‘পাঠান’ ছবির হাত ধরে চার বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ খান। বলিউড বাদশার এই রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পর ছবিটি নিয়ে চর্চা যেন থামতেই চাইছে না।
মুক্তির পর প্রথম ৬ দিনে বক্স অফিসে একাধিক নজির গড়ে ফেলেছে ‘পাঠান’। দলে দলে এই ছবি দেখতে হল ভরাচ্ছেন দর্শক। প্রথম ৬ দিনে বিশ্ব জুড়ে ‘পাঠান’ ছাপিয়ে গিয়েছে ৬০০ কোটির গণ্ডি।
গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। যশরাজ ফিল্মসের স্পাই ইউনিভার্সের চতুর্থ ছবি ‘পাঠান’ ইতিমধ্যে ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত সফল ছবিগুলির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। প্রথম ৬ দিনে এই বিপুল পরিমাণ ব্যবসার নজির আর কোনও ভারতীয় ছবির নেই।
দেশে শুধু নয়, দেশের বাইরেও ‘পাঠান’-এর সাফল্যের ঘোড়া ছুটে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বিদেশে মোট ২৫০০টি প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি মুক্তি পেয়েছে। শাহরুখকে দেখতে সে সব হলেও ঝুলছে ‘হাউসফুল’ বোর্ড।
আদ্যোপান্ত অ্যাকশন ছবি ‘পাঠান’। শাহরুখ ছাড়াও এই ছবিতে দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহামদের অ্যাকশন নজর কেড়েছে। ছবিতে কয়েক মিনিটের ক্যামিয়ো চরিত্রে হাজির হয়েছিলেন সলমন খানও।
কিন্তু তারকাখচিত এই অ্যাকশন প্রধান ছবির চিত্রনাট্যে থেকে গিয়েছে বড়সড় তিনটি গলদ। হলে বসে ‘পাঠান’ দেখার সময় ভুলগুলি চোখ এড়িয়ে গেলেও ভাল করে দেখতে বসলে সহজেই তা চোখে পড়ে।
‘পাঠান’-এর চিত্রনাট্য এবং পরিকল্পনায় ৩টি ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন নেটাগরিকরাই। সমাজমাধ্যমে এই ভুলগুলি নিয়ে চর্চা চলছে। অ্যাকশনের দৃশ্য এবং কাহিনিতে মৌলিক এই ভুলগুলি ধরা পড়েছে ‘পাঠান’ মুক্তি পাওয়ার পর।
‘পাঠান’ ছবির একটি দৃশ্যে দীপিকাকে আফগানিস্তানের গল্প শোনাচ্ছিলেন শাহরুখ। তিনি জানান, তিনি ২০০২ সালে আফগানিস্তানে কর্মরত ছিলেন। সে সময় মোবাইলের জিপিএস লোকেশন ব্যবহার করে একটি আফগান গ্রামকে বাঁচিয়েছিলেন ভয়ানক ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে।
কিন্তু নেটাগরিকেরা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। জিপিএস লোকেশন স্মার্টফোনে চালু হয় ২০০৮ সালে। তাই ২০০২ সালের আফগানিস্তানে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব ছিল না।
ছবির দ্বিতীয় ভুল একটি ট্রেনের মধ্যে অ্যাকশনের দৃশ্যে। ট্রেনে রাখা একটি বোমা ফেটে আস্ত কামরা উড়ে যায়। সেখানেই ছিলেন শাহরুখ। তিনি নিজেকে বাঁচান ওই ট্রেনেরই একটি ধাতব টুকরো দিয়ে।
ধাতব টুকরোটি কবচ হিসাবে ব্যবহার করে মাথা ঢেকেছিলেন শাহরুখ। দেখা যায়, বোমা ফেটে আস্ত কামরা উড়ে গেলেও ওই ট্রেনের ধাতব টুকরোতে আঁচ লাগেনি। আঁচ লাগেনি নায়কের শরীরেও। এই দৃশ্যের বাস্তবতা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই।
তৃতীয় ভুলটি চোখে পড়ার মতো। সিনেমা হলে বসেও এই ভুল কারও কারও নজরে আসতে পারে। ভুলটি রয়েছে একটি হেলিকপ্টারের অ্যাকশন দৃশ্যে।
রাশিয়ার উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত দু’টি বহুতল থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি তালা এবং চাবি চুরি করার পরিকল্পনা করেন শাহরুখ এবং দীপিকা। বলা হয়েছিল, বহুতল দু’টি একে অপরের বিপরীত দিকে অবস্থিত।
শাহরুখ এবং দীপিকা দু’জন আলাদা আলাদা ভাবে দু’টি বহুতলে গিয়ে পরিকল্পনামাফিক প্রয়োজনীয় বস্তু চুরি করেন। কিন্তু তার পরের দৃশ্যে ছিল মস্ত গলদ।
বিপরীতমুখী বহুতল থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে মূল গন্তব্যে পৌঁছনোর পরিকল্পনা করেছিলেন শাহরুখ, দীপিকা। সেই অনুযায়ী, বিপরীত দিক থেকে হেলিকপ্টারগুলির একটি কেন্দ্রীয় অবস্থানে আসার কথা ছিল।
কিন্তু দেখা যায়, শাহরুখ এবং দীপিকার হেলিকপ্টার চলেছে একই দিকে। কী ভাবে তা সম্ভব, বুঝে উঠতে পারেননি অনেকেই।
ভুলগুলির জন্য ‘পাঠান’-এর পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দকে দায়ী করছেন অনেকে। অনেকেই ইতিমধ্যে এই ছবিকে ‘অবাস্তব’, ‘অযৌক্তিক’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন।
তবে সাফল্যের নজিরে ‘পাঠান’ ছবির এই সমস্ত গলদ গিয়েছে ঢাকা পড়ে। বড় পর্দায় ৫৭ বছরের শাহরুখের ক্যারিশমা দেখতে গিয়ে ভুলত্রুটিকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ অনুরাগীরা। ছবির অ্যাকশন মন কেড়েছে প্রায় সকলেরই।