বড় শহরগুলিতে প্রতি দিন হাজির হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বাড়ছে জনসংখ্যা আর কমছে থাকার জায়গা। এক চিলতে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে হিমসিম অবস্থা। কারও রাত কাটছে পথে। কিন্তু পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিচ্ছে জাপান। করে ফেলেছে বিশেষ ব্যবস্থা। সেই ‘ব্যবস্থা’ দেখে অবশ্য ভয় পাচ্ছেন অনেকেই।
জাপানে এখন জনসংখ্যা ১২ কোটি ৫৭ লক্ষেরও বেশি। সীমিত জমিতে এত লোককে ঠাঁই দিতে ক্রমেই ছোট হয়েছে আশ্রয়। এক কামরার ফ্ল্যাটে সংসার পেতেছে শহরবাসী।
সেই এক কামরার ফ্ল্যাটও ক্রমে ছোট হয়েছে। জাপানের রাজধানী টোকিয়োতে আক্ষরিক অর্থেই এক চিলতে ফ্ল্যাটে সংসার পাতছে নগরবাসী। সম্প্রতি সেই ফ্ল্যাটের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন এক ব্যক্তি। থাকা তো দূর, যা দেখেই দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়!
নর্ম নাকামুরা নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘টোকিয়ো লেনস’-এ সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। ইউটিউবে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রায় ন’লক্ষ।
তিন কোনা সেই বাড়ি রয়েছে টোকিয়োয়। দুই রাস্তার সংযোগস্থলে। মেরেকেটে একটা গাড়ি পার্ক করা যায়, এতটুকু জমিতে তৈরি করা হয়েছে আস্ত সেই বাড়ি।
এক ঝলক দেখলে মনে হতে পারে একটা প্রাচীর খাড়া রয়েছে। ভিতরে হয়তো একটা লোকও থাকতে পারবেন না।
কিন্তু ওই বাড়িতেই বাস কয়েকটি পরিবারের। কোনও মতে অনুমতি নিয়ে সেই আবাসনে ঢুকেছিলেন নর্ম। তার পর ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন ভিতরের ছবি।
নর্ম ভিতরে ঢুকে দেখেন এক চিলতে সেই ফ্ল্যাটে রয়েছে বেশ কয়েকটি তল। একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। আবাসনের ভিতরে ঢুকে নর্মকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জাপানে ছোট আবাসন ভূরি ভূরি। কিন্তু এত ছোট দেখিনি কখনও।’’
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, আবাসনের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে জুতো খোলার জায়গা পর্যন্ত নেই। এর পর আবাসনের শৌচালয়ের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন নর্ম। সেখানে দেখা গিয়েছে, একটি মানুষ কোনও মতে দাঁড়িয়ে স্নান করতে পারেন। তার বেশি এক চিলতে জায়গাও নেই।
শৌচালয়ের এক কোণে আবার একটি বাথটবও রয়েছে। তবে সেখানে শুয়ে স্নান সম্ভব নয়। বসে স্নান করতে হবে।
ফ্ল্যাটের ঘরের দৈর্ঘ্য ৮.২ ফুট। চওড়া তার থেকেও কম। ফ্ল্যাটের মধ্যে ঘরগুলিকে আলাদা করা হয়েছে ইটের দেওয়াল দিয়ে। যদিও নর্ম টোকা দিয়ে দেখেন, সেগুলি আসল ইটের তৈরি নয়। বরং স্পঞ্জের ইটের। তার উপর ওয়ালপেপার লাগানো হয়েছে।
নর্মের দাবি, এই আবাসনে থাকার সব থেকে বড় অসুবিধা হল শব্দ। দুই রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত। সে কারণে দিন-রাত গাড়ির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায় বাসিন্দাদের।
সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, টোকিয়োর সর্বত্রই এই সমস্যা। শব্দের জন্য কোনও আবাসনে রাতে শান্তিতে ঘুমানো যায় না।
নর্ম জানিয়েছেন, টোকিয়ো শহরে যত ছোট ফ্ল্যাটই হোক না কেন, ভাড়া প্রচুর। তবে এই ফ্ল্যাটের ভাড়া ততটাও বেশি নয়। মাসে এই ফ্ল্যাটের ভাড়া ৪০ হাজার জাপানিজ় ইয়েন। ভারতীয় মুদ্রায় যা ২২ হাজার টাকার সামান্য বেশি।
নর্ম যে ফ্ল্যাটটির ভিডিয়ো তুলেছেন, সেটিতে আপাতত কেউ থাকেন না। তবে ওই আবাসনের বাকি সব ফ্ল্যাটেই লোক থাকেন। ইতিমধ্যে ভিডিয়োটি দেখেছেন ৩৩ লক্ষ জন।
ভিডিয়ো দেখে কয়েক জন ব্যবহারকারী বলেছেন, এত ছোট ফ্ল্যাটে থাকলে মানসিক অবসাদ আসতে বাধ্য। অনেকেই আবার জানিয়েছেন, একা যদি বা থাকা যায়, সপরিবারে এখানে থাকা অসম্ভব।