সাধারণ পরিবারের ছেলে তিনি। ছোট থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাঁকে। অর্থকষ্টে স্কুলের পড়াশোনা চালাতে পারেননি। কিশোরবেলাতেই বিভিন্ন ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করেছিলেন। সেই শুরু। তার পর সময়ের স্রোতে আর কঠোর পরিশ্রমে সেই তিনিই দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। তাঁর নাম রাজিন্দর গুপ্তা।
১৯৫৯ সালে পঞ্জাবে জন্ম রাজিন্দরের। তাঁর বাবা ছিলেন তুলা ব্যবসায়ী । পরিবারে অর্থাভাব ছিলই। তাই বেশি দূর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি রাজিন্দর।
রাজিন্দরের বয়স তখন ১৪। সেই সময় নবম শ্রেণিতে পড়ছিলেন তিনি। তবে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। নবম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই স্কুল ছাড়তে হয় তাঁকে।
অর্থকষ্ট দূর করতে সেই বয়সেই উপার্জনের দিকে ঝুঁকেছিলেন রাজিন্দর। মোমবাতি তৈরি, সিমেন্টের পাইপ তৈরির মতো কাজে দিনমজুর হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
সেই সময় ওই সব কাজের জন্য তাঁর দৈনিক পারিশ্রমিক ছিল ৩০ টাকা। এই ভাবেই বেশ কয়েক বছর ধরে চলে রাজিন্দরের জীবন।
সাল ১৯৮৫। সে বছরই রাজিন্দরের জীবন বদলাতে শুরু করল। তৈরি করলেন একটি সার কারখানা।
এর পরে ১৯৯১ সালে তৈরি করলেন একটি সুতোর কল। সেই থেকেই একের পর এক ব্যবসায় সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করলেন রাজিন্দর।
পরবর্তী সময়ে বস্ত্র, কাগজ এবং রাসায়নিকের ব্যবসায় সফল হন রাজিন্দর। তৈরি করেন নিজস্ব সংস্থা। পঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশে রয়েছে তাঁর সংস্থার বিভিন্ন কেন্দ্র।
নিজের সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন রাজিন্দর। ২০২২ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। বর্তমানে ‘চেয়ারম্যান ইমেরিটাস’ পদে রয়েছেন তিনি।
বাণিজ্য এবং শিল্প ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০৭ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন রাজিন্দর।
চণ্ডীগড়ে পঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
এক সময় তাঁর দৈনিক মজুরি ছিল ৩০ টাকা। আর এখন তিনি কোটিপতি। রাজিন্দরের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
দেশের অন্যতম নামী শিল্পপতি ধীরুভাই অম্বানী। রাজিন্দরকে ‘পঞ্জাবের ধীরুভাই অম্বানী’ বলা হয়।
রাজিন্দরের এক পুত্র এবং এক কন্যাসন্তান রয়েছেন। পুত্রের নাম অভিষেক গুপ্তা। তিনি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন।
রাজিন্দরের কন্যার নাম নেহা গুপ্তা। লন্ডনে কাস বিজনেস স্কুলে অর্থনীতি (ফিনান্স) নিয়ে স্নাতকোত্তর যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি।
রাজিন্দরের সাফল্য অনেকের কাছেই প্রেরণা। তাঁর এই উত্থানকাহিনি পঞ্জাবের বিভিন্ন বিজনেস স্কুলে ‘কেস স্টাডি’ হিসাবে পড়ানো হয়।