মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত সিকিম।
প্রবল বৃষ্টিতে হ্রদ ফেটে কয়েক ঘণ্টায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলার লাগোয়া দেশের উত্তরের এই ছোট্ট রাজ্যে।
পাহাড় আর সমুদ্রের ছায়ায় আপাত শান্ত যে তিস্তাকে দেখতে অভ্যস্ত ভ্রমণার্থীরা, সেই তিস্তা এখন প্রবল গর্জনে ফুঁসছে।
তার রোষে ভেসে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে গিয়েছে বাড়ি-গাড়ি, বেশ কিছু সেনাছাউনিও।
সেনা সূত্রেই জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত খোঁজ নেই ২৩ জন সেনা জওয়ানের। খোঁজ মিলছে না উত্তর সিকিমের বহু গ্রামের বাসিন্দাদেরও।
বুধবার ভোরে এই উত্তর সিকিমেই আচমকা নেমে আসে বিপর্যয়।
সিকিমের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে দক্ষিণ লোনক হ্রদের উপরে মেঘ ফেটে যায়।
এই দক্ষিণ লোনক হ্রদ আসলে হিমবাহের বরফগলা জলে তৈরি হ্রদ। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সেই হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নামে তিস্তায়।
জলের চাপ সামাল দিয়ে অতিরিক্ত জল ছাড়তে হয় চুংথামের কাছে তিস্তার বাঁধ থেকে। বাঁধ বাঁচাতে ছেড়ে দেওয়া সেই জলের তোড়েই ভেসে যায় উত্তর সিকিম।
সেনা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, হঠাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলের স্রোত নামে তিস্তায়। এক ধাক্কায় বেড়ে যায় জলস্রোত। সেই জলই ভাসিয়ে নিয়ে যায় রাস্তা, ঘর, বাড়ি, গাড়ি— সব কিছু। বন্যার তোড়ে ভেসে যায় লাচেন উপত্যকা।
এই জলের তোড়ে ধস নামে উত্তর সিকিম জুড়ে। ভেসে যায় জাতীয় সড়ক, অন্যান্য রাস্তাও।
কোথাও রাস্তা মাঝখান থেকে ভেঙে দু’খান হয়ে গিয়েছে, কোথাও আবার ঢালাই করা রাস্তার ৯০ শতাংশ ধসে পড়েছে নদীতে।
সেনা সূত্রে খবর, উত্তর সিকিমের সিংতামের কাছে বরদাংয়ের সেনাছাউনিতে কাদাজলের নীচে ডুবে গিয়েছে সেনাবাহিনীর ৪১টি গাড়ি। ডুবে গিয়েছে ছাউনিও।
কোথাও আবার দেখা গিয়েছে গোটা একটি ক্রেনের শুধু মাথার অংশটি জেগে আছে। বাকিটা জলের তলায়। অধিকাংশ বাড়ির নীচের তলা ডুবে গিয়েছে জলের নীচে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সিংথামে তিস্তার উপর একটি ফুটব্রিজ ছিল। নদীর জলের তোড়ে সেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
জলস্তর বৃদ্ধির প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার উপর তৈরি একাধিক ব্যারাজে। প্রশাসনের আশঙ্কা, জলস্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারাজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার বৃদ্ধি পাওয়া জলস্তরের জেরে ওই সব এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও।