গনগনে গরমে আপাতত এসিরই জয়জয়কার। এই প্রবল দাবদাহে সে-ই ‘দু’দণ্ড শান্তি’ দেওয়া ‘বনলতা সেন’। এক এবং একমাত্র রক্ষাকর্তা।
বৈশাখের আগেই ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে পারদ। অথচ গ্রীষ্মের এই সবে শুরু।
আপাতত সামনে গরমের মাস দু’টি। তবে সে হল খাতায়কলমে। দীর্ঘায়িত গ্রীষ্ম চলবে তার পরেও। যত দিন না শীত আসছে তত দিন।
স্বাভাবিক নিয়মেই এ সময়ে এসি কেনার তাগিদ বাড়ে। গরমের কথা মাখায় রেখে বিভিন্ন সংস্থা এসি কেনার জন্য নানারকম ছাড় দিতে শুরু করে এই সময়ে। কিন্তু এসি কিনে স্বস্তি পেতে গিয়ে মাসের খরচ একধাক্কায় বাড়িয়ে ফেলাও তো কাজের কথা নয়।
এসি মানেই বাড়তি খরচ, চড়া বিদ্যুতের বিল। এমন একটা চালু ধারণা রয়েছে। আর সেই ধারণা খুব ভুলও নয়।
কিছু নিয়ম না জানা থাকলে বাতানুকূল যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ বোঝা মনে হতেই পারে। তবে এই সব নিয়ম জানলে এসি শুধুই আরামদায়ক।
কখন এসি চালাবেন, কী দেখে কিনবেন, কোন বাতানুকূল যন্ত্র কেমন ঘরের জন্য উপযুক্ত, তা আগে থেকে জেনে নিলেই সব দিক সামলানো সম্ভব।
প্রথমেই ঠিক করতে হবে কী ধরনের এসি কিনবেন—জানলায় লাগানোর উইন্ডো এসি? নাকি স্প্লিট এসি।
সাধারণত জানলায় লাগানো এসির রক্ষণাবেক্ষণ কম। দামও কম। অন্য দিকে স্প্লিট এসির দাম বেশি হলেও সুবিধা অনেক বেশি।
এসি কেনার আগে এনার্জি রেটিং দেখে নেওয়া জরুরি। রেটিং অন্তত তিন না হলে কেনা উচিত নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তিনের কম রেটিং থাকলে এসির দাম হয়তো কম হবে, কিন্তু ভবিষ্যতে পকেটে বড় কামড় থেকে বাঁচাবে।
এসিতে সাধারণত দু’রকম কয়েল ব্যবহার করা হয়। তামার কয়েল, না হলে অ্যালুমিনিয়াম কয়েল। কেনার সময় তামার কয়েল রয়েছে এমন এসিই কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, তামার কয়েলে ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া হয় দ্রুত। তা ছাড়া এই কয়েলের রক্ষণাবেক্ষণেরও বিশেষ প্রয়োজন হয় না।
কত বড় ঘরে এসি লাগানো হচ্ছে, তার ওপরও নির্ভর করে কী ধরনের এসি কিনবেন। ১৪০ থেকে ১৫০ বর্গফুটের ঘরে এক টন ওজনের এসি যথেষ্ট। তবে তার চেয়ে বড় ঘরে এসির সংখ্যা অথবা ওজন বৃদ্ধি করতে হবে।
এসি কত টনের, সেই হিসাব সাধারণত করা হয় এক টন বরফ গলাতে ২৪ ঘণ্টায় কতটা তাপমাত্রা প্রয়োজন তার ভিত্তিতে। সাধারণত ১৮০ বর্গফুটের ঘরে অন্তত দেড় টনের এসি প্রয়োজন।
অনেক সংস্থাই ইদানীং স্মার্ট এসি বাজারে এনেছে। এই ধরনের এসির দামও বেশি। তবে সাধারণত এই সব বৈশিষ্ট্য সব ধরনের ক্রেতার কাজে লাগে না।
এসিতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যাতে মোবাইলের সাহায্যে এসিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে প্রয়োজন না থাকলে অতিরিক্ত দাম দিয়ে স্মার্ট এসি না কেনাই ভাল। তাতে খরচও বাঁচবে।
এসিতে থার্মোস্ট্যাট এবং একাধিক ব্লোয়ার আছে কি না তা-ও দেখে নেওয়া জরুরি। এর সুবিধা হল, এসির ফ্যানের দ্রুততা কমানো- বাড়ানো যায়। বিদ্যুতের খরচও বাঁচানো যায়।
কিছু কিছু এসিতে বিশেষ ফিল্টার দেওয়া থাকে। গন্ধরোধক, ব্যাক্টেরিয়ারোধক এমন অনেক ফিল্টারই রয়েছে, যার দৌলতে দাম বেড়ে যায় এসির। প্রয়োজন না থাকলে এমন ফিল্টার ছাড়াই কিনতে পারেন এসি।
ইনভার্টার এসি অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এতে এক দিকে যেমন বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, তেমনই এসি ভালও থাকে বেশি দিন। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমে।
বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কত তলায় এসির ব্যবহার হবে তার ওপরও নির্ভর করে কী ধরনের এসি বাছবেন। ঘরে যদি বেশি রোদ আসে বা ঘরটি যদি হয় বহুতলের উপরের দিক থেকে পাঁচ তলার মধ্যে হয়, তবে ঘরের আয়তন অনুযায়ী যত টনের এসি দরকার, তার থেকে ০.৫ টন বাড়িয়ে নেওয়া উচিত।