রিয়্যালিটি শো টেলিভিশনের এক অন্যতম অংশ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শোয়ের বিজয়ী কিছু দিন পরেই প্রচারের আলো থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। রিয়্যালিটি শো জেতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের পেশাগত জীবনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন এঁরা।
এঁদের মধ্যে অনেক টেলি-বিজয়ী সুনাম করেছেন বলিউডেও। দেখে নিন, কয়েক জন তারকাকে যাঁরা রিয়্যালিটি শো জেতার পর বলিউডে নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন।
আয়ুষ্মান খুরানা- আয়ুষ্মানের জন্ম পঞ্জাবে। ১৭ বছর বয়সে একটি টিভি শোয়ে অংশ নেন তিনি। ২০০৪-এ ‘এমটিভি রোডিজ’-এ অংশ নেন এবং সেটির বিজেতা হন। এই জয়ের পর তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভিকি ডোনর’ তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বলিউডে পা দেওয়ার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে তাঁর ফিল্মোগ্রাফি যে রূপ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির বৈচিত্র অন্য অভিনেতাদের কাছে যে ঈর্ষণীয়।
নোরা ফতেহি- বলিউডের অন্যতম পরিচিত মুখ নোরা। নাচের জন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাত। নাচের রিয়্যালিটি শো ‘ঝলক দিখলা যা’-এ তাঁকে প্রথম দেখা যায়। এ ছাড়াও ‘বিগ বস’-এর নবম সংস্করণেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘রোর: টাইগার্স অব দ্য সুন্দরবন’। হিন্দির পাশাপাশি অনেক তামিল, তেলুগু ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। নেটমাধ্যমে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রচুর।
সানি লিওনে- আমেরিকার নাগরিক হয়েও সানি বলিউডে বেশ পরিচিত মুখ। প্রাক্তন এই পর্ন তারকা ‘বিগ বস’-এর পঞ্চম সংস্করণে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম অভিনেত্রী যাঁকে ‘বিগ বস’ চলাকালীনই সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মহেশ ভট্টের ‘জিসম ২’ ছবিতে সানিকে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায়। এর পর তাঁকে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। বেশ কিছু আইটেম গানেও নাচতে দেখা যায় তাঁকে।
রণবিজয় সিংহ- টেলিভিশন জগতের অন্যতম পরিচিত নাম। তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও প্রচুর। এঁদের বেশির ভাগই মহিলা। ২০০৩ সালে ‘এমটিভি রোডিজ’-এর প্রথম মরসুমের বিজেতা তিনি। এর পর এই শোয়রই সঞ্চালক হিসেবে বহু বার দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘লন্ডন ড্রিমস’, ‘অ্যাকশন রিপ্লে’ ছাড়াও বেশ কিছু সিনেমাতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
প্রাচী দেশাই- ‘কসক সে’ নামক একটি টেলিভিশন শোয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর কেরিয়ারে সূত্রপাত। ২০০৭-এ ‘ঝলক দিখলা যা’-এ অংশগ্রহণ করেন এবং জয়ী হন। ২০০৮-এ ‘রক অন’ ছবিতে তাঁর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। ‘রক অন’ ছাড়াও ‘বোল বচ্চন’, ‘এক ভিলেন’, ‘আজহার’ ইত্যাদি আরও ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
গুরবানি জাজ- চণ্ডীগড়ের মেয়ে গুরবানি, ‘বানি জে’ নামেই বেশি পরিচিত। ২০০৭-এ ‘এমটিভি রোডিজ’-এর চতুর্থ মরসুমের রানার আপ বানি। ওই বছরই ‘আপ কা সুরুর’ সিনেমাতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়। তিনি তাঁর ফিটনেস এবং ট্যাটুর জন্য বেশ বিখ্যাত।
মেইয়াং চ্যাং- বলিউড ইন্ডাস্ট্রি এবং টেলিভিশেনর পরিচিত মুখ চ্যাং। ২০০৬ সালে গানের রিয়্যালিটি শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন। ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘ভারত’, ‘বদমাশ কোম্পানি’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি সিনেমাতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গাইতে পারেন চ্যাং। কেরিয়ারে শুরুতে গায়ক হিসেবেই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন তিনি।
শেহনাজ গিল- পঞ্জাবি অভিনেত্রী শেহনাজ ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। কেরিয়ারের শুরুর দিকে তাঁকে বিভিন্ন গানের ভিডিয়োতে দেখা যেত। কিন্তু তিনি প্রচারের আলোতে আসেন ‘বিগ বস’-এর তেরোতম সংস্করণে অংশগ্রহণ করার পর। তাঁর এবং সিদ্ধার্থ শুক্লর জুটি দর্শকের বেশ পছন্দ হয়।
গওহর খান- বলিউডের আরও এক পরিচিত মুখ। ‘রকেট সিং’ সিনেমাতে তাঁকে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায়। যদিও সিনেমাটি বক্স অফিসে আশাপ্রদ ফল করতে পারেনি। এ ছাড়াও ‘ইশাকজাদে’, ‘গেম’, ‘ফিভার’, ‘বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া’ ইত্যাদি ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এর সপ্তম সংস্করণে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেই সংস্করণের বিজেতাও হন গওহর। এই রিয়্যালিটি শো তাঁর কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।
ঋত্বিক ধনজানি- রিয়্যালিটি শোয়ের সুবাদে ঋত্বিক ধনজানি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত মুখ। টেলিভিশনের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত। কেরিয়ারের প্রথম দিকে তাঁকে বেশ কয়েকটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু তাঁর কেরিয়ার গতি পায় ‘নাচ বলিয়ে’র ষষ্ঠ সংস্করণের পর। সেখানে তিনি তাঁর প্রেমিকা আশা নেগির সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই সংস্করণের বিজেতাও ঋত্বিক-আশা জুটি।