তাঁর মাথায় ‘রানি’র মুকুট উঠল ঠিকই। কিন্তু ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সহধর্মিনীকে তার জন্য ছাড়তেও হল অনেক কিছু।
প্রথম স্ত্রী ডায়ানার সঙ্গে চার্লসের বিয়ে টিকলে অবশ্য ব্যাপারটা অন্যরকম হত। ডায়ানাই হতেন বাকিংহামের ‘পাটরানি’। কিন্তু ক্যামিলা পুরোপুরি রানিও হতে পারেননি।
তিনি চার্লসের কুইন কনসর্ট। অন্যান্য দেশে রাজার বিশেষ সঙ্গিনী বা সহচরীদের কনসর্ট বলা হয়ে থাকে। তাঁদের কখনওই রানির মর্যাদা দেওয়া হয় না। চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার বোলস-এর ক্ষেত্রে অবশ্য কুইন কনসর্ট— রাজার সহচরী আর রানির মধ্যবর্তী পদ।
অর্থাৎ ক্যামিলা রানির সম্পূর্ণ মর্যাদা পাবেন না। থাকবে না বেশ কিছু অধিকার। মেনে চলতে হবে অনেক বিধিনিষেধ, থাকতে হবে নানা নিয়মকানুনে জড়িয়ে।
ব্রিটেনের নিয়ম বলছে রাজাকে প্রকাশ্যে আদর করতে পারবেন না রানি। চুম্বন তো নয়ই, জড়িয়ে ধরাও যাবে না। মোট কথা স্নেহ-আদর বোঝায় এমন কিছুই ‘রানি’ ক্যামিলা তাঁর রাজাকে প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে পারবেন না। সে সব থাকবে চার দেওয়ালের মধ্যে।
রাজ পরিবারের সদস্য হওয়ায় হয়ত বাকিংহামের বাসিন্দাদের সামনে মাথা নিচু করতে হবে না ক্যামিলাকে। কিন্তু চার্লসের সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে যদি অন্য রাজা রাজরাদের মুখোমুখি হন তবে হাঁটু মুড়ে নিচু হয়ে সম্মান জানাতে হবে।
চার্লস তাঁর স্বামী। তবু তাঁর পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে পারবেন না ক্যামিলা। আগে তো নয়ই। ক্যামিলাকে সব সময় থাকতে হবে চার্লসের থেকে অন্তত দু’-এক পা পিছনে। এ ভাবেই রাজাকে সম্মান জানাবেন তাঁর কুইন কনসর্ট।
চার্লস রাজা হওয়ার আগে ক্যামিলার সঙ্গে থাকতেন ক্ল্যারেন্স হাউসে। ইনস্টাগ্রামে এই ক্ল্যারেন্স হাউসের নামে একটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টও ছিল। যে খানে প্রায়ই নিজেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ছবি দিতেন চার্লস আর ক্যামিলা। সেই সুযোগও আর ক্যামিলা পাবেন না। এখন থেকে তাঁর যাবতীয় ছবি এবং খবর রয়্যাল ফ্যামিলির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হবে। কড়া নজরের ছাকনিতে ছেঁকে সেই সব ছবি পোস্ট করা হবে সামাজিক মাধ্যমে।
অনেক শব্দও নিজের দৈনন্দিন কথাবার্তা থেকে বাদ দিতে হবে রানিকে। যেমন সন্ধ্যাকালীন খাওয়া দাওয়াকে কখনওই চা বা জলখাবার বলতে পারবেন না রানি। হয় তাঁকে বলতে হবে ডিনার বা সাপার। যার অর্থ রাত্রিকালীন আহার। ‘টয়লেট’ শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারবেন না ক্যামিলা। বদলে তাঁকে বলতে হবে ‘ল্যাভেটরি’ বা ‘লু’।
পোশাকের ব্যাপারে সবসময় সচেতন থাকতে হবে কুইন কনসর্টকে। বাইরে সফরে গেলে, তা যদি একদিনের জন্যও হয়, তবে সাধারণ পোশাকের সঙ্গে রাখতে হবে অন্তত একটি কালো পোশাক, কালো টুপি এবং কলো জুতো। যাতে কারও মৃত্যু হলে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানেও রানি সঠিক পোশাকে উপস্থিত থাকতে পারেন।
অটোগ্রাফ প্লিজ! না বলা যাবে না কুইন কনসর্টকে। রানি হয়েছেন তো কি! সই বিলনো যাবে না। এমনই নিয়ম রাজ পরিবারের।
কুইন কনসর্টকে দেখে যদি কেউ কোনও উপহার দিতে এগিয়ে আসেন, তবে তাঁকে ফেরানো যাবে না। উপহার যতই অপছন্দ হোক হাত বাড়িয়ে তা নিতে হবে। রানি হওয়ার এ-ও এক ‘শাস্তি’।
কুইন কনসর্ট হিসাবে ভোটাধিকারও হারালেন ক্যামিলা। রাজবাড়ির নিয়ম, রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পক্ষ নেওয়া যাবে না।
আর হারালেন ইচ্ছেমতো সময় কাটানোর স্বাধীনতা। রাজা চার্লসের পরিবর্ত হিসাবে কাজ করতে হতে পারে ক্য়ামিলাকে। রাজা গরহাজির হলেই বিভিন্ন বৈঠক সামলাতে ডাক পড়তে পারে ক্যামিলার। সেই দায়িত্বও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে ক্যামিলাকে।