ষাট থেকে সত্তরের দশকে অভিনয়জগতে কেরিয়ার গড়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন দেব আনন্দের ভাই বিজয় আনন্দ। ইন্ডাস্ট্রিতে গোল্ডি নামে পরিচিত ছিলেন তিনি।
‘কালা বাজার’, ‘গাইড’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘তেরে মেরে স্বপ্নে’র মতো হিন্দি ছবি রয়েছে বিজয়ের ঝুলিতে। অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার, প্রযোজকের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি।
কিন্তু মায়ানগরীর জাঁকজমকপূর্ণ জীবন নিয়ে সুখী ছিলেন না বিজয়। ফিল্মজগতে নিজের পরিচিতি গড়লেও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলিপাড়ায় বহুল চর্চিত ছিলেন তিনি। অভিনয় ছেড়ে আশ্রমে যাওয়া, সেখানে গিয়ে বিয়ে-সংসার আবার বিচ্ছেদ। পরে নিজের বোনঝিকে বিয়ে করেও সমালোচনার শিকার হন বিজয়।
১৯৭৫ সালে বিজয় প্রযোজিত ‘জান হাজির হ্যায়’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবির শুটিং চলাকালীন বিজয়ের সঙ্গে আলাপ হয় লভলিনের। বিজয়ের একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন লভলিন।
লভলিনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন বিজয়। ‘জান হাজির হ্যায়’ ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন তিনি। বিজয়ের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান লভলিন। শুটিংয়ের সময় বিজয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে লভলিনের। লভলিনের সারল্য দেখে তাঁর প্রেমে পড়ে যান বিজয়।
পুণের ওশোর আশ্রমে দীক্ষা নিয়েছিলেন বিজয়। প্রতি মাসে দশ দিন তিনি ওই আশ্রমে কাটাতেন। সেখান থেকে তিনি যে দর্শনচেতনা লাভ করেছিলেন, তা ভাগ করে নিতেন লভলিনের সঙ্গে। বিজয়ের দেখাদেখি লভলিনও সেই আশ্রমে দীক্ষা নেন।
বিজয়ের সাদাসিধে জীবন দেখে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন লভলিন। বিজয়কে বিয়ের প্রস্তাব দেন নায়িকা। পুণের আশ্রমেই চারহাত এক হয় বিজয় এবং লভলিনের।
বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই বিজয়ের সঙ্গে অশান্তি শুরু হয় লভলিনের। আশ্রমের সাধারণ জীবন আর ভাল লাগছিল না নায়িকার। ফিল্মপাড়ায় ফিরে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনকি, লভলিন তাঁর জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি ছবি বানানোর অনুরোধও করেন বিজয়কে।
লভলিনের অনুরোধ প্রথমে মজার ছলেই নিয়েছিলেন বিজয়। কিন্তু বার বার লভলিন ছবি বানানোর কথা বলতে থাকায় বিরক্ত হন বিজয়। আবার অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাঁর।
লভলিনকে আবার অভিনয় করতে বলেন বিজয়। কিন্তু তিনি আর কোনও ছবি বানাবেন না বলেও জানিয়ে দেন লভলিনকে। দু’জনের মতের অমিল থাকায় বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তাঁরা।
পরে এক সাক্ষাৎকারে বিজয় বলেন, ‘‘আমি যদি আগে থেকে জানতাম যে, লভলিন আবার অভিনয় করতে চাইবে, আমি কোনও দিনও বিয়ে করতাম না।’’
অভিনয়জগৎ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে ছিলেন বিজয়। পরে তাঁর বোনের কন্যা সুষমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। সুষমা খুব সহজ-সরল ভাবে জীবনযাপন করতেন। তা দেখে প্রেমে পড়ে যান বিজয়।
১৯৭৮ সালে সুষমাকে বিয়েও করেন বিজয়। তার পর বিজয়কে ঘিরে বলিপাড়ায় আরও বিতর্ক শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরাও বিজয়ের এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি।
তবে, দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পর পরিবর্তন আসে বিজয়ের জীবনে। আবার বলিউডে ফিরে আসেন তিনি। বিয়ের দু’বছর পর ‘রাম বলরাম’ নামে একটি হিন্দি ছবির পরিচালনা করেন বিজয়। এই ছবিতে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, জ়িনাত আমন এবং রেখা।
তার পর ‘রাজপুত’, ‘তেরে মেরে লিয়ে’ ছবি দু’টি পরিচালনা করেছিলেন বিজয়। ২০০৪ সালে ৭০ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।