নামেই মালুম পড়ে! শান্তিবন নন-কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি-র বাসিন্দাদের নিজেদের মধ্যে কতটা সদ্ভাব! তাঁদের রোজকার জীবনে ঘটনার ঘনঘটা লেগেই রয়েছে। সে সব দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন দর্শক।
শান্তিবনের বাসিন্দাদের কাণ্ডকারখানা দেখতে তিন মরসুম ধরে সোনি টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন দর্শক। তাতেই তো রমরমিয়ে চলছে ‘দ্য কপিল শর্মা শো’। সেই ২০১৬ সাল থেকে! এখনও পর্যন্ত যার ৩৪৯টি পর্ব দেখে ফেলেছেন দর্শকরা।
এক ভাগে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি। অন্য ভাগে টক-শো। কপিল শর্মার শোয়ের মোড়ক খানিকটা কেন, বেশ অভিনব! ফলে টিআরপি কাড়তে বেশি দেরি হয়নি। তা এই শোয়ে দর্শককে হাসাতে কে কত দক্ষিণা নেন?
কপিলের নিজে হাতে গড়া শোয়ে তিনি নিজে তো রয়েইছেন। সঙ্গে প্রায় প্রতি পর্বে দেখা যায় ক্রুষ্ণা অভিষেক, কিকু সারদা, ভারতী সিংহ, সুমনা চক্রবর্তী, চন্দন প্রভাকরকে। এবং অবশ্যই নিয়মিত অতিথি হিসেবে অর্চনা পূরণ সিংহ।
এই কিকু সারদার কথাই ধরুন না। কখনও হাসপাতালের নার্স। কখনও বা ইনস্পেক্টর দামোদর ঈশ্বরলাল গায়তোণ্ডে। আবার কোনও সময় উকিল দামোদর জেঠমলানি। কপিল শর্মার শোয়ের পর্ব ঘুরলেই কিকুর চরিত্রও বদলে যায়। এরই ফাঁকে সানি দেওলের মতো হুঙ্কারও দেন তিনি। শোয়ে আসা অতিথিদের সঙ্গে খুনসুটি করেন। তা এত সব করতে পর্ব পিছু কিকু নাকি নেন পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা।
কপিল শর্মার প্রথম মরসুমে ভারতী সিংহকে দেখা গিয়েছিল বাবলি মৌসি আর লাল্লির ভূমিকায়। পরের বার তিনি এলেন ১১ সন্তানের মা তিতলি যাদব হয়ে। তার পর কখনও গুড্ডু বা কাম্মো বুয়া। এমনকি, অর্চনা পূরণ সিংহের নকল করতেও পিছপা নন। তিন নম্বর অর্থাৎ চলতি মরসুমে তিনি আবার স্বনামেই নজর কাড়ছেন। মাঝে মধ্যে অবশ্য চাচির চরিত্রেও রয়েছেন। ভারতীর আয়ও কম নয়। ফি পর্বে তিনি নাকি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘরে নিয়ে যান।
গোবিন্দা তাঁর মামা তো কী! স্বনামেই ছোটপর্দার তারকা ক্রুষ্ণা অভিষেক। এ শোয়ে তাঁর নকলনবিশি দক্ষতা দেখিয়েছেন। কখনও আবার এত দ্রুত সংলাপ বলেছেন যে লোকজন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকেছেন। অনেকেই বলেন, এক একটা পর্বের জন্য তিনিও নাকি ভারতীর মতো ১০-১২ লাখ টাকা রোজগার করেন।
সেই প্রথম মরসুমে সরলা গুলাটির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সুমনা চক্রবর্তীকে। তার পর থেকে হোটেল চিল প্যালেসের মালকিন হয়ে যান সুমনা। তবে এ বার কপিল শর্মায় তাঁর নাম ভুরি। চলতি মাসের গোড়ায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তিনি বাড়িতে নিভৃতবাসে রয়েছেন। তবে তার আগে শোয়ে কাজ করার জন্য একটি পর্ব থেকে নাকি আয় করতেন ৬-৭ লাখ টাকা।
কপিল শর্মার শোয়ে যতই হালকা হাসির ছড়ান না কেন, পর্দার বাইরে কম বিতর্কে জড়াননি সুনীল গ্রোভার। এক সময় কপিল বা কিকুর পাশাপাশি তাঁর চাহিদাও কম ছিল না। শোনা যায়, তিনি নাকি প্রতি পর্বে ১০-১২ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন।
অনেকে বলেন, কপিল শর্মার বন্ধু বলেই এ শোয়ে জায়গা পেয়েছেন চন্দন প্রভাকর। তবে হোটেল মালিক চন্দু বা বিমলা দেবী কিংবা চাঁদনির বেশে চন্দনের চাহিদাও কম নয়। চন্দনের আয় ফি পর্বের জন্য সাত লাখ টাকা!
কপিলের শোয়ের প্রথম মরসুমে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিলেন নবজোত সিংহ সিধু। ক্রিকেট মাঠকে বিদায় দিয়ে রাজনীতিরে আঙিনায় পা রাখলেও তাঁর রসিকতার মজা লুঠতে অনেকেই এ শো দেখতেন। তবে তার পরের দুই সিজনে শোয়ে পাকাপাকি ভাবে অতিথি হন অর্চনা পূরণ সিংহ।
কর্ণ জোহরের ফিল্ম ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-তে শাহরুখ খান, কাজল এবং রানি মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি মিস ব্রেগাঞ্জাকেও মনে রেখেছেন অনেকে। তা সেই মিস ব্রেগাঞ্জা থুড়ি অর্চনা যে এত ভাল কমেডি করেন, তা জানা গেল ‘কমেডি সার্কাস’-এর মতো শোয়ে। তার পর থেকে কপিলের শোয়ে সিধুকে হঠিয়ে জেঁকে বসেন অর্চনা। প্রতি পর্বে তাঁকে দিতে হয় ১০ লাখ টাকা।
নিজের শোয়ে মধ্যমণি যে তিনি, তা বার বার প্রমাণ করেছেন কপিল শর্মা। আজকাল তিনি শিরোনামে কৌতুকশিল্পী হিসেবে তাঁর সফরনামা ঘিরে। অমৃতসর থেকে উঠে আসা অজানা কপিলের কাহিনি নেটফ্লিক্সে দেখা যাবে ‘কপিল শর্মা: আই অ্যাম নট ডান ইয়েট’-তে। তবে সে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শোয়ের আগেই নিজের পকেট ভারী করেছেন কপিল। নিজের শো থেকে তাঁর আয় পর্ব প্রতি ৫০ লাখ টাকা!