ব্রিগেডের সভামঞ্চ থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাদের ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রার্থীদের নিয়ে র্যাম্পে হেঁটেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোচবিহার থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে জগদীশচন্দ্র বাসুনিয়াকে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি শাসকদলের প্রার্থী হয়েছিলেন। জগদীশ পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। এ বার বর্তমান এই বিধায়ককে লোকসভায় লড়াই করতে পাঠাল তৃণমূল।
রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইককে অলিপুরদুয়ার আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই নেতা চা বাগানের কর্মী ছিলেন। সেখান থেকে রাজনীতিতে উঠে আসেন। এখন উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ওই আসনে তাঁর উপরই ভরসা রাখল তৃণমূল।
জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন নির্মলচন্দ্র রায়। গত বছর উপনির্বাচনে জিতে তিনি বিধায়ক হন। পেশায় অধ্যাপক নির্মলকে এ বার লোকসভায় টিকিট দিলেন মমতা।
অবসরপ্রাপ্ত আমলা গোপাল লামাকে দার্জিলিংয়ে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক ছিলেন তিনি। জিটিএর পর্যটন দফতরের তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গোর্খা না হলেও দার্জিলিংয়ের সঙ্গে গোপালের মাটির সম্পর্ক।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। পরে দল বদল করে তৃণমূলে যান। এ বার রায়গঞ্জ আসনে দলবদলু বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। রাজনীতিতে আসার আগে কৃষ্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন।
বিধায়ক বিপ্লব মিত্রকে বালুরঘাট আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করবেন। পেশায় আইনজীবী ছিলেন বিপ্লব। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মালদহ উত্তর আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পুলিশে থাকাকালীন রায়গঞ্জ রেঞ্জের ডিআইজি পদে ছিলেন। মালদহের পুলিশ সুপারের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি।
মালদহ দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শাহনাওয়াজ আলি রেহান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের গবেষক ছিলেন তিনি। সাংবাদিক হিসাবেও কিছু দিন কাজ করেন শাহনাওয়াজ।
জঙ্গিপুর আসনে খলিলুর রহমানকে আবার টিকিট দিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। আবার তাঁর উপর আস্থা রাখল দল।
ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে বহরমপুর আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ক্রিকেটে ‘অলরাউন্ডার’ হিসাবে তিনি পরিচিত। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন তিনি। এ বার তাঁকেই কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মুখোমুখি দাঁড় করালেন মমতা।
আবু তাহের খান মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনের প্রার্থী হয়েছেন। এর আগেও ওই আসনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে ভাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আবু তাহের।
বার বার শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। তাঁর সাংসদ পদও খারিজ করা হয়েছে। তবুও তাঁকেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল। তাঁর নাম প্রার্থী হিসাবে আগেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেই মতো কৃষ্ণনগর থেকে মহুয়া মৈত্রকে আবার টিকিট দিল তৃণমূল।
সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন তিনি। দলবদলু বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে রানাঘাট আসন থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে টিকিট পেলেন।
ইনিও দল বদল করেছেন। বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেন। বনগাঁ আসনে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ওই আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর।
তিনি অভিনেতা, নেতা ও মন্ত্রীও বটে। ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁকে এ বার টিকিট দিলেন না মমতা।
দমদম আসনে আবার সৌগত রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এর আগেও তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন অধ্যাপক। বর্ষীয়ান ওই নেতাকে আবার বেছে নিল শাসকদল।
গত বারের মতো এ বারও বারাসাত আসনে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পেশায় চিকিৎসক কাকলি এর আগে জিতে সাংসদ হয়েছেন। আবার তাঁকে সংসদে পাঠানোর জন্য প্রার্থী করল তাঁর দল।
বসিরহাট আসনে প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাঁর পরিবর্তে এ বার ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম।
জয়নগরে পুরনো মুখের উপর ভরসা রেখেছে তৃণমূল। সেখানে আবার প্রার্থী হয়েছেন প্রতিমা মণ্ডল। এর আগে তিনি জিতে সাংসদ হয়েছিলেন।
মথুরাপুর আসনে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে তৃণমূল। সেখানে প্রার্থী হয়েছেন বাপি হালদার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন তিনি। গত বছর সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি হন বাপি।
ডায়মন্ডহারবার আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ওই আসনে দু’বার জয়ী হয়েছেন তিনি।
সাংসদপদ ছেড়ে দিয়েছেন মিমি চক্রবর্তী। তাঁর জায়গায় যাদবপুরে আরেক অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সায়নী যুব তৃণমূলের সভানেত্রী পদে কাজ করেছেন।
দক্ষিণ কলকাতায় আবার মালা রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ওই আসনে বেশ কয়েক বারের সাংসদ তিনি। আবার তিনি ঘাসফুলের টিকিট পেলেন।
তাঁকে নিয়ে দিন কয়েক আগে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তাঁকে টিকিট দিল তৃণমূল। কলকাতা উত্তর আসনে আবার প্রার্থী হলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়া লোকসভা আসনে প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার টিকিট দিল তৃণমূল। ওই আসন থেকে এর আগে জিতে তিনি সাংসদ হয়েছেন।
উলুবেড়িয়া আসন থেকে সাজদা আহমেদকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এর আগেও তিনি ওই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আবার তাঁর উপর ভরসা রাখল দল।
শ্রীরামপুর লোকসভা আসনে পুনরায় টিকিট পেলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় আইনজীবী কল্যাণকে আবার ওই আসনের জন্য প্রার্থী করল তাঁর দল।
হুগলি আসনে বড় চমক দিয়েছে তৃণমূল। ওই আসনে তাদের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-র করে তিনি বহুল প্রচারিত। কয়েক দিন আগে ওই শোতে অংশও নিয়েছেন মমতা। তার পরেই তাঁর রাজনীতিতে যোগ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। অবশেষে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রচনাকে প্রার্থী করল তৃণমূল।
আরামবাগ আসনে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে তৃণমূল। ওই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মিতালি বাগ। সামাজিক কর্মী হিসাবে তিনি ওই এলাকায় পরিচিত।
তমলুক আসনে তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ওই আসনে বিজেপির হয়ে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় লড়তে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবাংশুকে আসরে নামালেন অভিষেক।
কাঁথি লোকসভা আসনে বিধায়ক উত্তম বারিককে টিকিট দিল তৃণমূল। স্থানীয় নেতা হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এলাকায় উত্তমকেই হাতিয়ার করেছেন মমতা।
ঘাটাল আসনে আবার প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা দেব। ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত বদল করেন। বিজেপির অভিনেতা প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আবার ময়দানে দেখা যাবে দেবকে।
ঝাড়গ্রাম আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে কালীপদ সোরেনকে। আদিবাসী এই নেতাকে জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বেছে নিয়েছে তৃণমূল।
মেদিনীপুরের তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া। মেদিনীপুরের বিধায়ক তিনি। এ বার তাঁকে লোকসভার টিকিট দিল দল।
পুরুলিয়া আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শান্তিরাম মাহাতো। তিনি এখন বলরামপুরের বিধায়ক। সেখান থেকে তুলে শান্তিরামকে লোকসভায় সুযোগ দিচ্ছে তৃণমূল।
অরূপ চক্রবর্তীকে বাঁকুড়ায় প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ওই আসনে নতুন মুখকে নিয়ে এসেছে ঘাসফুল শিবির।
স্বামী তখন জেলে। লড়াই করে নিজের স্বামীকে জিয়েছিলেন। পরে দলবদল। সেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ। এখন আবার লড়াই করতে নামবেন তিনি। এ বার বিষ্ণুপুরে সেই সুজাতা মণ্ডলকে প্রার্থী করল তৃণমূল।
বর্ধমান পূর্ব আসনে নতুন মুখ নিয়ে এসেছেন মমতা। ওই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে শর্মিলা সরকারকে। শর্মিলা পেশায় চিকিৎসক। এ বার তিনি রাজনীতির ময়দানে।
ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ক্রিকেট ছেড়ে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছেন তিনি। এ বার তাঁকে নিজেদের দলে টেনে প্রার্থী করল তৃণমূল।
আসানসোলে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা। উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে জিতে আসেন তিনি। আবার তাঁর উপর ভরসা রাখল দল।
বোলপুর আসনে দলের বিধায়ককে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অসিতকুমার মাল।
গত বারের মতো এ বারও বীরভূম আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। এর আগে এখানেই জিতে তিনি সাংসদ হয়েছিলেন।
রবিবার এই ৪২ জনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছেন অভিষেক। সাত জন বিদায়ী সাংসদকে এ বার টিকিট দেওয়া হয়নি। অন্য দিকে, নতুন মুখের পাশাপাশি টিকিট পেয়েছেন অনেক বিধায়কও। ১২ জন মহিলা প্রার্থী হয়েছেন।