এ শহর বৃষ্টি দেখে না বছরের পর বছর। তবু এখানে সভ্যতা জেগে রয়েছে। স্পেনীয় শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতির ধারক-বাহক হয়ে রয়েছে শহরটি। এ শহর পেরুর রাজধানী। নাম লিমা।
লিমা দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম সেরা পর্যটনস্থল। শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ক্যাথলিক স্থাপত্য। বেশির ভাগই তৈরি ষোড়শ শতকে। তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত কিছু গির্জা। শহরের সেন্ট মার্কোস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যও দেখার মতো।
পৃথিবীতে যত শহর রয়েছে, তাদের তুলনায় বৃষ্টি প্রায় হয়ই না লিমায়। এখানে বছরে ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, যা না হওয়ার সমান। কোনও বছর তা-ও হয় না।
এত কম বৃষ্টি হয় বলে লিমাকে ‘নেই বৃষ্টি’র শহর বলা হয়। সারা বছর লিমাবাসী আকাশে মেঘ দেখতে পান না।
এই শহরে ঝড়, বজ্রপাত হয় না। তুষারপাতও হয় না। তা বলে লিমায় কিন্তু খুব গরম পড়ে না। সারা বছর গড় তাপমাত্রা থাকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। সব থেকে বেশি গরম পড়ে ফেব্রুয়ারিতে। তখন দিনের তাপমাত্রা থাকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। সব থেকে বেশি ঠান্ডা থাকে অগস্টে। তখন ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে তাপমাত্রা থাকে।
সারা বছর শহরে বৃষ্টি হয় না বলে রাস্তার ধারে নর্দমা বা বৃষ্টির জল যাওয়ার নালা নেই।
ঝড়বৃষ্টির ভয় নেই বলে বহু বাড়ি কার্ডবোর্ডের তৈরি। কিছু বাড়ির আবার ছাদই নেই।
লিমার বাসিন্দারা সে কারণে ছাতা বা বর্ষাতি কেনেন না। এখানে ওই ব্যবসা একেবারেই চলে না। বলা হয়, হঠাৎ যদি লিমায় ভারী বৃষ্টি হয়, বাসিন্দারা চমকে যাবেন।
দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লিমা। এখানে বাস করেন ৮০ লক্ষ মানুষ। অনাবৃষ্টির এই শহরে কী ভাবে বাস করেন এত মানুষ? জল কোথা থেকে পান?
শহরে জলের উৎস রিমাক নদী। হিমবাহ গলে একাধিক জলাশয়ও তৈরি হয়েছে এই এলাকায়। সেগুলিই লিমাবাসীর জলের উৎস।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে লিমা শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকার দু’টি সুড়ঙ্গ খনন করিয়েছিল। মান্তারো থেকে মার্ক আর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল সুড়ঙ্গ দু’টি। তার মাধ্যমেই আসত জল।
কথিত, ১৫৩৫ সালে পত্তন হয় এই শহরের। ফ্রান্সিসকো পিজ়ারো তৈরি করিয়েছিলেন শহরটি। এই পিজ়ারোই ইনকা সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়েছিলেন। তবে বলা হয়, তারও শতাধিক বছর আগে নাকি লিমায় সভ্যতার পত্তন হয়েছিল।
কিন্তু কেন বৃষ্টি হয় না লিমায়? এই শহরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমান্তরাল ভাবে বাতাস বয়ে চলে। এর ফলে জলীয় বাষ্প তৈরি হতে পারে না।
লিমা সংলগ্ন সমুদ্রের জল তীব্র ঠান্ডা। তার সংস্পর্শে এসে বায়ুর নীচের স্তর ঠান্ডা এবং ভারী হয়ে যায়। এর ফলে তাপমাত্রায় একটা সুস্থিতি আসে। সেই ঠান্ডা বায়ু আর উপরে উঠে গিয়ে ঘনীভূত হতে পারে না। ফলে মেঘ তৈরি হয় না। শুধু মাঝেমধ্যে কুয়াশা তৈরি হয়। ছবি: সংগৃহীত।