কোন ট্রেন সর্বাধিক দ্রুতগামী, উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নতুন কোন ট্রেন গতিতে টেক্কা দেবে পূর্বসূরিকে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। থাকে কৌতূহলও।
কিন্তু জানেন কি, ভারতের মন্থরতম ট্রেন কোনটি? কোন পথে চলে এই ট্রেন? এই ট্রেনে চাপতে গেলে যেতে হবে তামিলনাড়ু।
সিমলার টয় ট্রেনের মতোই দেখতে এই ট্রেন চলে সে রাজ্যের মেট্টুপালায়ম থেকে উটি পর্যন্ত। ট্রেনটির নাম নীলগিরি প্যাসেঞ্জার।
ট্রেনটি যাত্রাপথে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় নেয় পাঁচ ঘণ্টা।
ট্রেনটি গোটা যাত্রাপথে প্রতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিবেগে যায়। পর্বতসঙ্কুল পথ দিয়ে যাওয়ার কারণে ট্রেনটি যথাসম্ভব কম গতিবেগে যায়। দেশের সর্বাধিক গতিসম্পন্ন ট্রেনের তুলনায় নীলগিরি প্যাসেঞ্জার ১৬ গুণ কম গতিতে যায়।
তবে অরণ্য এবং পর্বতে ঘেরা যে অঞ্চল দিয়ে ট্রেনটি যায়, তার নৈসর্গিক শোভা অসাধারণ। মূলত সেই কারণেই এই ট্রেনে চড়েন যাত্রীরা।
ট্রেনটির গতি এবং যাত্রাপথের বিশিষ্টতার কথা মাথায় রেখে ইউনেস্কো নীলগিরি প্যাসেঞ্জারকে তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত করেছে। এর আগে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে তথা বাঙালির প্রিয় টয় ট্রেনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত করেছিল ইউনেস্কো।
ভারতের সর্বাধিক ধীর গতির ট্রেন সম্পর্কে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে ব্রিটিশ আমলেই তৈরি হয়। প্রথমে ১৮৫৪ সালে এই ট্রেনটি চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া, উঁচু-নীচু ভূপ্রকৃতি প্রভৃতি কারণে রেলপথ স্থাপনের কাজে বিলম্ব হয়। শেষমেশ ১৮৯১ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯০৮ সালে।
ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট থেকে এ-ও জানা যাচ্ছে যে, নীলগিরি প্যাসেঞ্জার তার যাত্রাপথে ৩২৬ মিটার থেকে ২,২০৩ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই বন্ধুর পথে ট্রেনটিকে চালানো সম্ভব হচ্ছে।
রেলের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি-র তরফে জানা গিয়েছে, ট্রেনটি মাত্র ৪৬ কিলোমিটার যাত্রাপথে ১০০টিরও বেশি সুড়ঙ্গ অতিক্রম করে। চারদিকে পাহাড়, চা-বাগান, গহন অরণ্য যাত্রীদের কাছে ট্রেনযাত্রাকে বিশেষ উপভোগ্য করে তোলে।
যাত্রীদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেট্টুপালায়ম থেকে কুন্নুর পর্যন্ত যাত্রাপথটি সবচেয়ে আকর্ষক, রেলপথের এই অংশেই আছে পাহাড়ি ঝোরা, লম্বা চা-বাগিচা, যা নীলগিরি পর্বতের অপরূপ শোভাকে যাত্রীদের সামনে তুলে ধরে।
ট্রেনটি প্রতি দিনই মেট্টুপালায়ম থেকে উটি পর্যন্ত চলাচল করে। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে সেটি মেট্টুপালায়ম স্টেশন থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টায় উটি স্টেশনে পৌঁছয়।
আবার উটি স্টেশন থেকে দুপুর ২টোয় ছেড়ে মেট্টুপালায়মে বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে পৌঁছয়।
যাত্রাপথে ট্রেনটি মোট পাঁচটি স্টেশনে থামে। সেগুলি হল কুন্নুর, ওয়েলিংটন, আরাভানকাড়ু, কেট্টি এবং লোভেডালে।
ট্রেনটি মূলত তিন কামরার, তবে ২০১৬ সালের পর যাত্রীসংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চতুর্থ কামরা যুক্ত করা হয়েছে।
ট্রেনটিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা আছে। প্রথম শ্রেণিতে গদিওয়ালা আসন থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের কাঠের আসনে বসতে হয়।
আইআরসিটিসি-র ওয়েবসাইটে গিয়ে ট্রেনটির আসন সংরক্ষণ করতে হয়। তবে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ছুটির মরসুমে এবং সপ্তাহান্তে যাত্রীদের বিপুল চাপ সামাল দিতে হয় নীলগিরি প্যাসেঞ্জারকে।
চড়তে চান দেশের সবচেয়ে ধীর গতির ট্রেনে? তবে চটপট আসন সংরক্ষণ করে ফেলুন।