অনুদান দিল?
আরও তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ নামে ভারতেও একটি সংস্থা রয়েছে।
দেখা যায়, পাক সংস্থার সমনামী ওই ভারতীয় সংস্থার দফতর দিল্লিতে। যদিও তাদের কোনও পাকিস্তানি যোগ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ দীপাবলির আলো, রিচার্জেবল বাল্ব-সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের পাইকারি বিক্রেতা। সংস্থার বার্ষিক আয় ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা।
গুড্স অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি)-এর পোর্টাল অনুযায়ী, দিল্লির ‘হাব পাওয়ার কোম্পানি’ রবি মেহরা নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন। ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর সেই সংস্থা শুরু হয়৷ অফিসের ঠিকানা, দিল্লির গীতা কলোনি।
মনে করা হচ্ছে, ভারতীয় এই সংস্থাই ৯৫ লক্ষ টাকার অনুদান দিয়েছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে। যদিও কোন রাজনৈতিক দলের হাতে সেই অনুদান গিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।