১৯৭৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর। আমেরিকার ইভান্সভিল বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়েছিল ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব ইভান্সভিল’-এর বাস্কেটবল দল। গন্তব্য টেনেসি। কিন্তু ভাগ্যের করুণ পরিহাসে তারা কখনই টেনেসি পৌঁছয়নি।
৭০-এর দশকে ইভান্সভিলের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে বাস্কেটবল দল ‘দ্য পার্পল এস’। পুরো শহরকে যেন চুম্বক দিয়ে আটকে রেখেছিল এই দল।
দক্ষিণ-পশ্চিম ইন্ডিয়ানার স্কুলে মোট আড়াই হাজার ছাত্র-ছাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় ছিল বাস্কেটবল দলের ওই ক’জনই।
বিমানটি উড়ান শুরু করার কিছু ক্ষণ পরেই একটি পাহাড়ের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা ২৯ জনের প্রত্যেকেই নিহত হন ওই দুর্ঘটনায়।
তদন্তে উঠে আসে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝ আকাশে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ানা ফ্লাইট ২১৬ বিমানটি।
বিমান দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর সবার আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশের সাংবাদিক প্যাট্রিক ওয়াথেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি মৃতদেহগুলি দেখতে পান। মৃতদেহগুলি এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে, কোনটা কার মৃতদেহ ছিল তা বোঝার উপায় ছিল না।
বাস্কেটবল দলের ব্যাগ দেখতে পেয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে ইভান্সভিলের প্রিয় বাস্কেটবল দল ছিল ওই বিমানে।
মৃতদেহগুলি শহরে পৌঁছতেই সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে।
১৯৭৭-৭৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইভান্সভিলের বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড়রা টেল সিটি, ইন্ডিয়ানা, গোল্ডসবোরো এবং নর্থ ক্যারোলিনার মতো জায়গা থেকে ছিল। এদের প্রত্যেকেই মারা গিয়েছিল। দলে থাকা গ্রেগ স্মিথের আবার এটিই প্রথম বিমানযাত্রা ছিল।
মৃতদের বেশির ভাগকেই তাঁদের নিজের নিজের বাড়ির কাছে সমাধিস্থ করা হয়। মাইক ডাফ এবং কেভিন কিংস্টনকে সমাধিস্থ করা হয় তাঁরা যেখানে খেলার প্রশিক্ষণ নিতেন সেখানে।
কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এর পর ঘটে আর এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ইভান্সভিল দলের একমাত্র সদস্য ডেভিড ফুর ওই দিন রাতে বিমানে চাপেনি। গোড়ালিতে চোট লাগায় শেষ মুহূর্তে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়।
বন্ধুদের মৃতদেহগুলি দেখে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে মনমরা থাকতে ডেভিড। সে-ই ছিল পার্পল এস বাস্কেটবল দলের এক মাত্র জীবিত সদস্য।
তার সৌভাগ্য নিয়ে তখন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদনও লেখা হয়। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, এই বিমান দুর্ঘটনার ঠিক দু’সপ্তাহ পর এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় পার্পল এস বাস্কেটবল দলের এক মাত্র জীবিত সদস্য ডেভিড। একই দুর্ঘটনায় মারা যায় তার ছোট ভাইও।
নিহত খেলোয়াড়দের স্মৃতিতে ইভান্সভিল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এই স্মৃতিসৌধের নাম ‘উইপিং বাস্কেটবল’।
এই স্মৃতিসৌধে পাথরের স্ল্যাবগুলিতে ডেভিড-সহ নিহত খেলোয়াড়দের নাম খোদাই করা আছে। প্রতিটি বিশেষ অনুষ্ঠানে এই স্মৃতিসৌধে সম্মান জানানো হয়।