শরীরে মদের ব্যারেল গলিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন এক ব্যক্তি। ব্যারেলে তিন তিন খানা গর্ত। একটি গর্ত দিয়ে মাথা বার করা রয়েছে। অন্য দু’টি গর্ত রয়েছে পা গলানোর জন্য।
মজার ছলে নয়, বরং শাস্তি হিসাবে সারা শহর এই ব্যারেল শরীরে গলিয়ে হাঁটতে হত এক সময়। অপরাধ, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মদ্যপান করা।
মধ্যযুগ এবং প্রাক-আধুনিক যুগে কমনওয়েলথ অফ ইংল্যান্ডে এই শাস্তি দেওয়া হত।
এটি ‘ড্রাঙ্কার্ডস ক্লোক’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। এই ব্যারেলগুলি এমন ভাবে বানানো হত যাতে অপরাধীদের শরীরের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পুরোটাই ব্যারেল দিয়ে ঢাকা থাকে।
এই অদ্ভুত ভাবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ফলে যেমন অপরাধীকে প্রকাশ্যে অসম্মান করা হত, ঠিক তেমনই এই শাস্তি ছিল যন্ত্রণাদায়কও।
অপরাধী যখন এই ব্যারেলের মধ্যে গা গলিয়ে হাঁটতেন, তখন ব্যারেলের সমস্ত ভার তাঁর ঘাড়ের উপর পড়ত। এই ভারী ওজনের ব্যারেল এত ক্ষণ বয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল।
১৩০০ খ্রিস্টাব্দে এই শাস্তি প্রথম শুরু হয় জার্মানিতে। তার পর ধীরে ধীরে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, এই ‘ড্রাঙ্কার্ডস ক্লোক’-এর নাম জায়গা বিশেষে বদলেও গিয়েছে।
নেদারল্যান্ডসে এই শাস্তি ‘স্প্যানিশ ম্যান্টেল’ নামে পরিচিত। ইংল্যান্ডে আবার একে ‘নিউক্যাসেল ক্লোক’ বলা হত।
১৫৫০ থেকে ১৭০০ সাল সময়কালে ইংল্যান্ডে বিয়ার উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলের মধ্যে মদ পান করার প্রবণতাও বেড়ে যায়। এর ফলে সমস্যা বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ইংল্যান্ডে নতুন আইন প্রবর্তন করা হয়। ‘এল হাউসেস অ্যাক্ট ১৫৫১’ অনুযায়ী, অতিরিক্ত মদ্যপান করা গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়ার পর এই শাস্তির প্রচলন আরও বেড়ে যায়।
১৬৫৫ সালে ইংল্যান্ডে অলিভার ক্রমওয়েলের শাসন চলাকালীন যে এল হাউসগুলিতে মদ বিক্রি করা হত, সেগুলি বন্ধ করে দিতে শুরু করেন। এমনকি, অভিজাত এলাকাতেও এল হাউসের উপর কড়া নজরদারি রেখেছিলেন তিনি।
এই শাস্তির প্রচলন এতই বেড়ে যেতে থাকে যে একে অনেকে ‘নিউ ফ্যাশন ক্লোক’ বলতেন।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সৈনিকরা কোনও অপরাধ করলে তাঁদের শাস্তি দিতেও এই পন্থা অবলম্বন করা হত।
জানা যায়, উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার কয়েকটি জেলেও বন্দিদের এই শাস্তি দেওয়া হত।