হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ভূতুড়ে ছবি মানেই সবার আগে মনে পড়ে পরিচালক রামগোপাল বর্মার নাম। কিন্তু সত্তরের দশকে বলিপাড়াকে একাধিক হরর ঘরানার ছবি উপহার দিয়েছেন রামসে ব্রাদার্স। ভয়াবহ পরিবেশের সঙ্গে টানটান উত্তেজনা তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তাঁরা।
১৯৮৮ সালের মে মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বীরানা’ ছবিটি। শ্যাম রামসে এবং তুলসী রামসে দু’জনে এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। হরর ঘরানার এই ছবিতে অভিনয় করেন জ্যাসমিন ঘুন্না, হেমন্ত বিরজে এবং কুলভূষণ খরবন্দা।
তবে, ‘বীরানা’ ছবির গল্প সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত নয়। বরং পরিচালক শ্যামের জীবনের ঘটনাই এই ছবিতে ফুটে উঠেছে। ‘প্রেতাত্মা’র উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন শ্যাম। এই ঘটনার প্রভাব শ্যামের জীবনে ছিল বহু বছর।
পাঁচ বছর পর নিজের জীবনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকেই ‘বীরানা’ ছবিটি বানিয়েছেন শ্যাম। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে শ্যাম জানিয়েছিলেন, শুটিং শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে এক ‘প্রেতাত্মা’কে দেখেছিলেন তিনি।
শ্যাম জানান, ১৯৮৩ সালে ‘পুরানা মন্দির’ ছবির শুটিং করতে মহাবালেশ্বর গিয়েছিলেন তিনি। ছবির শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারকাদের সঙ্গে কর্মীদলের সকল সদস্য মুম্বই ফিরে যান।
কর্মীদলের সদস্যরা ফিরে গেলেও মহাবালেশ্বরে থেকে যান শ্যাম। পরবর্তী কয়েকটি ছবির প্লট নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য সেখানেই কয়েক দিন থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বেশ কয়েক দিন মহাবালেশ্বরে থাকার পর মুম্বইয়ে ফিরছিলেন শ্যাম। রাতে সড়কপথে নিজেই গাড়ি ছুটিয়ে মুম্বইয়ের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ মাঝরাস্তায় এক মহিলাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে যান শ্যাম।
আচমকা মহিলাকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে দেন শ্যাম। তাঁর গাড়ি দেখে শ্যামের দিকে এগিয়ে আসেন ওই মহিলা। শ্যাম সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ‘‘ওই মহিলা আমার কাছে লিফ্ট চান। অত রাতে কোনও গাড়ি পাচ্ছেন না বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।’’
মহিলাটি বিপদে পড়েছেন জেনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলে দাবি করেন শ্যাম। মহিলাটিকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিজের গাড়িতে তাঁকে উঠতে বলেন শ্যাম।
শ্যাম জানান, ওই মহিলা গাড়ির পিছনের আসনে না বসে শ্যামের পাশে সামনের আসনে এসে বসেন। তবে গাড়িতে বসার পর মহিলা একদম চুপ করে ছিলেন বলেও দাবি করেন শ্যাম। তা দেখে সন্দেহ হয় তাঁর।
বার বার ওই মহিলার সঙ্গে বার্তালাপ চালানোর চেষ্টা করছিলেন শ্যাম। তা সত্ত্বেও কোনও উত্তর দিচ্ছিলেন না ওই মহিলা। তাঁর দিকে ভাল করে লক্ষ করতেই চমকে ওঠেন শ্যাম।
সাক্ষাৎকারে শ্যাম দাবি করেন, মহিলার পায়ের দিকে লক্ষ করে দেখেন যে তাঁর পা বিপরীত দিকে ঘুরে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে যান শ্যাম।
সজোরে গাড়ির ব্রেক কষেন শ্যাম। ব্রেক কষার সঙ্গে সঙ্গে স্টিয়ারিংয়ের দিকে এগিয়ে যান তিনি। সেই মুহূর্তে পাশে তাকিয়ে দেখেন, মহিলা আর সামনের আসনে বসে নেই।
শ্যাম গাড়ি থামানোর পরেই নাকি দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন ওই মহিলা। তার পর ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে যান তিনি। পুরো ঘটনাটি এত তাড়াতাড়ি ঘটে যে, থতমত খেয়ে যান শ্যাম। তাঁর শরীরের ভিতর দিয়ে বয়ে যায় শীতল স্রোত।
ভয়ে কাঠ হয়ে যান শ্যাম। এমন ভয়ানক ঘটনা তাঁর সঙ্গে ঘটতে পারে তা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। বোধ ফিরে আসার পর আর এক মুহূর্তও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেননি তিনি। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চালু করে দেন শ্যাম।
শ্যাম সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘যখন বুঝতে পারি কী হয়েছে, তখন আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করিনি আমি। গাড়ি চালিয়ে সোজা মুম্বই চলে আসি। রাস্তার মাঝখানে কোথাও গাড়ি দাঁড় করাইনি আমি।’’
শ্যামের দাবি, ‘প্রেতাত্মা’র সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা ভুলতে পারেননি তিনি। নিজে হরর ঘরানার ছবি বানান শ্যাম। তবে, কোনও দিন সত্যিই ‘ভূত’ দেখতে পাবেন তা কল্পনা করেননি তিনি। পরে শ্যাম সিদ্ধান্ত নেন, এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে একটি ছবি বানাবেন।
পাঁচ বছর পর তুলসির সঙ্গে সহ-পরিচালনার মাধ্যমে ‘বীরানা’ ছবির কাজ শুরু করেন তিনি। ৪৫ লক্ষ টাকা বাজেটের এই ছবিটি বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে। দু’কোটি টাকার বেশি উপার্জন করে শ্যামের ছবিটি।
তবে ‘বীরানা’ মুক্তির আগে সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন শ্যাম। সেন্সর বোর্ড নির্দেশ দেয়, বহু দৃশ্য বাদ দিলে তবেই ছবিটি মুক্তি পাবে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, এই ছবি থেকে ৪৯টি দৃশ্য বাদ দেওয়া হয়।
‘বীরানা’ ছবিতে অভিনয় করে জ্যাসমিন রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার পর আর কোনও ছবিতে কাজ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। ইন্ডাস্ট্রি থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান অভিনেত্রী।
বলিপাড়ার একাংশের মতে, ‘বীরানা’ ছবিতে অভিনয়ের পর অন্ধকারজগৎ থেকে হুমকি আসত জ্যাসমিনের কাছে। অনেকে তাঁকে কুপ্রস্তাব দিতেন বলেও শোনা যায়। এ সব থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে মুম্বই ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে বিয়ে করে সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন জ্যাসমিন।
কিন্তু শ্যাম এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, ‘বীরানা’ ছবি মুক্তির পর জ্যাসমিনের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিনেত্রী সিদ্ধান্ত নেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে গিয়ে মায়ের সঙ্গেই বাকি জীবনটা কাটাবেন। তবে আসল সত্য কী, তা এখনও কেউ জানেন না।