কুম্ভমেলায় নয়, বরং জন্মের সময়েই একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন দুই ভাই। দু’জনেই ছিলেন যমজ। আলাদা হওয়ার পর নিজেদের অজান্তেই তাঁরা একদম একই জীবন কাটিয়েছেন। তাঁদের জীবনের গল্প শুনে মনে হবে, একটি যেন অন্যটির প্রতিচ্ছবি। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, এঁদের সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, সবই সত্যি। এমনকি ‘ফ্যাক্ট চেক’ও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু যা দেখা গেল, তা থেকে তাজ্জব অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, এ সবই কি সত্যি?
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় আট দশক আগে। ১৯৪০ সালে ওহায়োতে জন্ম হয় এই দুই যমজ সন্তানের। তাঁদের যখন তিন সপ্তাহ বয়স, তখন দু’জনকে দত্তক নেন ওহায়োর দুই পরিবার।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, লিমার লেওয়িস দম্পতি দত্তক নেওয়ার পর তাঁদের সন্তানের নাম রাখেন জেমস। কাকতালীয় ভাবে, পিকোয়ার স্প্রিঙ্গার দম্পতি তাঁদের সম্তানের নামও রাখেন জেমস।
দুই দম্পতিই জানতেন যে, তাঁরা যমজ সন্তানদের আলাদা ভাবে দত্তক নিচ্ছেন। তবে, দত্তক নেওয়ার পর দুই পরিবার একে অপরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখেননি। এমনই দাবি করা হয়েছে।
শুধু ভাল নামেই নয়, তাঁদের ডাক নামের ক্ষেত্রেও মিল ছিল। দু’জনেরই বাড়িতে তাঁদের জিম নামে ডাকা হত বলে দাবি করা হয়েছে।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই নয়, মিল ছিল তাঁদের পোষ্যের ক্ষেত্রেও। দু’জনেই কুকুর পুষতেন। তাঁরা দু’জনেই তাঁদের পোষ্যের নাম রেখেছিলেন ‘টয়’।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, স্কুলে পড়াকালীন দুই জিমের প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক। দু’জনেই বানানে দুর্বল ছিলেন।
একই রকম শখ পালন করতেন দু’জনেই। কাঠের উপর নকশা করতে ভালবাসতেন দু’জন।
অস্বাভাবিক মাত্রায় ধূমপান করতেন। দু’জনই।
একই মডেলের গাড়িও ছিল দু’জনের কাছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, তাঁরা দু’জন শেভ্রলে মডেলের গাড়ি চালাতেন।
তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কেও সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। তাঁরা দু’জনেই যাঁদের বিয়ে করেছিলেন, তাঁদের নাম ছিল একই। লিন্ডা নামের দুই মহিলাকে বিয়ে করেন দু’জন।
দু’জনেরই প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়। তার পর আবার তাঁরা বিয়ে করেন।
কাকতালীয় ভাবে, তাঁদের দ্বিতীয় স্ত্রীয়ের নামও একই। দু’জনেরই নাম ছিল বেটি।
দুই জিমই পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এমনকি, তাঁদের সন্তানদের নামও ছিল এক। দু’জন তাঁদের পুত্রসন্তানের নাম রেখেছিলেন জেমস অ্যালান।
পেশাগত দিক থেকেও মিল ছিল দুই ভাইয়ের। দু’জনেই নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। জিম (স্প্রিঙ্গার) কাজ করতেন ডেপুটি শেরিফ পদে। জিম (লেওয়িস) কাজ করতেন নিরাপত্তা রক্ষী হিসাবে।
এমনকি, ছুটি কাটানোর জন্য দু’জনেরই প্রিয় জায়গা ফ্লোরিডার সমুদ্রসৈকত।
জিমের (লেওয়িস) বয়স যখন ৩৭, তখন তাঁর যমজ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে ওহায়ো কোর্টহাউস থেকে জিমের (স্প্রিঙ্গার) ফোন নম্বর পান। ফোনে যোগাযোগ করার পর তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের বাড়ির দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার।
অবশেষে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা করেন দুই ভাই। বহু ক্ষণ বার্তালাপও চলে তাঁদের মধ্যে। তাঁদের এই অদ্ভুত মিলের কথা জানাজানি হলে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার গবেষক থমাস বোকার্ড তাঁদের ডিএনএ থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক-তরঙ্গের পরীক্ষা করেন।
পরীক্ষার ফলাফল দেখে অবাক হয়ে যান থমাস। দেখেন, সব কিছু একদম একই। এমনকি, ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করেও দু’জনের একই ফল পাওয়া যায়।
তাঁদের উপর এই গবেষণা ‘জিম টুইন’স কেস’ নামে পরিচিত। যমজ সন্তানদের মধ্যে যে অদ্ভুত রকমের টেলিপ্যাথির যোগ রয়েছে, এই দুই ভাই-ই তার প্রমাণ। এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়।