রাস্তায় লোকজনের জমায়েত। সকলের হাতে রয়েছে লাঠি। এক নজরে দেখলে মনে হয়, সকলে লাঠি দিয়ে একে অপরের সঙ্গে মারপিট করছেন। কিন্তু এ যে তাঁদের উদ্যাপন। ভারতের লোকগাথাও জড়িয়ে রয়েছে এই ‘বান্নি’ উৎসবের সঙ্গে।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী মালা মল্লেশ্বর স্বামী মন্দির। কুর্নুল জেলার দেভেরাগট্টু এলাকায় এই মন্দিরটি অবস্থিত।
প্রতি বছর বিজয়া দশমীর সময় এই মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করেন।
প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী, নিয়ম মেনে তাঁরা লাঠি নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেন। মিছিলে উপস্থিত সকলেই লাঠি দিয়ে আঘাত করেন একে অপরকে।
বান্নি উৎসবের সঙ্গে জড়িত এই প্রথাকে ‘স্টিক ফাইট’ (লাঠির যুদ্ধ) বলা হয়। কথিত আছে, ভারতের হিংস্রতম উৎসবের মধ্যে এটি অন্যতম।
লোকগাথায় বলা রয়েছে, দেভেরাগট্টু এলাকায় পুরাকালে সাধু-সন্ন্যাসীরা বাস করতেন।
তাঁদের ধ্যানভঙ্গ করতে মর্তে মণি এবং মল্লাসুর নামে দুই রাক্ষস আসে।
শিব শাস্তি হিসাবে রাক্ষস দু’টিকে লাঠি দিয়ে মেরে হত্যা করেন। তাই ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দীর্ঘ কাল ধরে গ্রামবাসীরা প্রাচীন প্রথা মেনে আসছেন।
৮০০ ফুট উঁচু পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রামবাসীরা মল্লেশ্বর স্বামী এবং পার্বতীর মূর্তি নিয়ে মিছিলে বের হয়।
শিব যে হেতু লাঠি দিয়ে মেরে রাক্ষস দু’টিকে হত্যা করেন, তাই সেই পুরনো প্রথা অনুযায়ী, গ্রামবাসীরাও মিছিলে অংশগ্রহণকারী সকলকে নাটকীয় ভাবে লাঠি দিয়ে মারেন।
২০২০ সালে অতিমারির কারণে রাজ্য সরকারের তরফে এই উদ্যাপন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১২০০ পুলিশ মোতায়েনও করা হয়।
কিন্তু পরের বছরেই আবার এই উৎসব চালু হয়। মিছিল চলাকালীন লাঠির আঘাতে প্রায় ৬০ জনের বেশি গুরুতর আহত হন।
এই রক্তপাত হওয়াকেই ভক্তরা পবিত্র মনে করেন। আহতদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
যদিও এই প্রথার উপর ২০০৮ সালেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। তবুও নিয়ম ভেঙে উদ্যাপন হয়ে চলেছে এই ‘বান্নি’ উৎসব।