খোঁজ মিলল পৃথিবীর সব থেকে পুরনো গাছের! এমনটাই দাবি করছেন চিলির এক দল উদ্ভিদ বিজ্ঞানী। চিলির বিজ্ঞানীদের মতে ‘গ্রেট-গ্র্যান্ডফাদার’ নামে পরিচিত চার মিটার পুরু কাণ্ড যুক্ত একটি কনিফার গাছ বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত গাছ হতে পারে।
প্যারিসের ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ল্যাবরেটরি’তে কর্মরত চিলির বিজ্ঞানী জোনাথন বারিচিভিচের নতুন গবেষণায় এই তথ্যটি উঠে এসেছে।
জোনাথনের মতে এই গাছটির আনুমানিক বয়স ৫,৪৮৪ বছর।
যদি এই তথ্য সত্যি বলে প্রমাণিত হয় তা হলে ‘স্বচক্ষে’ এই গাছ চাকা আবিষ্কার থেকে আধুনিক মানব সভ্যতার মহাকাশ যাত্রা সবই দেখেছে। এই গাছ সাক্ষী ছিল মিশরের মমিযুগেরও।
এই গাছটি একটি প্যাটাগোনিয়ান সাইপ্রেস প্রজাতির গাছ। এই গাছের নাম ফিটজরোয়া কুপ্রেসয়েডস, যা স্প্যানিশ ভাষায় অ্যালিয়ারস মিলেনারিও নামেও পরিচিত।
ফিটজরোয়া কুপ্রেসয়েডস চিলি এবং আর্জেন্টিনাতে দেখতে পাওয়া একটি কনিফার গাছ, যা ‘জায়ান্ট সিকোইয়াস’ এবং ‘রেডউডস’ গাছের মতোই কুপ্রেসেসিয়া পরিবারের অন্তর্গত।
এই গাছ অবিশ্বাস্য ভাবে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এই গাছগুলি ৪৫ মিটার বা ১৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
জোনাথন ছোটবেলা থেকেই এই গাছটির কথা শুনে আসছেন। ছোটবেলায় এই গাছটি বেশ কয়েক বার দেখতেও গিয়েছেন তিনি। তবে ছোটবেলায় এই গাছ সম্পর্কে বিশেষ কোনও ধারণা তাঁর ছিল না।
২০২০ সালে জোনাথন অ্যালিয়ারস মিলেনারিও থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে তিনি কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে এই গাছের বয়স নির্ণয় করার চেষ্টা শুরু করেন।
এই গাছের সঠিক বয়স কত তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। আর সেই কারণেই পাকাপাকি ভাবে তাঁর অনুমান জোনাথন এখনও কোনও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি। যদিও আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই গাছের আসল বয়স কত তা নিয়ে জোনাথন গবেষণাপত্র বের করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জোনাথনের অনুমান যদি সত্যি হয়, তা হলে তা উদ্ভিদ-বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার একটি নতুন দিক খুলে দেবে।
গত ৬০০ বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার ৪,৮৫৩ বছর বয়সি একটি ব্রিস্টেলকোন পাইন গাছকে বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন গাছ বলে মনে করা হয়। এই গাছ ‘মেথুসেলাহ’ নামে পরিচিত। তবে জোনাথনের দাবি যদি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে অ্যালিয়ারস মিলেনারিও গাছটি পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বের প্রাচীনতম গাছের তকমা পাবে।
‘গ্রেট-গ্রান্ডফাদার’ বা অ্যালিয়ারস মিলেনারিও গাছটি চিলির অ্যালিয়ারস কোস্টেরো জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এই গাছ শ্যাওলা, লাইকেন এবং অন্যান্য গাছপালার দ্বারা পরিবেষ্টিত।
তবে এই গাছ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন জোনাথন। তাঁর মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই গাছের এমনই অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে জলের অভাবে এই গাছটির চারপাশ জুড়ে বেশ খানিকটা এলাকা শুকনো হয়ে গিয়েছে।
চিলিতে বন এবং গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে আগেই সতর্ক করেছিল সেই দেশের ‘ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট’।
‘ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট’ অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, চিলিতে সাত লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টরেরও বেশি স্থানীয় বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে।
চিলির পরিবেশ মন্ত্রী মাইসা রোজাস এই তথ্যকে একটি ‘বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার’ বলে মন্তব্য করছেন। চিলির পরিবেশ মন্ত্রী হওয়া ছাড়াও মাইসা রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের সদস্যও তিনি।