১৯১০ সাল। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরের বুকে তৈরি হচ্ছে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল। এই রেল টার্মিনালের কাজ চলাকালীন উত্তর-পূর্ব দিকে একটি সাবওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।
তবে, যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য এই স্টেশন ব্যবহৃত হয়নি। বরং, টার্মিনালের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমা রাখতে অথবা অব্যবহৃত রেলের কোচগুলি এই কুঠুরিতে রাখা হত।
পরবর্তীতে, এই কুঠুরির উপর তৈরি করা হয় ম্যানহাটনের বিখ্যাত ওয়ালডর্ফ-অ্যাস্টোরিয়া হোটেল। তখন অবশ্য কুঠুরিটি অব্যবহৃত অবস্থাতেই ছিল।
কুঠুরির ভিতরে দু’টি প্ল্যাটফর্ম ছিল। ৬১ ও ৬৩ নং ট্র্যাক একই প্ল্যাটফর্মের দু’পাশে এবং ৫৩ ও ৫৪ নং ট্র্যাক অন্য প্ল্যাটফর্মের দু’পাশে ছিল।
তবে, এই কুঠুরি নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না। এই ট্র্যাকগুলি দিয়ে বাইরে ছাই নিয়ে যাওয়া হত। আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্টরাও এই কুঠুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে শোনা যায়।
বিভিন্ন সময়ে প্রেসিডেন্টরা এই কুঠুরি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন বলে শোনা যায়। সাধারণত, ৬১ নং ট্র্যাকে একটি ছোট রেলকার তাঁদের ব্যবহারের জন্যই রাখা ছিল।
শুধু সেখানকার রাষ্ট্রপতিরাই নন, আমেরিকার সেনাবাহিনীর জেনারেল জন জে পারশিং ১৯৩৮ সালে এই কুঠুরিতে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকার ৩২তম রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টও এই কুঠুরিটি ব্যবহার করেছিলেন।
তা ছাড়াও আমেরিকার সেনাবাহিনীর নেতা ডগলাস ম্যাকআর্থার ১৯৫১ সালে এক বার এই কুঠুরির ভিতরে গিয়েছিলেন বলেও অনেকে দাবি করেন।
১৯৪৬ সালে আমেরিকার একটি লোকোমোটিভ সংস্থা এই কুঠুরিতেই একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই উপলক্ষে সাধারণ জনগণকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তবে, আমেরিকার রাষ্ট্রপতিরা কেন এই কুঠুরির ভিতর যেতেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, কুঠুরির ভিতরে বেশির ভাগ জায়গাই নোংরা, দেওয়ালে কালি মাখা।
ওই পরিস্থিতিতে কেনই বা রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মীরা কুঠুরির ভিতরে যেতেন! তবে কি কোনও ‘গোপন বৈঠক’ চলত সেখানে?
অনেকের মতে, এই কুঠুরির মধ্যে দিয়ে হোটেলে প্রবেশ করার কোনও গোপন দরজা রয়েছে এবং এ বিষয়ে দেশের নাগরিকরা অবগত নন। তা হলে কি তাঁরা হোটেলের ভিতরে যাওয়ার জন্য এই কুঠুরি ব্যবহার করতেন?
কিন্তু হোটেলের প্রবেশদ্বার থাকা সত্ত্বেও এই গোপন কুঠুরির ভিতর দিয়ে যাওয়ার কারণটাই বা কী? লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কী এমন বিশেষ কাজ করতেন তাঁরা?
কুঠুরিকে ঘিরে প্রশ্ন অনেক, তবে প্রমাণ হিসাবে কোনও নথিপত্র না থাকায় এই সত্য উদ্ঘাটন এখনও সম্ভব হয়নি। ফলে, এই রহস্য রয়ে গিয়েছে কুঠুরির অন্ধকারেই।