বড়দের নিয়েই এই সব হোটেলের করবার। ছোটদের এমন হোটেলের গণ্ডি পেরোনোও বারণ।
পোশাকি নাম ‘অ্যাডাল্ট ওনলি হোটেল’। বিদেশে এমন হোটেলের রমরমা বহু দিন থেকেই। তবে ভারতে সম্প্রতি এর বোলবোলাও শুরু হয়েছে।
একটি দু’টি করে ইতিমধ্যেই দেশে পাঁচ-ছ’টি হোটেলে তৈরি হয়েছে, যারা অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে ‘অ্যাডাল্ট ওনলি’ নীতি নিয়েছে।
এই সমস্ত হোটেলে শিশুদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। অতিথিদের সর্বনিম্ন বয়সসীমাও স্পষ্ট বেঁধে দেওয়া আছে। কোথাও ১৮ বছরের কমবয়সিরা ঢুকতে পারেন না, তো কোথাও ন্যূনতম বয়স হতে হয় ১৪ বছরের বেশি।
হোটেল হোক বা রিসর্ট— এই ধরনের নীতি থাকলে তার খরচ অনেকটাই বেশি। তবে একই সঙ্গে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও অঢেল।
মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রেও অনেক সময় বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া থাকে এই সব হোটেলে। বিশেষ করে যে সমস্ত হোটেলে ১৮ বছরের কমবয়সি কিশোরদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ মনোরঞ্জনের পরিষেবা থেকে তাদের দূরে রাখা হয়।
এই ধরনের প্রত্যেকটি হোটেল বা রিসর্টেরই বিশেষত্ব হল, এগুলি জনবহুল এলাকা থেকে দূরে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃতির খুব কাছাকাছি এগুলির অবস্থান।
নৈসর্গিক শোভা রয়েছে এমন এলাকাতেই তৈরি হয়েছে ভারতের অ্যাডাল্ট ওনলি হোটেলগুলি।
গোয়াতেই আছে এই ধরনের হোটেল। নাম— দ্য পার্ক। গোয়ার বাগা নদীর তীরে একপ্রস্ত সবুজালির মধ্যে এই হোটেলে ১৮ বছরের নীচে অতিথিদের প্রবেশ নিষেধ। সদ্যবিবাহিত দম্পতি বা অবিবাহিত যুগলদের জন্য নানা মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা রয়েছে এই হোটেলে।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশেষ স্পা, দম্পতিদের একসঙ্গে যোগাসনের পাঠ, সুইমিং পুলে ভেসে একান্তে প্রাতঃরাশ, এমন বহু বিলাসিতারই ব্যবস্থা করে গোয়ার ‘দ্য পার্ক’।
উত্তরাখণ্ডের বড়দের হোটেলের নাম ‘আনন্দ ইন দ্য হিমালয়াজ’। হৃষীকেশের এই হোটেলে ১৪ বছরের কমবয়সিদের ঢোকার অনুমতি নেই। বড়দের স্বাস্থ্যোদ্ধারের হরেক কিসিমের প্যাকেজের ব্যবস্থা রয়েছে এই হোটেলে। আছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, এমনকি, সন্ন্যাসীদের সঙ্গলাভের সুযোগ। আর মানসিক শান্তির গ্যারান্টি।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আনন্দের মূল লক্ষ্য হল অতিথিদের মানসিক আনন্দ এবং শান্তি দেওয়া। ছোটদের এই হোটেলে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার মূল কারণ সেটিই। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সিরা হোটেলে থাকলেও বিশেষ মনোরঞ্জন বা স্বাস্থ্যোদ্ধার প্যাকেজে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় না তাদের।
কর্নাটকের তামারা কুর্গও এই ধরনের হোটেল। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই হোটেলের অতিথিরা জঙ্গলকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারেন। জঙ্গলের পথে ট্রেকিং থেকে শুরু করে, জঙ্গলের সবুজে ঘেরা এলাকায় দম্পতির একসঙ্গে স্নান, খোলা আকাশের নীচে, সবুজে ঘেরা এলাকায় একসঙ্গে আহারেরও ব্যবস্থা আছে দম্পতিদের জন্য।
বয়স ১২ বছরের কম হলে এই হোটেলে প্রবেশ করা যায় না। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি অতিথিদের থাকার আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে এই হোটেলে। জঙ্গল এলাকায় ছোটদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ওই নিয়ম রাখা হয়েছে।
আলমোরার বড়দের হোটেলের নাম বাৎস্যায়ন। কামসূত্রের লেখকের নামে রিসর্টে খাতায়কলমে ‘বড়’রাই প্রবেশ করতে পারেন। হিমালয়ের কোলে দারুণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে এই হোটেল আসলে একটি বুটিক রিসর্ট।
বাৎস্যায়ন রিসর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একজন দম্পতির একান্তে ভাল সময় কাটানোর জন্য যা দরকার তেমন পরিষেবারই জোগান রয়েছে এখানে।
আসলে এই ধরনের হোটেল রিসর্টের মূল লক্ষ্য হল বড়দের একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া। দিনভর ব্যস্ততা, অফিসের কাজের চাপ সামলে অনেককেই বাড়ি ফিরে সন্তানদের পিছনে বাকি অবসরটুকু কাটিয়ে দিতে হয়। সেই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয় ‘অ্যাডাল্টস ওনলি’ হোটেল।
ছোটরা হয়তো খুবই আদুরে। তাদের নিয়ে সময়ও কেটে যায়। কিন্তু অনেক সময় তাদের পিছনে দৌড়তে গিয়ে নিজেদের রসায়ন ভুলতে বসেন বহু দম্পতি। এই হোটেলগুলি অর্থের বিনিময়ে সেই ভুলে যাওয়া স্মৃতি তাজা করার সুযোগ করে দেয়।