পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক কিছুই লুকিয়ে থাকে যা আবিষ্কারের পর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ববাসী। মাটির গভীর অন্ধকার থেকে এমনই এক অজানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।সেই ‘ডেলয়েড রটিফার’ নিয়ে অনবরত গবেষণা করছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। গবেষণার ফলে বহু না জানা তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
গবেষণার মাধ্যমে লক্ষ করা গিয়েছে যে, হিমাঙ্কের অনেক নীচের তাপমাত্রাতেও ডেলয়েড রটিফার বেঁচে থাকতে পারে। হাতেনাতে তার প্রমাণও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
রাশিয়ার সুদূর উত্তরে ইয়াকুতিয়া নামে একটি জায়গায় গবেষণা করছিলেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। সেখানকার আালাজ়েয়া নদীর মাটি থেকে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ডেলয়েড রটিফার নামে এক অদ্ভুত প্রাণীর।
ডেলয়েড রটিফারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে, তারা ভয়ঙ্কর পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই প্রাণীটিকে পরীক্ষা করার জন্য রাখা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, বরফের মধ্যে ভয়ঙ্কর ঠান্ডায় ডেলয়েড রটিফার টানা দশ বছর বেঁচেছিল।
রটিফারের উপর গবেষণা নিয়ে পরবর্তী ধাপেও গিয়েছিলেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। ঠিক কতটা প্রতিকূল পরিবেশে এই প্রাণীটি বেঁচে থাকে তা পরখ করে দেখতে চাইছিলেন তাঁরা।
সাইবেরিয়ার বরফের পুরু আস্তরণের নীচে ১১ ফুট ভিতর থেকে ডেলয়েড রটিফারের সন্ধান পাওয়া যায়। এই পরিবেশেও ডেলয়েডগুলি বহাল তবিয়তে বেঁচে ছিল।
ডেলয়েড রটিফারের সঙ্গে নেমাটোড এবং রাউন্ডওয়ার্মও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ৩.৫ মিটার তলায় জীবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ডেলয়েড রটিফার।
গবেষণা করে দেখা যায়, ডেলয়েড রটিফারের বয়স ২৩ হাজার ৯৬০ থেকে ২৪ হাজার ৪৮৫ বছরের মধ্যে।
ডেলয়েড রটিফারের দেহের আকার যতটা ক্ষুদ্র, সেই তুলনায় তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি জটিল।
ডেলয়েড রটিফার একটি বহুকোষী প্রাণী। দেহের আকার কয়েক মাইক্রোমিটার হলেও দেহে মস্তিষ্ক, মুখমণ্ডল, পাকস্থলী, মাংসপেশি এমনকি জননতন্ত্রও উপস্থিত।
সাধারণত, আর্দ্র পরিবেশে ডেলয়েড রটিফারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। জলজ পরিবেশ ছাড়াও গাছের ডালে খোঁজ পাওয়া যায় ডেলয়েড রটিফারের।
কোষের ভিতর কোনও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিজে থেকেই তা সারিয়ে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে ডেলয়েড রটিফারের। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে রটিফার এই অসাধ্যসাধন করে তা এখনও অজানা।
অযৌন জনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের বংশবৃদ্ধি করে ডেলয়েড রটিফার।
এমনকি, ডেলয়েড রটিফারকে মহাকাশেও পাঠানো হয়েছে। সেখানকার পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে কি না, তা নিয়েও পরীক্ষা চলছে। তবে, এই অণুজীবের অনেক বৈশিষ্ট্যই এখনও রহস্যে মোড়া। তারা আর কী কী অসাধ্যসাধন করতে পারে তা-ই দেখার।