বাজারদর যেন আগুন, হাত ছোঁয়ানো দায়! তার মধ্যে সঞ্চয়ের উপর সুদও নামমাত্র। বছর শেষে সাধারণ মধ্যবিত্তের আশায় জল ঢেলে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও সে ভাবে সুদ বাড়ল না।
রোজকার খরচ সামলে মধ্যবিত্তের হাত ফাঁকা, জমানোর মতোও টাকা থাকে না হাতে। ব্যাঙ্কের সুদ একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বৃদ্ধি হবে বলে ভেবেছিলেন অনেকেই। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা খরচ সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছে দিনে দিনে।
অর্থ মন্ত্রক আগামী তিন মাসের জন্য প্রকল্পগুলির সুদ ঘোষণার পরে দেখা গিয়েছে, ১১টির মধ্যে দু’টি মাত্র প্রকল্পে তার হার নামমাত্র বেড়েছে।
সুকন্যা সমৃদ্ধিতে ৮% থেকে বেড়ে হয়েছে ৮.২%, আর তিন বছরের মেয়াদি জমায় ৭% থেকে বেড়ে ৭.১%। বাকিগুলি অপরিবর্তিত।
সংশ্লিষ্ট মহলের আক্ষেপ, এ বারও ব্রাত্য করে রাখা হল পিপিএফ-কে। দীর্ঘ দিন ধরে তাতে সুদ থমকে ৭.১ শতাংশে। অথচ কর ছাড়ের সুবিধার দিক থেকে এই প্রকল্প বহু মধ্যবিত্ত মানুষের ভরসার জায়গা।
অনেকেই আগে এতে টাকা রেখে সঞ্চয় বাড়ান অবসর জীবনের জন্য। অর্থ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সুদ একই রয়েছে বাদবাকি সব প্রকল্পেও।
যেমন, বয়স্কদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে মিলবে অক্টোবর-ডিসেম্বরের মতোই ৮.২% সুদ। এই প্রকল্পে সুদের হার সব থেকে বেশি।
এক, দুই এবং পাঁচ বছরের মেয়াদি জমায় তা যথাক্রমে ৬.৯%, ৭% এবং ৭.৫%। সেভিংস ডিপোজ়িটে ৪%, পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজ়িটে ৬.৭%, মাসিক জমায় ৭.৪%, এনএসসি-তে ৭.৭%, কিসান বিকাশে ৭.৫%।
তবে শুক্রবার সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে সুদ ২০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮.২%। এ ছাড়া তিন বছরের মেয়াদি আমানতে তা ১০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৭.১%।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, দেশে স্বল্প সঞ্চয়ে তহবিল বৃদ্ধির হার কমছে। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষ জেরবার।
এমন পরিস্থিতিতে সিংহভাগ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার না বাড়ায় হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক ওই সব প্রকল্পের লগ্নিকারীদের।
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, “ওই সব প্রকল্পে খুব সাধারণ মানুষেরাই টাকা রাখেন। এঁদের মধ্যে বহু অবসরপ্রাপ্ত মানুষ রয়েছেন। সেগুলির আয় থেকে তাঁদের অনেকের সংসার চলে। স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কিছুটা বাড়ানো হলে মূল্যবৃদ্ধির জেরে বাজারে ওষুধ-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্যের সমস্যা মোকাবিলায়, বিশেষ করে ওই সব প্রবীণ নাগরিকদের কিছুটা সুরাহা হত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তাঁরা যে হতাশ হবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’’