Snow Leopard

রহস্যের নাম ‘ঘোস্ট অব মাউন্টেন্স’! বরফে ঢাকা পাহাড়ে আনাগোনা ‘ভূত’দের

একটি আশ্চর্য সুন্দর ছবিটি তোলা হয়েছে ভারতেই। লাদাখে পাহাড়ি এলাকায় চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছে ওই বিরল মুহূর্ত।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২২
Share:
০১ ২১

যে দিকে চোখ যায়, শুধুই তুষারাবৃত সাদা পাহাড়। এবড়োখেবড়ো শৃঙ্গ যেন আকাশ ছুঁয়েছে। বরফের সাদা চাদরে নিজেদের ঢেকেছে পাহাড়গুলি। আকাশে সে কী এক মায়ার খেলা! সূর্যাস্তের লালচে আভা মিশে সে এক অপার সৌন্দর্য। না, এখানেই ছবিটা শেষ নয়। কারণ, এই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আরও এক জন রূপ-রস ঢেলে দিয়েছে। তার দু’চোখে যেন আগুন ঝরছে। গায়ে কালচে ছোপ। শরীরে সাদা রঙের পুরু লোমের আস্তরণ। সেই সঙ্গে ধূসরের ছটা। সাদা তুলতুলে বরফের উপর রাজকীয় ভাবে দাঁড়িয়ে সে। ‘দ্য ঘোস্ট অব মাউন্টেন্স’ বা ‘পাহাড়ের ভূত’। হ্যাঁ, তুষার চিতাবাঘ নিয়েই কথা হচ্ছে।

ছবি সংগৃহীত।

০২ ২১

বরফে ঢাকা পাহাড়ের উপর তুষার চিতাবাঘের এমনই একটি ছবি দেখে মোহিত হয়েছেন সকলে। এই ছবিটিই এ বছর ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার পিপলস চয়েস’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ৬০ হাজার ৪৬৬ জন প্রকৃতিপ্রেমীর ভোটে ওই ছবি সেরা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ২১

তুষার চিতাবাঘের ওই আশ্চর্য সুন্দর ছবিটি তোলা হয়েছে ভারতেই। লাদাখে পাহাড়ি এলাকায় চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছে ওই বিরল মুহূর্ত।

ছবি সংগৃহীত।

০৪ ২১

ছবিটি তুলেছেন জার্মানের চিত্রগ্রাহক সাশা ফনসেকা। ভারতীয় হিমালয় অঞ্চলে খুব সতর্কতার সঙ্গে ক্যামেরা তাক করেছিলেন সাশা। আর তাঁর সেই ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে ওই তুষার চিতাবাঘ। সাশা ওই ছবিটির নাম রেখেছেন,‘তুষার চিতাবাঘের সাম্রাজ্য’।

ছবি সংগৃহীত।

০৫ ২১

হ্যাঁ, সাম্রাজ্যই বটে। এই বিশ্বসংসারে তাদের গতিবিধি বোঝা বড় দায়। কারণ তারা অন্তরালেই থাকে। তাদের দেখা পাওয়া মোটেই সহজ নয়। তারা ধরাছোঁয়ারও বাইরে। সে কারণেই তো তাদের বলা হয়, ‘পাহাড়ের ভূত’।

ছবি সংগৃহীত।

০৬ ২১

ভূত! হ্যাঁ, তুষার চিতাবাঘরা ভূতেদের মতোই যেন অদৃশ্য। দিনের বেলায় তাদের টিকিটি পাওয়া যায় না। তবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় তারা হিমালয়ের পাহাড়ি এলাকায় অবতীর্ণ হয়। সাশার ক্যামেরায় যে ছবিটি ধরা পড়েছে, সেটি সূর্যাস্তেরই সময় তোলা। আর সূর্য ডুবলেই বরফে ঢাকা হিমালয়ের বিভিন্ন পাহাড়ে তাদের অবাধ বিচরণ।

ছবি সংগৃহীত।

০৭ ২১

তুষার চিতাবাঘ অন্য যে কোনও চিতাবাঘের থেকে আলাদা। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও অন্য রকম। অন্য যে কোনও চিতাবাঘের তুলনায় তুষার চিতাবাঘ মাঝারি আকারের হয়। তাদের শরীরের কাঠামো ১.৮ থেকে ২.৩ মিটারের মধ্যে হয়।

ছবি সংগৃহীত।

০৮ ২১

তুষার চিতাবাঘের গায়ে হলদে রং থাকে ঠিকই। তবে সেই সঙ্গে থাকে কালচে ছোপ, ধোঁয়াটে রঙের আস্তরণও থাকে। তাদের চোখের রং ফ্যাকাশে ধূসর থেকে সবুজ রঙের হয়। যা দেখলে যে কারও শরীরে ঠান্ডার চোরাস্রোত বয়ে যাবে।

ছবি সংগৃহীত।

০৯ ২১

প্রতিটি তুষার চিতাবাঘের আলাদা একটা প্যাটার্ন রয়েছে, যা আঙুলের ছাপের মতো অনন্য। তাদের লেজ লম্বায় ১ মিটার হয়। পুরুষ তুষার চিতাবাঘের ওজন হয় ৪৫-৫৫ কেজি। স্ত্রী তুষার চিতাবাঘের ওজন হয় ৩৫-৪০ কেজি।

ছবি সংগৃহীত।

১০ ২১

বাঘের যেমন গর্জন শোনা যায়, তুষার চিতাবাঘের কিন্তু কোনও তর্জন-গর্জন নেই। বরফে মোড়া পাহাড়ে নিজেদের এতটাই অদৃশ্য করে রাখে যে, ওদের উপস্থিতি টের পাওয়াই মুশকিল। তবে ওরা গোঁ গোঁ শব্দ করতে পারে।

ছবি সংগৃহীত।

১১ ২১

প্রজননের সময় ছাড়া তুষার চিতাবাঘরা কখনই এক সঙ্গে ঘোরাফেরা করে না। বরং অধিকাংশ সময় একলা বিচরণ করে তারা। জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝ বরাবর পর্যন্ত প্রজননের সময়।

ছবি সংগৃহীত।

১২ ২১

হিমালয়ের পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা তুষার চিতাবাঘের। এতটাই উঁচু জায়গায় তারা থাকে যে, তাদের নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ৪০০ মিটার উঁচুতে তাদের দেখতে পাওয়া যায়।

ছবি সংগৃহীত।

১৩ ২১

বরফের চাদরে ঢাকা হিমালয়ে উঁচু পাহাড়ি এলাকায় তাপমাত্রা একেবারেই কম। তুষারাবৃত পাহাড়ে প্রবল ঠান্ডার মধ্যেও কী ভাবে বেঁচেবর্তে রয়েছে তুষার চিতাবাঘ, এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে যেহেতু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাই তাদের নিয়ে গবেষণা চালানোও দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছবি সংগৃহীত।

১৪ ২১

অনেকের মতে, প্রবল ঠান্ডা সওয়ার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা রয়েছে তুষার চিতাবাঘের। তাদের লেজ অনেকটাই লম্বা হয়। শুধু তাই নয়, তার গায়ে পুরু লোম থাকে। ঠান্ডার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে ওই লেজ দিয়ে শরীরকে জড়িয়ে নেয় তারা।

ছবি সংগৃহীত।

১৫ ২১

এ ছাড়াও তাদের পেটের কাছে পুরু লোম রয়েছে। যা ১২ সেমি ঘন। বরফের মধ্যে হাঁটার সময় ওই লোম তাদের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচায়। সাধারণ বাঘের তুলনায় ওদের নাসিকা গহ্বর অনেকটাই বড় হয়। ঠান্ডা মোকাবিলায় এরও ভূমিকা রয়েছে। হিমশীতল বাতাস ফুসফুসে আঘাত করার আগেই গরম করতে সাহায্য করে তাদের ওই নাসিকা গহ্বর।

ছবি সংগৃহীত।

১৬ ২১

তুষার চিতাবাঘের খাদ্যাভ্যাসও চমকপ্রদ। সাধারণত তারা নীল ভেড়া এবং বন্য ছাগল শিকার করে। তবে জানলে অবাক হবেন যে, তারা গাছপালাও খেয়ে ফেলে অনায়াসে। অর্থাৎ, নিরামিষাশীও বটে।

ছবি সংগৃহীত।

১৭ ২১

হিমালয়ের সবচেয়ে বড় শিকারি বলা হয়ে থাকে তুষার চিতাবাঘদের। তাদের অস্তিত্ব থাকা সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের লক্ষ্মণ। কিন্তু বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে। যার অন্যতম বড় কারণ হল জলবায়ুর পরিবর্তন। আর একটি কারণ হল পশু শিকার। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২২০ থেকে ৪৫০টি তুষার চিতাবাঘকে মারা হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত।

১৮ ২১

তুষার চিতাবাঘের চামড়া দিয়ে ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও চর্মসংরক্ষণবিদ্যায় কাজে লাগে। তাদের মাথার খুলি এবং দাঁত তাবিজ এবং মূল্যবান গয়নায় ব্যবহার করা হয়।

ছবি সংগৃহীত।

১৯ ২১

১২টি দেশে রয়েছে তুষার চিতাবাঘ। ভারত, চিন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, ভুটান, আফগানিস্তান, নেপাল, খিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানেও রয়েছে ‘পাহাড়ের ভূত’। যেহেতু তুষার চিতাবাঘের নাগাল পাওয়া যায় না, তাই ঠিক কত সংখ্যায় তারা রয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে কেউই জানাতে পারেনি। তবে মনে করা হয়, এই মুহূর্তে বিশ্বে মোট ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার তুষার চিতাবাঘ রয়েছে।

ছবি সংগৃহীত।

২০ ২১

চিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে তুষার চিতাবাঘ। সেখানে সংখ্যাটা ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার। এর পর যে দেশে সবচেয়ে বেশি তুষার চিতাবাঘ রয়েছে, তা হল মঙ্গোলিয়া। সেখানে রয়েছে প্রায় ১ হাজার তুষার চিতাবাঘ।

ছবি সংগৃহীত।

২১ ২১

ভারতের মধ্যে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং অরুণাচলপ্রদেশে তুষার চিতাবাঘের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদের আন্দাজ, এ দেশে ৪০০ থেকে ৭০০টি তুষার চিতাবাঘ রয়েছে। একটা বন্য তুষার চিতাবাঘ বাঁচতে পারে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত।

ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement