গোটা বিশ্বে ৮ থেকে আশি এক নামে চেনে সান্তা ক্লজকে। সকলের বিশ্বাস, প্রতি বছর বড়দিনের সময় উপহারের ডালি নিয়ে, স্লেজ গাড়ি চড়ে উপস্থিত হন সাদা চুল-দাড়ির সান্তা।
ছোটদের মধ্যে সান্তাকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। শিশুমনের সরল বিশ্বাস, সান্তা বড়দিনের আগের রাতে চুপিচুপি এসে তাদের জন্য উপহার রেখে যায়। বিশ্বের নানা প্রান্ত এই সময় সান্তার ছবি, মুখোশ এবং প্রতিকৃতিতে সেজে ওঠে।
কিন্তু কে এই সান্তা ক্লজ? সান্তা কি শিশুমনের কল্পনা, না কি কারও কারও অভিযোগ মোতাবেক বার্বির মতো পুঁজিবাদের তৈরি পুতুল?
অনেকেই মনে করে থাকেন, তুরস্কের খ্রিস্টান বিশপ সেন্ট নিকোলাসের আদলেই তৈরি করা হয়েছে সান্তা ক্লজকে। সান্তার মতোই নিকোলাস ছিলেন দয়ালু প্রকৃতির। নিজের সমস্ত সম্পদ তিনি দরিদ্রদের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
সেই নিকোলাসের প্রকৃত সমাধিস্থলই সম্প্রতি আবিষ্কৃত হল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা দক্ষিণ তুরস্কের একটি প্রাচীন গির্জার তলায় খননকাজ চালাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর সমাধিস্থলের সন্ধান মেলে।
তবে নিকোলাসের সমাধিস্থল ঠিক কোথায় রয়েছে, তা নিয়ে ক’দিন আগে পর্যন্তও নানা বিভ্রান্তি ছিল। কারণ খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে তুরস্কের আন্তোলিয়া প্রদেশে নিকোলাসকে সমাধিস্থ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
নিকোলাসের মৃত্যুর প্রায় ৭০০ বছর পর খবর রটে যায় যে, সমাধি খুঁড়ে তাঁর দেহাবশেষ চুরি করা হয়েছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় বাস্তবের সান্তাক্লজের দেহাবশেষকে, সেই রহস্যের কিনারা হয়নি এখনও।
যে চার্চের তলা থেকে নিকোলাসের আসল সমাধিস্থলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশ দাবি করছেন, সেই চার্চেরই বিশপ ছিলেন নিকোলাস।
চার্চটি তৈরি হয়েছিল গ্রিসে, ৫২০ খ্রিস্টাব্দে। অধুনা তুরস্কে অবস্থিত চার্চটি কোনও অজ্ঞাত কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু চার্চটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল।
গ্রিসের এক ইতিহাস অনুরাগী মানুষ প্রামাণ্য তথ্য তুলে দেখান, তৎকালীন গ্রিসের মাইরায় অবস্থিত চার্চটি ২০০৫ সালে নতুন করে তৈরি করা হয়। নাম দেওয়া হয় ডিমার।
কিন্তু কোথায় গেল নিকোলাসের প্রাচীন সেই সমাধিস্থল? কোনও কোনও ভূবিজ্ঞানীর মতে মধ্যযুগে ভূমধ্যসাগরের জলস্তর বেড়ে গিয়ে ভেঙেচুরে যায় উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত প্রাচীন সেই গির্জা। হারিয়ে যায় নিকোলাসের সমাধিও।
পরে জলস্তর নামলে নিকোলাসের স্মৃতিধন্য চার্চটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। পরে এই ধ্বংসাবশেষের উপরেই গড়ে ওঠে নতুন গির্জা।
অবশেষে গির্জার ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই সন্ধান মেলে নিকোলাসের সমাধিক্ষেত্রটির। প্রাচীন গির্জাটির কিছু অংশ অবশ্য এখনও অবশিষ্ট রয়েছে।
এক প্রত্ন-গবেষক জানান, নিকোলাস গির্জার যে কক্ষে প্রার্থনা করতেন, সেই কক্ষটির মেঝে, দেওয়াল এখনও অক্ষত রয়েছে। সেটিকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে শুধু নিকোলাসের সমাধিক্ষেত্রই নয়, যিশু খ্রিস্টের প্রাচীন একটি মূর্তিও উদ্ধার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
সান্তা ক্লজের মতোই নিকোলাসকে নিয়ে বহু কিংবদন্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তুরস্ক, গ্রিসের নানা প্রান্তে। জনশ্রুতি আছে যে, নিকোলাসের নানা অলৌকিক ক্ষমতা ছিল।
নিকোলাস নাকি বাধ্যতামূলক যৌনপেশার কাজ থেকে সে সময়কার গ্রিক মেয়েদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন। দৈত্যাকৃতির একটি গাছ দেখে মানুষ ভয় পাওয়ায়, চোখের পলকে নাকি সেই গাছকে উধাও করে দিয়েছিলেন।
সান্তা ক্লজের মতোই রহস্যে মোড়া ছিল তাঁর ভিতরে লুকিয়ে থাকা আসল মানুষটা। সেই নিকোলাসের সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় রহস্যের জাল অনেকটাই সরে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।