ব্যাবিলনের বিখ্যাত ঝুলন্ত উদ্যান বিশ্বের এক বিস্ময়। ইতিহাসের পাতায় যার নাম উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ ইতিহাসবিদ থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
ব্যাবিলন কথার অর্থ ‘ভগবানের দুয়ার’। এখানেই নাকি তৈরি হয়েছে হ্যাঙ্গিং গার্ডেন। কিন্তু তার ঠিকানা নিয়ে রয়েছে নানা মত।
কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মতে, ইরাকের বাবিল প্রভিন্সের হিল্লা এলাকায় ছিল ঝুলন্ত উদ্যান। কথিত আছে, ব্যাবিলনের রাজা দ্বিতীয় নেবুচাডনেজ়ারের আমলে এই উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছিল।
রাজা দ্বিতীয় নেবুচাডনেজ়ার তাঁর স্ত্রী আমাইটিসের জন্য বানিয়েছিলেন উদ্যানটি। কিন্তু এই উদ্যান শখে বানানো নয়। এর নেপথ্যে ছিল অন্য কারণ।
রানি আমাইটিস যেখানে জন্মেছিলেন, তার চারদিক ছিল সবুজ গাছপালায় ভরা। কিন্তু বিয়ের পর ব্যাবিলনে এসে তিনি সবুজে ঘেরা পরিবেশ পাননি। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই মনখারাপ করতেন রানি।
তাই রানি যাতে নিজের জন্মভূমির স্বাদ ব্যাবিলনেই পান, সেই আয়োজন করতে রাজপ্রাসাদের কাছে ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি করেছিলেন রাজা দ্বিতীয় নেবুচাডনেজ়ার।
কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ইতিহাসে রাজা দ্বিতীয় নেবুচাডনেজ়ারের ব্যাপারে সামান্য উল্লেখ থাকলেও রানি আমাইটিসের ব্যাপারে কিছুই উল্লেখ নেই। তাই এমন কোনও উদ্যানের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেকের দাবি, ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ঝুলন্ত উদ্যান। নদী থেকে জল নিয়ে উদ্যানের কাজে ব্যবহার করা হত।
২০১৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ স্টিফানি ড্যালে দাবি করেন, অ্যাসিরিয় সাম্রাজ্যের রাজধানী নিনেভেতেই আসলে ছিল ঝুলন্ত উদ্যান।
আবার ব্যাবিলনের এক পুরোহিত বেরোসাস এক আশ্চর্য উদ্যানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর মতে, ২৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি হয় ব্যাবিলনে।
কিন্তু এখনও ঝুলন্ত উদ্যানের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই উদ্যানের ব্যাপারে প্রত্নতাত্ত্বিক কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আদৌ এমন কোনও উদ্যান ছিল কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অনেকের দাবি, এমন উদ্যান কোনও কবির চিন্তাভাবনার ফল।
উল্লেখ রয়েছে, এই উদ্যানে নাকি মাটির অনেক উপর থেকে গাছগুলি জন্মাত। গাছের শিকড়গুলিও ঝুলে থাকত। এমন অদ্ভুত ধরনের উদ্যান বাস্তবে থাকা আদৌ থাকা সম্ভব কি না, প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
আবার কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানে ইউফ্রেটিস নদীর জলের তলায় চলে গিয়েছে এই ঝুলন্ত উদ্যান।
নদীর তলায় কোনও ধ্বংসাবশেষ থাকার সম্ভাবনা খুব কম। থাকলেও বর্তমানে তা উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই হ্যাঙ্গিং গার্ডেনের অস্তিত্ব সংকট এখনও রয়েই গিয়েছে।