শক্তি বাড়ল ভারতীয় বায়ুসেনার। হাতে এল সি-২৯৫ বিমান। গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্পেনের সেভিল এয়ারফিল্ডে সে দেশের বিমান নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবেস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে এই বিমানটি তুলে দেয়। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ভারতী বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভিআর চৌধুরি।
সম্প্রতি গুজরাতের বরোদার বায়ুসেনাঘাঁটিতে স্পেন থেকে প্রথম বিমানটি এসে পৌঁছয়। এয়ার চিফ মার্শাল জানিয়েছেন, শীঘ্রই সি-২৯৫ বিমান ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করবে বায়ুসেনা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় স্পেনের সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য সি-২৯৫ বিমান বানাতে টাটা গোষ্ঠীর চুক্তি হয়েছিল। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।
মোট ৫৬টি সি-২৯৫ বিমানের চুক্তি করেছে বায়ুসেনা। তার মধ্যে ১৬টি তৈরি করা হবে স্পেনে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাকি ৪০টি বিমান তৈরি করা হবে ভারতে। টাটা এবং এয়ারবাস যৌথ ভাবে বরোদায় তৈরি করবে এই বিমান।
গত বছরের অক্টোবর মাসে বিমান তৈরির কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রথম কোনও বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে সামরিক বিমান তৈরি করা হবে দেশে।
চুক্তি অনুযায়ী, স্পেনে তৈরি ১৬টি বিমান আগামী বছরের শেষের দিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
যে ৪০টি বিমান দেশে তৈরি হবে, তা ২০৩১ সালের মধ্যে বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম বিমানটি ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে তৈরি করা হতে পারে।
এই বিমানের বিশেষত্ব কী? প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই সামরিক পরিবহণ বিমান সি-২৯৫ হাতে আসায় লাদাখ, সিকিম কিংবা অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-র দুর্গম ঘাঁটিগুলিতে এ বার সহজে অস্ত্র এবং রসদ পৌঁছে দিতে পারবে বায়ুসেনা।
এ ছাড়াও চিনা ফৌজের আগ্রাসনের আশঙ্কা দেখা দিলেই অগ্রবর্তী সেনাঘাঁটিগুলিতে দ্রুত পৌঁছে দিতে পারবে বাড়তি বাহিনী। সেই সঙ্গে সুবিধা হবে আহত বা অসুস্থ সেনাদের ফিরিয়ে আনা। এমনকী, প্রয়োজনে এই বিমান নজরদারির কাজেও ব্যবহার করা যায়।
লম্বায় বিমানটি ২৪.৪৬ মিটার। বিমানটির উচ্চতা প্রায় ৮.৬৬ মিটার। মোট ৭ হাজার ৫০ কেজি ভার বহন করতে পারবে বিমানটি।
প্রায় ৭১ জন জওয়ানকে বহন করতে সক্ষম সি-২৯৫ বিমান। ৪৯ জন প্যারা ট্রুপারকে নিয়ে যেতে পারবে বিমানটি। সর্বোচ্চ গতি ২৬০ নট।
বিমানে ২৪টি স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট পরিবহণ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য সাত জন মেডিক্যাল অ্যাটেনডেন্ট থাকতে থাকবে পারবেন।
ছোট রানওয়েতেও এই বিমান উড়তে এবং নামতে পারে। মাত্র ৬৭০ মিটারের রানওয়েতে টেক অফ করতে পারবে এই বিমান। অবতরণের জন্য প্রয়োজন মাত্র ৩২০ মিটারের রানওয়ে।
সি-২৯৫ বিমানে আছে দু’টি প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি কানাডা পিডব্লিউ ১২৭জি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন। বিমানে রয়েছে রিয়ার র্যাম্প ডোর।
বায়ুসেনা প্রধান বলেছেন, ‘‘এটা শুধু মাত্র ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য নয়, দেশের জন্য একটা মাইলফলক।’’ তিনি আরও বলেছেন যে, ভারতে প্রথম বার সামরিক পরিবহণের জন্য বিমান তৈরি করা হবে। যা ভারতীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।