একটি কুকুরের দিকে এগিয়ে আসছে একাধিক অতিকায় বাঘ। ওজন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কেজির কাছাকাছি। কুকুরের ঘাড়ের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে যাচ্ছে সে। এই বুঝি কামড় বসাল কুকুরের ঘাড়ে। কিন্তু এ কী! কামড়ানোর বদলে কুকুরটিকে আদর করতে শুরু করল বাঘটি।
কিন্তু বাঘটি কাছে যেতেই বিরক্ত হয়ে গর্জে উঠল কুকুরটি। সেই ডাকে বাঘের ‘হালুম’ও জব্দ হয়ে গেল। চিনের একটি চিড়িয়াখানার দৃশ্য এটি। সেখানে একটি বাঘের খাঁচার মধ্যে দিব্যি হেঁটেচলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে একটি কুকুরকে।
কিন্তু আক্রমণ করার বদলে বাঘগুলি কুকুরটির দিকে আদুরে ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল কেন? গলা জড়িয়ে মাথাও ঘষতে দেখা গিয়েছে তাদের।
চিড়িয়াখানার এক কর্মী জানান, এই কুকুরটিকে ‘মা’ মনে করে বাঘগুলি। এ কী করে সম্ভব?
চিনের এক চিড়িয়াখানায় এই ছ’টি বাঘের জন্ম দিয়েছিল এক বাঘিনী।
জন্ম দেওয়ার পরেই বাঘের ছানাগুলিকে ফেলে পালিয়ে যায় তাদের মা।
ব্যাঘ্রশাবকগুলির প্রাণ বাঁচানো নিয়ে চিন্তায় ঘুম উড়ে যায় চিড়িয়াখানার কর্মীদের। মায়ের দুধ না খেলে যে তাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠবে। তবে কি সদ্যোজাত শাবকগুলি মায়ের যত্নের অভাবে মারা যাবে?
চিড়িয়াখানার কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন, যত দিন এই শাবকগুলি বড় না হয়, তত দিন পর্যন্ত একটি কুকুরের কাছে বড় হবে তারা।
পরিকল্পনা ছিল, বাঘগুলি পরিণত বয়সের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেললেই কুকুরটিকে খাঁচার ভিতর থেকে সরিয়ে ফেলবেন তারা। মাংসের স্বাদ পেয়ে বাঘগুলি যদি কুকুরটিকে মেরে ফেলে! সেই ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না তাঁরা।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির একটি কুকুরকে খাঁচার ভিতরে রেখে দিলেন তাঁরা।
গোল্ডেন রিট্রিভারটির কাছেই বড় হয়ে উঠেছে বাঘগুলি। শাবকগুলিকে যত্নে লালন পালন করেছিল সেই কুকুর মা।
বাঘগুলি পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে খাঁচা থেকে কুকুরটিকে বার করে দেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
যদি কুকুরটিকে বাঘগুলি খেয়ে ফেলে, সেই ভয়েই কুকুরটিকে খাঁচা থেকে সরিয়ে ফেলেন তাঁরা।
কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। কুকুরটিকে সরিয়ে দেওয়ার পর বাঘগুলি বিমর্ষ হয়ে পড়ে।
বেশির ভাগ সময় মনখারাপ করেই বসে থাকত বাঘগুলি। পরীক্ষা করার জন্য আবার কুকুরটিকে খাঁচার মধ্যে পাঠিয়ে দেন কর্মীরা।
সঙ্গে সঙ্গে মনবদল! ‘মায়ের’ দেখা পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় বাঘগুলি।
বাঘগুলির কাছে রক্তের চেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ বেশি। গোল্ডেন রিট্রিভারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বাঁধন দেখে তেমনটাই বলছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।