ফিল্মি পরিচয় না থাকলে নাকি বলিউডে পা রাখা যায় না। আর তার পরও যাঁরা বি টাউনে নিজের পায়ে দাঁড়ান, তাঁদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। ঠিক যেমনটা করতে হয়েছে অভিনেতা ড্যানিকে। সত্তরের দশকে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই অভিনেতা। একের পর এক সিনেমায় তাক লাগিয়েছেন সিকিমের এই যুবক। কিন্তু রুপোলি পর্দায় পা রাখার আগে তাঁকে অনেক অপমান সইতে হয়েছিল।
১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সিকিমের ইউকসমে জন্ম ড্যানির। তাঁর আসল নাম থেরিং পিন্টসো ডেনজোংপা। ড্যানি নামটি দেন অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। তার পর থেকে ড্যানি হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
ভারতীয় সেনায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন ড্যানি। কিন্তু পরে পুণেতে ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’-তে ভর্তি হন। সেই সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন জয়া। তাঁর পরামর্শেই নিজের নাম পাল্টান অভিনেতা।
এর পর থেকেই বলিউডে পা রাখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ড্যানি। অভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ জন্য যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁকে।
তখন অভিনয়ের একটা সুযোগের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন ড্যানি। মুম্বইয়ের জুহু এলাকায় হাঁটছিলেন। সেখানে বাংলো বানাতে জমি কিনেছিলেন বলিউডের নামী তারকারা। ওই এলাকাতেই জমি কিনে তখন বাংলো বানিয়েছিলেন প্রযোজক মোহন কুমার।
মোহন কুমার প্রসঙ্গে তখন অনেক কথা শুনেছিলেন ড্যানি। এক দিন, মোহনের বাংলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি।
ভেবেছিলেন, এক বার যদি মোহনের সঙ্গে দেখা হয়, তা হলে তাঁর অভিনয়-ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মোহনের বাংলোয় ঢুকলেন তিনি।
মোহনের বাংলোয় যাঁরা নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন, তাঁরা ছিলেন সিকিম এবং নেপালের বাসিন্দা। মোহনের বাংলোয় ঢুকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগও পেয়ে যান ড্যানি।
তখন একাধিক ছবি প্রযোজনা এবং পরিচালনা করছেন মোহন। সেই সময় তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল। ফলে মোহনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরে অনেক আশা ছিল ড্যানির।
কিন্তু জীবনটা বোধহয় এতটাও সহজ নয়। মোহনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ধাক্কা খেতে হল ড্যানিকে। মোহনের কাছে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন ড্যানি।
ড্যানির এই কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠেন মোহন। শুধু হাসিই নয়। ড্যানিকে নিয়ে বিদ্রুপও করেন প্রযোজক।
অভিনেতার বদলে তাঁর বাংলোয় নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে ড্যানিকে কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন মোহন। এই কথায় অপমানিত হন ড্যানি। তবে এই অপমানই যেন ড্যানিকে নতুন দিশা দেখায়।
মোহনের কথা শুনে মনে মনে ড্যানি প্রতিজ্ঞা করেন যে, এক দিন তিনি এই অপমানের জবাব দেবেন। মোহনের বাংলোর পাশেই খালি জমি পড়েছিল। ড্যানি প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন যে, এক দিন মোহনের বাংলোর পাশেই নিজের বাংলো গড়বেন।
সেই ঘটনার পর আরব সাগরে অনেক জল গড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্যও বদলেছে ড্যানির। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় ‘জরুরত’ ছবি। সেই ছবির হাত ধরেই বলিউডে পা রাখেন ড্যানি।
১৯৭১ সালেই মুক্তি পায় গুলজ়ারের ‘মেরে আপনে’। এই ছবির হাত ধরে প্রথম সাফল্যের স্বাদ পান ড্যানি। তার পর যত দিন গড়িয়েছে, একের পর এক ছবিতে রাজ করেছেন তিনি। হিন্দির পাশাপাশি বাংলা, তামিল, নেপালি ছবিতেও অভিনয় করেছেন ড্যানি।
অভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা পান ড্যানি। কিন্তু অতীতে মোহনের সেই অপমান ভোলেননি। নিজের প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে সেই জমি কেনেন ড্যানি। তার পর তৈরি করেন বাংলো। আর এ ভাবেই মোহনের অপমানের জবাব দিয়েছিলেন ড্যানি।