আদিবাসী মিছিলের জের। চার ঘণ্টা পরেও যানজট কাটল না মধ্য কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়।
শুক্রবার সকালে এই মিছিলের জেরে ব্যস্ত সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে বেরিয়েই যাত্রীরা দেখেন বাস, গাড়ির চাকা থমকে গিয়েছে।
নিরুপায় হয়ে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। হাওড়া সেতু ধরে এগোতে থাকে জনস্রোত। মূল রাস্তায় এগোতে থাকে মিছিলও।
মিছিলের জেরে ব্রেবোর্ন রোড এবং স্ট্র্যান্ড রোডে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। হাওড়়া সেতুর মুখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রুটের বাস।
অন্য দিকে হাওড়ামুখী বাসগুলি বড়বাজার পর্যন্ত সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। আটকে পড়ে ছোট গাড়ি, মোটরবাইকও।
শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়া সেতুর উপরে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিদের। তাঁদের দাবি, কুড়মি-মাহাতোরা জোর করে তফসিলি জনজাতি (এসটি)-র তকমা পেতে চাইছে। রাজনৈতিক মদতও পাচ্ছে তারা।
এর প্রতিবাদে পথে নেমেছে ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অর্গানাইজেশন্স’ নামে আদিবাসীদের একটি সংগঠন। ধর্মতলা সংলগ্ন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে জনসভার ডাক দেয় সংগঠনটি। ওই সভায় যোগ দিতেই মিছিল করে এগোতে থাকেন সংগঠনের সদস্যেরা।
ব্রেবোর্ন রোড ধরে মিছিল এগোতে থাকে ধর্মতলার দিকে। ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, জায়গায় জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাঁদের খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি।
সপ্তাহের কাজের দিনে, অফিসের ব্যস্ত সময়ে এমন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নিত্যযাত্রীরা। কোনও কোনও যাত্রীর অভিযোগ, মিছিলকারীরা জরুরি প্রয়োজনেও রাস্তা পারাপার করতে দেননি। মরিয়া হয়ে সেই চেষ্টা কেউ করতে গেলে তির-ধনুক নিয়ে তেড়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।
বাসচালক, কন্ডাক্টরদের বক্তব্য, ব্যস্ত সময়ে তাঁদের রুজিরুটি মার খেয়েছে। অনেক যাত্রী বাসে উঠেও নেমে গিয়েছেন। এর খেসারত কে দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
মিছিলকারীদের বক্তব্য, তাঁরা নিজেরাই বঞ্চনার শিকার। তাই বাধ্য হয়ে পথে নামতে হয়েছে তাঁদের। কুড়মিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি আদিবাসী সংগঠনটি ২০০৬ সালের বনাধিকার আইনকে কার্যকর করা, ইউসিসি বিল প্রতিরোধ-সহ একাধিক দাবি তুলেছে।
মিছিলের জেরে শুক্রবার সকাল থেকে যে যানজট শুরু হয়েছিল, বেলা গড়ানোর পরে তা আরও বেড়েছে। উত্তর কলকাতার পর স্তব্ধ হয়েছে মধ্য কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা।
আদিবাসীদের দীর্ঘ মিছিল যত ধর্মতলার দিকে এগোতে থাকে, ততই যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় মধ্য কলকাতার গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, চাঁদনি চক এলাকায়। প্রায় একই পরিস্থিতি তৈরি হয় উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটেও।
সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে জানানো হয়, মিছিলের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। সেগুলি হল গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণী, জওহরলাল নেহরু রোড, রেড রোড, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মেয়ো রোড, ডোরিনা ক্রসিং, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, সিআর অ্যাভিনিউ এবং এসএন ব্যানার্জি রোড।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকে মহাত্মা গান্ধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা ক্রসিং থেকে হাওড়া সেতু। প্রায় চার ঘণ্টা এই পরিস্থিতি চলার পরে কিছুটা স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
তবে ট্র্যাফিক পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অফিসফেরত যাত্রীদের নতুন করে ভোগান্তিতে পড়ার সমস্যা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
হাওড়া থেকে ধর্মতলামুখী গাড়ির গতি কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পেলেও হাওড়ামুখী রাস্তার লেন এখনও কার্যত থমকে রয়েছে। হাওড়া থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউমুখী গাড়িও খুব ধীর গতিতে চলছে।
বিকল্প উপায়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে অনেক যাত্রীই মেট্রোর শরণাপন্ন হন। এর ফলে পাতালরেলেও অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ হাওড়া থেকে লঞ্চে উঠে বাবুঘাট চত্বরে আসেন। কিন্তু সেখান থেকেও বাস পাননি অনেকেই।
ক্ষুব্ধ যাত্রীদের সিংহভাগের বক্তব্য, কী কারণে মিছিল তাঁরা জানেন না। তবে মিছিলকারীদের নিজেদের কথা ভাবার পাশাপাশি আর পাঁচটা মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথাও ভাবা উচিত বলে মত তাঁদের।