ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের শ্বশুরবাড়ির ‘পাড়া’য় তাঁর বাড়ি। শ্বশুরমশাই ইনফোসিস প্রধান নারায়ণ মূর্তির মতো তিনিও এক শিল্পপতি। নারায়ণ মূর্তি ভারতের ধনকুবেরদের অন্যতম। তবে ইনি সম্পত্তির হিসাবে তাঁকেও টেক্কা দেন।
ভারতের অন্যতম ধনী অধ্যুষিত শহর বেঙ্গালুরু। সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতীয় ধনীদের একটি তালিকার তথ্য অনুযায়ী দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের তৃতীয় ধনী অধ্যুষিত শহর এটি। ১০০ জন ধনকুবেরের বাস এই শহরে। ইনফোসিসের প্রধান নারায়ণ মূর্তিও এখানে থাকেন। থাকেন উইপ্রোর প্রতিষ্ঠাতা আরও এক ধনকুবের আজিম প্রেমজিও। তবে এঁর সম্পদ এবং অর্থ এঁদেরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
এই শহরে থাকেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় বায়ো ফার্মাসিউটিকাল সংস্থা বায়োকনের প্রতিষ্ঠাতাও। তাঁর নাম কিরণ মজুমদার শ। এই শিল্পপতি তাঁকেও টেক্কা দিয়েছেন।
বস্তুত, বেঙ্গালুরু শহরে থাকা দেশের ১০০ বিলিওনেয়র বা ধনকুবেরদের (যাঁদের সম্পত্তি অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের) প্রত্যেককেই সম্পত্তির হিসাবে পিছনে ফেলে দিয়েছেন এই শিল্পপতি।
নাম অর্জুন মেন্ডা। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা হলেও এঁর কলকাতা যোগ আছে।
তবে এই শিল্পপতির বিষয়ে জানার আগে জেনে নেওয়া যাক ওই ধনীতালিকার ব্যাপারে। গত অক্টোবরেই প্রকাশ্যে এসেছে ভারতীয় ধনীদের হিসাব দেওয়া ওই তালিকাটি।
তাতে দেশের সমস্ত ধনীর পাশাপাশি দেশের বাইরে থাকা ধনীদেরও হিসাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি রয়েছে শহরভিত্তিক ধনীদের হিসাবও। দেশের মোট ৩৬০ জনের ওই ধনী তালিকা থেকে জানা গিয়েছে নতুন নতুন তথ্য।
ওই তালিকা অনুযায়ী দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ধনী ধনকুবের মুকেশ অম্বানী। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রধানের সম্পত্তির পরিমাণ ৮,০৮,৭০০ কোটি টাকা। গত এক বছরে তাঁর সম্পত্তি বেড়েছে ২ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শিল্পপতি এবং ধনকুবের গৌতম আদানি এবং তাঁর পরিবার। তবে আদানির সম্পত্তি গত এক বছরে মারাত্মক হারে কমেছে। বর্তমানে তিনি এবং তাঁর পরিবার ৪,৭৪,৮০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। গত এক বছরে ৫৭ শতাংশ কমেছে আদানির সম্পত্তি। উল্লেখ্য, এই পর্বেই আদানির বিরুদ্ধে শেয়ারের দাম বেআইনি ভাবে বাড়িয়ে রাখার অভিযোগ এনেছিল হিন্ডেনবার্গ নামের এক সংস্থার রিপোর্ট।
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান সাইরাস এস পুনাওয়ালা এবং তাঁর পরিবার। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২,৭৮,৫০০ কোটি টাকা।
চতুর্থ স্থানে রয়েছেন এইচসিএল প্রতিষ্ঠাতা শিব নাদার এবং তাঁর পরিবার। তাঁর সম্পত্তি ২,২৮,৯০০ কোটি টাকার।
পঞ্চম স্থানে প্রবাসী ভারতীয় শিল্পপতি তথা হিন্দুজা গ্রুপের প্রধান গোপীচাঁদ হিন্দুজা এবং তাঁর পরিবার। ১,৭৬,৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে হিন্দুজাদের।
ওই তালিকায় দেশের কোন কোন শহরে ধনীদের বাস সবচেয়ে বেশি তারও একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ধনী অধ্যুষিত শহরের সেই তালিকায় সেরার স্থানটি ছিনিয়ে নিয়েছে মুম্বই। দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী থাকেন এই শহরেই। হিসাব বলছে মোট ৩২৮ জন ধনীর বাস এই শহরে।
১৯৯ জন ধনীর শহর হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নয়াদিল্লি। আর তৃতীয় স্থানেই বেঙ্গালুরুর নাম। কলকাতা রয়েছে সপ্তম স্থানে। বাংলার এই শহরে বসবাসকারী ধনীদের সংখ্যা ৫১ জন।
তথ্য বলছে, গত এক বছরে দেশে ধনকুবেরদের সংখ্যা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। প্রতি তিন সপ্তাহে দু’জন নতুন ধনকুবের তৈরি হয়েছে ভারতে।
অর্জুন মেন্ডা অবশ্য নতুন ধনকুবের নন। তিনি আরএমজেড কর্পের তিন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে অন্যতম এবং ওই সংস্থার গ্রুপ চেয়ারম্যানও। বাকি দুই প্রতিষ্ঠাতা তাঁরই দুই সন্তান রাজ মেন্ডা এবং মনোজ মেন্ডা।
আরএমজেড একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থা। ২০০২ সালে এই সংস্থাটি তৈরি করেন অর্জুন। তার পর থেকে দেশ জুড়ে দ্রুত বিস্তার করেছে তাঁর সাম্রাজ্য। ২১ বছর পর আরএমজেডে এখন ১৫০০০ কর্মী কাজ করেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে অর্জুনের সংস্থা এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় ‘লিড’ শংসাপত্র পাওয়া সংস্থা। এই শংসাপত্র তাঁদেরই দেওয়া হয়, যারা প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যূনতম ক্ষতি সাধন করে নির্মাণকাজ চালায়।
অর্জুনের জন্ম স্বাধীনতা পূর্বের অবিভক্ত ভারতের সিন্ধে। যা এখন পাকিস্তানে। ১৯৩৩ সালে সিন্ধের শিখরপুরে জন্ম অর্জুনের। দেশভাগ তাঁর জীবন বদলে দেয়। পাকিস্তান থেকে শিকড় উপড়ে তাঁর পরিবার চলে আসে চেন্নাইয়ে।
চেন্নাইয়ে অর্জুনদের পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছিল অনেকটাই। নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হচ্ছিল তাদের। তবে তা সত্ত্বেও অর্জুনের বাবা-মা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করেননি।
চেন্নাই থেকে বাংলার আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনা করতে এসেছিলেন অর্জুন। ভাল ছাত্র হওয়ায় স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। তার পরে অবশ্য আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
ছোটবেলাতেই অর্থনৈতিক কষ্টের আঁচ পেয়েছিলেন। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরে দরিদ্র ছাত্রদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন অর্জুন। তৈরি করেন মেন্ডা ফাউন্ডেশন। সেই সংস্থা প্রতি বছর অন্তত ৭০০ ছাত্রকে স্কলারশিপ দেয়।
এর পাশাপাশি গ্রামেগঞ্জে সাক্ষরতার একটি প্রকল্পও চালায় অর্জুনের সংস্থা। তবে সেখানে পড়ানো হয় ইচ্ছুক বয়স্কদের।
এই অর্জুন এখন হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। যেখানে ইনফোসিসের প্রধান নারায়ণ মূর্তির সম্পত্তি ৩৫ হাজার কোটি, উইপ্রো প্রধান আজিমের ৩০ হাজার কোটি এবং বায়োকন প্রতিষ্ঠাতার মালিক কিরণ মজুমদার ১৭ হাজার কোটি টাকার মালিক, সেখানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।