চিনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে হাজার হাজার স্কুল। কারণ পড়ুয়াই নেই। জনসংখ্যার বিপুল হারে কমছে পড়শি দেশে। জন্মহারে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে সারা দেশে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নামীদামি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলি।
সম্প্রতি চিনের সরকারি প্রতিবেদনেই এই উদ্বেগ উল্লেখ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
চিনের শিক্ষা মন্ত্রকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্টের উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে সেদেশে ১৪ হাজার ৮০৮টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নেই কোনও পড়ুয়া। তাই বাধ্য হয়ে তালা ঝোলাতে হয়েছে স্কুলগুলিতে।
প্রতিবেদন অনুসারে চিনের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৭৪ হাজার। গত বছরে কিন্ডারগার্টেনের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষতে এসে ঠেকেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা তিন বছর ধরে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১১.৫৫ শতাংশ বা ৫০ লক্ষের বেশি পড়ুয়া কমে গিয়েছে।
২০২৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও কমেছে ৫৬৪৫ টি । প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫০০ –এ। গত বছরের তুলনায় যা ৩.৮ শতাংশ কমেছে।
সেই চিত্রটি সম্পূর্ণ পাল্টে যায় কোভিড মহামারি আসার পর থেকেই। কোভিড থাবা বসানোর পর সারা বিশ্বে স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি চিনও। ২০২০ পর থেকেই উল্লেখযোগ্যভাবে চিনের প্রাথমিক শিক্ষায় পড়ুয়া সংখ্যায় টানা হ্রাস পেয়েছে বলে সরকারি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই তুলনায় কোভিড পরবর্তী সময়ে চিনের তুলনায় ভারতের অবস্থান বেশ উপরের দিকেই ছিল বলে জানা গিয়েছে। ভারতীয় নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে চিনের তুলনায় ৫ গুণ বেশি রয়েছে ভারতীয় স্কুলের সংখ্যা।
২০২০ সালে চিনে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার। চিনের মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ওই বছর বেসরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থী নথিভুক্ত হয়েছিল ৫ কোটি ৫৬ লক্ষ।
কিন্ডার গার্টেন ও প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল চিনে জনসংখ্যার বিপুল হ্রাস। ২০২২ -২৩ এই দু’বছর চিনের জনসংখ্যা টানা কমেছে। চিনের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪০ কোটি।
এই এক বছরে চিনে মাত্র ৯০ লাখ শিশু জন্ম নথিভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের পর এটিই সর্বনিম্ন বলে ধরা হয়েছে।
জন্মহার হ্রাসের ফলস্বরূপ, চীন গত বছর সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা হারিয়েছে।
চিনে নবজাতকের সংখ্যা কমার প্রধান কারণ হল চিনা দম্পতিদের মধ্যে সম্তান না হওয়ার অনীহা। সন্তান লালনপালন নিয়ে নাগরিকদের মনোভাব ও সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়ের কারণ অনুসন্ধানে ৩০ হাজার মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
জনসংখ্যা হ্রাস নিয়ে একদিকে যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জিন পিং সরকার, তেমনই আরও একটি সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে ড্রাগনের দেশ। বৃদ্ধ বয়সের জনসংখ্যাও তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যুগ্ম সঙ্কট মোকাবিলা করাই চিন প্রশাসনের কাছে মাথাব্যথার কারণ।
চীনের ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৩০ কোটির মিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে সরকারি রিপোর্টে প্রকাশ। অনুমান অনুসারে এটি ২০৩৫ সালের মধ্যে ৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছবে বলে অনুমান করছে সেদেশের সংবাদসংস্থাগুলি।
সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া রিপোর্ট বলছে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিন্ডারগার্টেনগুলিকে প্রবীণ নাগরিকদের আশ্রয় কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের কর্মীরাও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার নিজেদের চাকরি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চিনের এই জনসংখ্যা সংকটের জন্য একসময়ে বহুল চর্চিত ‘একসন্তান নীতি’কে দায়ী করা হচ্ছে। এটি ২০১৬ সালে তুলে দেওয়া হয়েছিল।