চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়েই এগোয় জীবনের পথ। সে পথে অনেক সময়ই নানা বাধাবিপত্তি প্রাচীর তোলে। সেই ঝড়ঝাপটা সামলে যাঁরা লক্ষ্যভেদ করতে পারেন, তাঁরাই তো ‘বাজিগর’। ঠিক এমনটাই করে দেখিয়েছেন ভারতীয় উদ্যোগপতি সন্দীপ আগরওয়াল।
নিজের জোরে ২টি ‘ইউনিকর্ন’ সংস্থা (ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা যে সব সংস্থার অর্থমূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি হয়, তাদের এই ‘ইউনিকর্ন’ সংস্থা বলা হয়) তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একটি সংস্থা তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল।
জীবনে যেমন সাফল্য পেয়েছেন সন্দীপ, তেমনই বার বার উথালপাথাল হয়েছে তাঁর জীবন। কখনও আমেরিকায় গ্রেফতার হয়েছেন। আবার কখনও তাঁর ব্যক্তিজীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছে।
তবে যতই প্রতিবন্ধকতা তাঁকে ঘিরে ধরুক না কেন, তাঁর জীবন থেমে থাকেনি। বরং সব সামলে আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন।
২টি ইউনিকর্ন সংস্থা গড়েছিলেন সন্দীপ। যে সংস্থাগুলির অর্থমূল্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি (বর্তমান যার বাজারমূল্য ৮২০০ কোটি টাকা)।
২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের বাড়িতে একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন সন্দীপ। যা অন্যতম ইউনিকর্ন সংস্থা ছিল।
এত সাফল্যের পরও ব্যবসায়িক দুনিয়ায় নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল সন্দীপকে। ২০১৩ সালে আচমকাই সন্দীপের জীবন ওলটপালট হয়ে যায়।
ওই বছরের জুলাই মাসে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছিলেন সন্দীপ। সেই সময় আমেরিকায় ফেডেরাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ‘ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের’। আমেরিকায় একটি সংস্থায় যখন কাজ করতেন সন্দীপ, সেই সময়ই ওই অভিযোগ ওঠে। উদ্যোগপতি হিসাবে পথচলা শুরুর আগে ‘রিসার্চ অ্যানালিস্ট’ হিসাবে কাজ করতেন সন্দীপ। সেই সময় একাধিক সংস্থায় কাজ করেছিলেন তিনি।
সন্দীপের গ্রেফতারির পর তাঁর জীবন এক লহমায় বদলে যায়। জেলেও দিনযাপন করতে হয় তাঁকে। শেষমেশ সংস্থার সিইও পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় সন্দীপকে।
২০১৪ সালের অগস্ট মাসে ভারতে আসার অনুমতি পান সন্দীপ। ২০২০ সালে মামলা থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সন্দীপ। তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদালত। তবে এই পরিস্থিতির কারণে তাঁর সংস্থা হাতছাড়া হয়ে যায়।
এক দিকে জেলযাত্রা, সংস্থাকে হারানোর যন্ত্রণা, সেই সঙ্গে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ— সব মিলিয়ে তখন সন্দীপের জীবনে নানা ঝড় বয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি।
আরও একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন সন্দীপ। ওই সংস্থার হাত ধরে ১ বছরের মধ্যে ১৬ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেন তিনি। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক ১৩৭ কোটি টাকার বেশি। ৩ বছরে ওই অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ মিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা।
তাঁর সংস্থা ফুলেফেঁপে উঠছিল, কিন্তু সেই সময়ই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। তবে সেই বিচ্ছেদের আঁচ নিজের কাজে প্রভাব ফেলতে দেননি।
তাঁর দ্বিতীয় সংস্থাও ইউনিকর্নের তকমা পায়। ধীরে ধীরে নতুন করে নিজের ঘরও সাজান সন্দীপ। দ্বিতীয় বার বিয়ে সারেন তিনি।
বর্তমানে তাঁর যে সংস্থা রয়েছে, সেটি ভারত এবং অন্য দেশে পুরনো গাড়ি, বাইক, স্কুটার বিক্রি করে। ওই সংস্থার অর্থমূল্য প্রায় ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ৮ হাজার কোটি টাকার অর্থমূল্যের যে সংস্থাকে হারিয়েছিলেন সন্দীপ, পরে তার থেকেও বেশি মূল্যের সংস্থা তৈরি করেন সন্দীপ। আর এ ভাবেই ঘুরে দাঁড়ান এই উদ্যোগপতি।