বাংলা তথা দেশ জুড়ে সারা বছরই নারকেলের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। পুজোর উপকরণ হিসেবে নারকেলের ব্যবহার অপরিহার্য। আবার দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবনের তেষ্টা মেটানোর জন্যও ডাবের চাহিদা অপরিসীম।
একটি দেশীয় নারকেল গাছে সাধারণত ফলন আসে ৭ থেকে ৮ বছরে। ভাবুন তো, যদি এই নারকেলের ফলন আসতে মাত্র আড়াই বছর সময় লাগে, তা হলে নারকেল ব্যবসায়ীদের জন্য কত লাভজনক হত!
এমনটাই সম্ভব ভিয়েতনামি নারকেল গাছের ক্ষেত্রে। মাত্র ২৮ মাসেই ফলন আসে এই নারকেল গাছে। ফলন পেতে সুদীর্ঘ অপেক্ষা একেবারেই করতে হয় না। দেশ-বিদেশে এই নারকেল গাছের জনপ্রিয়তা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে।
তবে কি শুধু জলদি ফলন পাওয়ার কারণেই এত জনপ্রিয় এই বিশেষ প্রজাতির নারকেল গাছ? আর কী কী কারণে এই নারকেল চাষে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন চাষিরা?
সাধারণ নারকেল গাছের তুলনায় ভিয়েতনামি নারকেল গাছ উচ্চতায় অনেকটাই খাটো। এর উচ্চতা এতটাই কম যে, ৫-১০ বছরের বাচ্চারাও অতি সহজেই মাটিতে দাঁড়িয়ে এই নারকেলের নাগাল পেতে পারে।
বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে এই নারকেল গাছের চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশি নারকেল চাষিদের মতে, এই নারকেল গাছ থেকে দু’ভাবে লাভ করা যেতে পারে। ফল বিক্রি করে এবং প্রচুর পরিমাণে গাছের চারা বিক্রি করে।
ভিয়েতনামি নারকেল গাছের এক একটি ডাব এবং নারকেল বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। পাশাপাশি একটি চারাগাছ বিক্রি হয় পাঁচ থেকে সাতশো টাকায়।
দেশীয় নারকেল গাছের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ফলন হয় ভিয়েতনামি নারকেল গাছে। সঠিক দেখভাল করলে প্রতি বছর এক একটি গাছ থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি নারকেল পাওয়া যায়।
ভিয়েতনাম থেকে আসা এই নারকেল গাছের প্রধানত দু’টি প্রজাতি রয়েছে। সিয়াম গ্রিন এবং সিয়াম ব্লু।
সিয়াম গ্রিন ভিয়েতনামি নারকেল গাছের ডাব সাধারণত গাঢ় সবুজ রঙের হয়। আকারে কিছুটা ছোট এই নারকেল গাছে প্রতি বছর প্রায় ২০০টি নারকেল পাওয়া যায়।
সিয়াম ব্লু প্রজাতির নারকেল তুলনামূলক ভাবে বেশি জনপ্রিয়। হলুদ রঙা এই ডাবের জল সিয়াম গ্রিন ডাবের জলের তুলনায় বেশি মিষ্টি। পাশাপাশি জীবদ্দশা বেশি হওয়ার কারণে এই প্রজাতির নারকেলগুলি বিদেশেও রফতানি করা হয়।
সিয়াম গ্রিন এবং সিয়াম ব্লু, উভয় প্রজাতিরই এক একটি নারকেলের ওজন হয় প্রায় দেড় কিলো।
তবে হাইব্রিড হওয়ার কারণে এই প্রজাতির নারকেলের চাষে একটু বেশি যত্নশীল হতে হয়। বেলে-দোঁআশ মাটিতে এই নারকেলের ফলন ভাল হয়।
পাশাপাশি ভিয়েতনামি নারকেল গাছে সাধারণ দেশীয় নারকেল গাছের তুলনায় বেশি জল এবং গোবর সার দিতে হয়।
উচ্চতায় ছোট হওয়ায় এই গাছগুলিতে পোকামাকড় হানা দেওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ নজর রাখতে হয় এই ভিয়েতনামি নারকেল গাছগুলিতে।